এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি সেকায়েপ শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এমপিওভুক্তির দাবিতে একযোগে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাক্সেস এনহ্যান্সমেন্ট (সেকায়েপ) প্রকল্পের শিক্ষকরা। রোববার (২২ জুলাই)  দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকদের হাতে তুলে দেন বিভিন্ন জেলার অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক (এসিটি) অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

বাংলাদেশ এসিটি অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির কৌশিক চন্দ্র বর্মণের নেতৃত্বে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয় ।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কাছে সেকায়েপ শিক্ষকদের স্মারকলিপি 

বাংলাদেশ এসিটি অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক ও ঝালকাঠি জেলার সভাপতি মোঃ মামুন হোসেনের নেতৃত্বে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয় ।এ সময় উপস্থিত সংগঠনের ঝালকাঠি জেলা সাধারণ সম্পাদক মোসতাক আহমেদ শামীম, আলী হায়দার রনি ও নাসির উদ্দিন জুম্মান উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ এসিটি অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় নেতা শহিদুল ইসলাম এবং ওসমান গনির নেতৃত্বে  ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়।

বাংলাদেশ এসিটি অ্যাসোসিয়েশনের মুজিবুর রহমান ও রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়।

এর আগে গত ১৪ জুলাই এমপিওভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাক্সেস এনহ্যান্সমেন্ট (সেকায়েপ) প্রকল্পের শিক্ষকরা। মানবন্ধন থেকে শিক্ষক নেতারা এক সপ্তাহের মধ্যে এসিটিদের পরবর্তী প্রকল্পে স্থানান্তর অথবা এমপিওভুক্তির মাধ্যমে স্থায়ীকরণের সরকারি আদেশ (জিও) জারি না কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিলেন।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে সেকায়েপ শিক্ষকদের স্মারকলিপি 

মানববন্ধনে বাংলাদেশ অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৌশিক চন্দ্র বর্মণ বলেন, দীর্ঘ ৭ মাস অতিবাহিত হলেও অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষকদের ব্যাপারে চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়নি। অথচ আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১০ লাখ শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করা বিনা বেতনে নিজ খরচে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি।  আমরা আশা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বয়স ও অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে দ্রুততম সময়ে আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন বলেন, শিক্ষকরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১০ লাখ শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে গত ৭ মাস বিনা বেতনে নিজ খরচে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা এসব শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া রোধ করতে এসে এক ঝাঁক তরুণ মেধাবীর ঝরে যাওয়ার আশঙ্কায় আছি। প্রকল্প প্রধান ও মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ক্লাস চালিয়ে যান, ভালো খবর আসবে। কিন্তু বিগত ৭ মাসেও ভাল খবর আসেনি। অনেক শিক্ষকের পরিবারের সদস্য অসুস্থ। টাকার অভাবে তাদের সামান্যতম চিকিৎসা দিতে পারছে না।

মামুন হোসেন বলেন, ম্যানুয়াল বইয়ে উল্লেখ আছে সকল এসিটিদের প্রকল্প শেষে পরবর্তী প্রকল্পে অথবা এমপিওভুক্তির মাধ্যমে স্থায়ীকরণ করা হবে। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও এ কথা উল্লেখ ছিল। যার প্রতিফলন সেকায়েপ এসিটিদের ক্ষেত্রে এখনো ঘটেনি। 

গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে সেকায়েপ শিক্ষকদের স্মারকলিপি 

প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়,বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘সেকায়েপ’ প্রকল্পে এসিটি কম্পোনেন্টটি যুক্ত হয়। যা শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়ন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ফিরিয়ে আনা, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে নেওয়া লক্ষ্যে অভিভাবকদের সমন্বয় সভা,অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য,বাল্য বিবাহ ও শিশু নির্যাতন বন্ধসহ নানা ধরণের ইতিবাচক কার্যক্রম সফলতার সাথে সম্পন্ন করতে এসিটিদের  প্রচেষ্টা যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। এই কম্পোনেন্টে প্রায় ৫২০০ এসিটি শিক্ষক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুই হাজার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।

 ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে সেকায়েপ শিক্ষকদের স্মারকলিপি 

সেকায়েপ প্রকল্পটির মেয়াদ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ শেষ হয়েছে।এসিটি অপারেশন ম্যানুয়াল-২০১৪ এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরি স্থায়ীকরণের  আশ্বাসের ব্যাপারে এখনও কোনে  নির্দেশনা পাননি অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকরা। তাদের সেকায়েপ প্রকল্পের পরিচালক ও কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে এসিটি কম্পোনেন্টটি শতভাগ সফল এবং ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হতে যাওয়া ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিইপি) এসিটি কম্পোনেন্ট নেয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু বর্তমান কর্মরত এসিটিদের এসইডিইপি প্রকল্পে রাখা হবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। যদিও সেকায়েপ প্রকল্পের শিক্ষকরা কর্মকর্তাদের মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতে বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু দাপ্তরিক কোনো নির্দেশনা পাননি পরবর্তী প্রোগ্রামে অর্ন্তভূক্ত,স্থায়ীকরণ বা এমপিওভুক্তির বিষয়ে। এ অবস্থায় প্রায় ৫২০০ এসিটি পরিবার- পরিজন নিয়ে অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করতে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে সেকায়েপ প্রকল্পটি চালু করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার চারশ ৮০ কোটি টাকা। দুর্গম ৬৪টি উপজেলার দুই হাজার ১১টি স্কুলে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ছয় হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066490173339844