এমপিওভুক্তির জন্য এমইএস কলেজের কারসাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি না মেনে সাতজন খণ্ডকালীন শিক্ষককে পূর্ণকালীন দেখিয়ে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) আবেদন করেছে চট্টগ্রামের ওমর গনি এমইএস কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের সুপারিশে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউল করিম সিদ্দিকী এই আবেদন পাঠিয়েছেন।

যথাযথ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই শুধু পরিচালনা কমিটির সভার কার্যবিবরণীতে এই শিক্ষকদের খণ্ডকালীন থেকে পূর্ণকালীন দেখানো হয়, যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধির পরিপন্থী। শুধু তা-ই নয়, আবেদন করা সাতজনের মধ্যে দুজনের শিক্ষক নিবন্ধন সনদও নেই, যা এখন নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির জন্য বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও তিনজন খণ্ডকালীন শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ, যা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমপিওভুক্ত হলে একজন শিক্ষক সরকার থেকে মাসিক মূল বেতনসহ কিছু ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পান।

জানা গেছে, ডিগ্রি স্তর থাকা এমপিওভুক্ত কলেজে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারির আগে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন চায় মাউশি। খণ্ডকালীন শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আবেদনের সুযোগ নেই। এ জন্য এমইএস কলেজ কর্তৃপক্ষ কারসাজি করে সাতজন খণ্ডকালীন শিক্ষককে পূর্ণকালীন দেখিয়ে আবেদন পাঠায়।

এই সাতজন শিক্ষক হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মো. নবী হোসেন, ইংরেজির সুমন কান্তি দাশ, বাংলার নাজমা আকতার, পদার্থবিজ্ঞানের আমেনা আক্তার, অর্থনীতির ববি বড়ুয়া, ব্যবস্থাপনার শাহানা ইয়াসমিন ও ইসলামের ইতিহাসের ফাতেমা লুৎফুন্নেছা। শেষের দুজনের শিক্ষক নিবন্ধন সনদও নেই। এর মধ্যে ববি বড়ুয়া নিয়োগ পান ২০১২ খ্রিস্টাব্দে। বাকিরা খণ্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ পান ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে।

মাউশিতে পাঠানো আবেদনে পরিচালনা কমিটি ওই শিক্ষকদের ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তাঁদের পূর্ণকালীন স্বীকৃতি দেয় বলে উল্লেখ করে। প্রকৃতপক্ষে পরিচালনা কমিটি ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ সেপ্টেম্বর এক সভায় তাঁদের পূর্ণকালীন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ওই সময় অবশ্য মো. আবদুল মান্নান বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যাননি। 

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষও স্বীকার করলেন, ওই শিক্ষকেরা মূলত খণ্ডকালীন।

এর আগে পরিচালনা কমিটি খণ্ডকালীন শিক্ষককে পূর্ণকালীন এবং বিভাগীয় প্রধান করতে পারে কি না, তার বৈধতা যাচাইয়ের জন্য ফেব্রুয়ারিতে একটি উপকমিটি করে দেন বিভাগীয় কমিশনার। কিন্তু ওই কমিটি প্রতিবেদন দেওয়ার আগেই ১০ অক্টোবর কলেজ পরিচালনা কমিটির এক বৈঠকে ওই সাত শিক্ষকের এমপিওভুক্তির আবেদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে কমিটির এক সদস্য আপত্তিও দেন।

বিধি অনুযায়ী, পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগে জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞাপন দিতে হয়। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাউশি এবং পরিচালনা কমিটির সভাপতির প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি করতে হয়। কিন্তু এই সাতজনের বেলায় এসব কিছুই মানা হয়নি।

এমপিওভুক্তির আবেদন বিধিসম্মত কি না, জানতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিদিন সাত-আটজন শিক্ষক এসে বসে থাকেন। মানবিক দিক বিবেচনায় অগ্রায়নপত্র (ফরোয়ার্ডিং) দেওয়া হয়েছে। যদি সরকারের বিশেষ কোনো ছাড়ের ব্যবস্থা থাকে এবং তাঁরা যদি করিয়ে আনতে পারেন, তাহলে অসুবিধা নেই। 
এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, যদি বিধি মোতাবেক পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ না হয়, সে ক্ষেত্রে এমপিওভুক্তি হবে না।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজের পদার্থবিজ্ঞান, বাংলা এবং গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান করা হয়েছে খণ্ডকালীন শিক্ষককে। অথচ বিভাগগুলোতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেছেন, এটি তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার আগে হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত কোনো কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষককে পূর্ণকালীন করা হয় না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026648044586182