এমপিওভুক্তির তালিকায় উত্তরবঙ্গের আধিক্য

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রায় সাড়ে নয় বছর পর ২,৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছে সরকার। এরমধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) ৪৩৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) ১০৮টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণি স্তরের প্রতিষ্ঠান ৮৮৭টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৮টি, কলেজ (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) ৯৩টি এবং ডিগ্রি কলেজ ৫৬টি। এ ছাড়া দাখিল স্তরের মাদরাসা ৩৫৮টি, আলিম স্তরের ১২৮টি, ফাজিল স্তরের ৪২টি ও কামিল স্তরের ২৯টি মাদরাসা রয়েছে। কৃষিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ৬২টি, স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান ১৭৫টি, বিএম স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান ১৭৫টি এবং বিএম সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান ১০৮টি নতুন এমপিওভুক্ত হয়েছে। এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন। তবে যোগ্য প্রতিষ্ঠান না থাকায় ২৩টি উপজেলায় কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বুধবার (২৩ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এক অনুষ্ঠানে নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা প্রকাশ করেন। গত ১ জুলাই (চলতি অর্থবছর) থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নীতিমালা অনুযায়ী যাচাইবাছাই করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ২,৭৩০টি প্রতিষ্ঠানকে আমরা এমপিভুক্ত করেছি। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত তালিকা ঘেটে দেখা গেছে, এমপিওভুক্তির তালিকায় আধিক্য পেয়েছে উত্তরবঙ্গের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ ও বগুড়া জেলা। এ ছাড়া, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সংশ্লিষ্ট থাকা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার আলহাজ মিজানুর রহমান চৌধুরী কৃষি কলেজ এমপিওভুক্ত হয়েছে, যার প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান জামায়াতের এমপি ছিলেন। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লতিফা চৌধুরী মহিলা কলেজ। লতিফা চৌধুরীর স্বামী বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। সিলেটের বালাগঞ্জে কালিগঞ্জ এম ইলিয়াছ আলি হাইস্কুল এমপিওভুক্ত হয়েছে। এটি বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াছ আলির নামে প্রতিষ্ঠিত।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরির সময় কোনো প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক পরিচয় দেখা হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য প্রতিষ্ঠানই এমপিওর জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ১,৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিল সরকার। এরপর দীর্ঘদিন এমপিওভুক্তি বন্ধ থাকায় আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমপিওর তালিকাভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের বেতনের একটি অংশ সরকার থেকে পান। এজন্য প্রথমে যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করা হয় এবং শর্তপূরণের ভিত্তিতে সেই প্রতিষ্ঠানের যোগ্য শিক্ষকরা এমপিও তালিকায় আসেন।

নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা এমপিওভুক্তি চান, তাদের সে নির্দেশনাগুলো মানতে হবে। যাদের এমপিওভুক্ত করলাম, তাদের কাছেও আহ্বান থাকবে- নীতিমালা অনুযায়ী সব নির্দেশনা পূরণ করতে পেরেছেন বলেই এমপিওভুক্ত হয়েছেন। এটা ধরে রাখতে হবে। কেউ তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে এমপিও বাতিল হবে। এমপিওভুক্ত হয়ে গেছে, বেতন তো পাবই, তাহলে আর ক্লাস নেয়ার দরকার কী, পড়ানোর দরকার কী- এ চিন্তা করলে চলবে না।

কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন তাদেরও প্রয়োজন ছিল, তাদের অবহেলা করে কেবল দোষ দিলে চলবে না। শিক্ষাজীবন শেষে তারা কোথায় যাবে, কী কাজ করবে, কীভাবে চলবে? তারা তো এ দেশেরই সন্তান। প্রধানমন্ত্রী হাওর-বাঁওড়, পাহাড় ও দুর্গম এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য আবাসিক স্কুল করে দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান। তিনি কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, স্কুল পর্যায় থেকেই শিশুরা যেন কারিগরি শিক্ষা নিতে পারে। আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের ভেতর অনেক মেধা লুকিয়ে থাকে, তারা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে সেটা বিকাশের জন্য একটা সুযোগ আমাদের করে দেয়া দরকার।

এদিকে, নতুন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী জাতীয় পর্যায়ের ১০টি শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ মোর্চা ‘বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশন’-এর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়।

গতকাল এক বিবৃতিতে ফেডারেশনের নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করায় আমাদের দাবি পূরণ করেছেন। তারা বেসরকারি কলেজের অনার্স পাঠদানকারী নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবিলম্বে এমপিওভুক্ত করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। নেতারা আশা করেন, নতুন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিভুক্ত করায় শিক্ষার মান বাড়বে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

বিবৃতি দেয়া শিক্ষক নেতারা হলেন অধ্যক্ষ আসাদুল হক, ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, অধ্যক্ষ এম এ আউয়াল সিদ্দিকী, অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার, অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম, সৈয়দ জুলফিকার আলম চৌধুরী, অধ্যক্ষ ফয়েজ হোসেন, বিলকিস জামান প্রমুখ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052359104156494