এমবিবিএস ভর্তিতে ট্রাইবাল কোটায় অনিয়মের অভিযোগ

নিখিল মানখিন |

এমবিবিএস কোর্সের মেডিক্যাল ভর্তি কার্যক্রমে ট্রাইবাল কোটায় (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত) আসন বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবছর এমবিবিএস মেডিক্যাল ভর্তি কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে প্রকৃত ট্রাইবাল শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই কোটার কোড নম্বর ‘৭৭’ স্বাধীনভাবে সকলের ব্যবহার করার সুযোগ থাকায় ‘নন ট্রাইবাল’ শিক্ষার্থীরা ট্রাইবালদের আসন দখল করে নিচ্ছে। ন্যূনতম পাস নম্বর পেয়েও ট্রাইবাল শিক্ষার্থীরা আসন বরাদ্দ পাচ্ছে না। অথচ কোন শিক্ষাবর্ষেই ট্রাইবাল কোটায় (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত) ভর্তি হওয়ার জন্য ন্যূনতম পাস নম্বর প্রাপ্য ৮ ট্রাইবাল শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন আদিবাসী নেতৃবৃন্দ। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গত বছরও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একই সমস্যা নিয়ে তদন্ত হয়, যার প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ন্যূনতম পাস নম্বর প্রাপ্য ট্রাইবাল শিক্ষার্থী থাকার পরও গত বছর ট্রাইবাল কোটার দুটি আসন খালি রয়ে যায়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগপত্রে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে মোট ৪৫টি জাতিসত্তার প্রায় ৩০ লাখ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। সরকারীভাবে যারা ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ হিসেবে পরিচিত। তিন পার্বত্য জেলায় ১৩ ভাষাভাষীর ১২ জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। বাকি ৩২ জাতিগোষ্ঠী দেশের শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, গাজীপুরসহ রাজশাহী বিভাগের কিছুসংখ্যক জেলায় বাস করে, যারা সমতলের আদিবাসী বলে পরিচিত। এমবিবিএস মেডিক্যাল ভর্তি কার্যক্রমে কোটার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার জন্য সমতলের আদিবাসীদের জন্য মোট ৮ আসন রয়েছে, যা সরকারীভাবে ‘ট্রাইবাল কোটা (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত)’ বলে উল্লেখ রয়েছে। এই কোটা সুবিধা নিতে হলে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সময় কোড নম্বর ‘ ৭৭’ টিক চিহ্ন দিতে হয়। যারা এই কোড নম্বরে টিক চিহ্ন দেবেন, তারাই ট্রাইবাল শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন।

কিন্তু অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে অনেক ‘ নন-ট্রাইবাল’ শিক্ষার্থী ট্রাইবাল (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত) শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ‘৭৭’ কোড নম্বরে টিক চিহ্ন ব্যবহার করে। মেধাস্কোর ও মেধাস্থানের বিবেচনায় তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকার সুযোগে অনেক ‘নন-ট্রাইবাল ’পরীক্ষার্থী ট্রাইবাল কোটার আসন দখল করে নেয়। কারণ বরাদ্দকৃত মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যতীত ‘৭৭’ কোড নম্বর ব্যবহারকারীর ‘ট্রাইবাল সার্টিফিকেট’ যাচাই বাছাই করার মাঝপথে আর কোন কর্তৃপক্ষ নেই। ‘৭৭’ কোড নম্বর ব্যবহার করে ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও ‘নন-ট্রাইবাল’ পরীক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে ট্রাইবাল সার্টিফিকেট দেখাতে না পেরে কলেজে ভর্তি হতে পারেন না। ভর্তি পরীক্ষার মূল ফল থেকে তৃতীয় মাইগ্রেশন পর্যন্ত চলে ‘নন-ট্রাইবাল’ শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ প্রদান এবং ট্রাইবাল সার্টিফিকেট না থাকায় তাদের ভর্তি হতে না পারার খেলা। ততক্ষণে ভর্তি হওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়। আর প্রকৃত ট্রাইবাল শিক্ষার্থীরা পড়ে থাকে আলোচনার বাইরে। শূন্য রয়ে যায় ট্রাইবাল কোটার আসন। অথচ কোন শিক্ষাবর্ষেই ন্যূনতম পাস নম্বর প্রাপ্য ৮ ট্রাইবাল শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না।

গত দুই বছর ধরে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভুলের মাশুল দিয়ে চলেছে মেধাবী শিক্ষার্থী রিম্মিত আমুয়া চিরান। তার পিতা বচন নকরেক ও মাতা ঝর্ণা চিরান। ময়মনসিংহ সদর ভাটিকাশন এলাকার ১৯নং ওয়ার্ড, ৯নং পাদ্রি মিশন রোডে তাদের বাসা। তারা গারো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে রিম্মিত চিরান ন্যূনতম পাস নম্বরের বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার ভর্তি পরীক্ষার রোল নং- ১৪৩৪২৯, টেস্ট স্কোর-৫৬.৭৫, মেধাস্কোর-২৪৭.৫ ও মেরিট পজিশন-১১৩৭০। কিন্তু ট্রাইবাল শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৮ আসনে তার নাম নেই। অথচ কোন শিক্ষাবর্ষেই ন্যূনতম পাস নম্বর প্রাপ্য ৮ ট্রাইবাল শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না।

রিম্মিত চিরানের পিতা বচন নকরেক জানান, তার মেয়ে রিম্মিত চিরানকে গত দুই বছর ধরে ট্রাইবাল কোটার প্রাপ্য আসন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। গত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাতেও রিম্মিত আমুয়া চিরান ন্যূনতম পাস নম্বরের চেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ওই বছর তার ভর্তি পরীক্ষার রোল নং-১৪৫৫৬৭, টেস্ট স্কোর-৬৬, মেধাস্কোর-২৬১.৭৫ ও মেরিট পজিশন-৮১২৮। ভর্তি পরীক্ষার মূল ফলাফল থেকে তৃতীয় মাইগ্রেশন পর্যন্ত ট্রাইবাল কোড নম্বর ব্যবহার করে সুযোগপ্রাপ্ত মোট ১১ জন ‘নন-ট্রাইবাল’ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কলেজে ভর্তির অনুমতি দেয়া হয়। রহস্যজনক কারণে (ট্রাইবাল সার্টিফিকেট না থাকায়) তাদের কেউ ভর্তি হননি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এর আন্তরিক হস্তক্ষেপে রিম্মিত আমুয়া চিরানের আসনটি উদ্ধার হয়। কিন্তু ভর্তি হওয়ার নির্ধারিত তারিখ শেষ হয়ে যাওয়ায় সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অথচ যোগ্য হওয়ার পরও নির্ধারিত সময়ে তাকে ভর্তি হওয়ার আহ্বানই করা হয়নি। অবৈধভাবে সুযোগপ্রাপ্য মোট ১১ ‘নন ট্রাইবাল’ শিক্ষার্থী তার ভর্তি হওয়ার নির্ধারিত সময়টুকু নষ্ট করেছে। সুযোগ পেয়েও ভর্তি না হওয়া ওই ১১ শিক্ষার্থীর ট্রাইবাল সার্টিফিকেট চেয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু গত এক বছরেও কোন সার্টিফিকেট দেখাতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিষয়টি এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

 

সৌজন্যে: জনকণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062401294708252