এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্যদের করণীয়

খালিদ ফেরদৌস |

সংবাদের শিরোনাম ‘পায়ে লিখে জিপিএ-৫ পেল আজিজুল’। এবারের এসএসসি পরীক্ষার সেরা বিজ্ঞাপন এটা। যা হোক, এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা ২০১৮-এর ফলাফল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী অর্থাত্ গত ৬ মে ২০১৮ তারিখে একযোগে সারাদেশে প্রকাশিত হয়েছে। এসএসসিতে পাসের হার ৭৭.৭৭%, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ৭০.৮৯%, কারিগরি শিক্ষাবোর্ড ৭১.৯৬%। দশটি বোর্ড মিলিয়ে মোট এ প্লাসের সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজার ৬২৯। কৃতকার্য সকলকে অভিনন্দন। অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের আগামীবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালোভাবে পাস করার আগাম প্রত্যাশা। এবার সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান  পরীক্ষায় জাতীয় পাসের হার একটু কম। যা এসএসসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে গত ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এবং দাখিলের ক্ষেত্রে গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পাসের হার। অবশ্য জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।

সরকার এবারের এসএসসি পরীক্ষার ভুল-ত্রুটিসহ নানা পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। যার প্রমাণ আমরা  পেয়েছি সরকার এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-২০১৮ প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করে নকলমুক্ত, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করে সচেতন মহল।

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার ধরন ও চাকরি প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা একজন ছাত্রের জীবনে তাত্পর্যবহ। এই পরীক্ষার উপর খানিকটা নির্ভর করে সে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ ভবিষ্যতে পেশাগত জীবনে কতটা সফল বা ব্যর্থ হবে। তাই এই পরীক্ষায় যার যে রেজাল্ট হয়েছে তার উপর ভরসা রেখে শিক্ষার্থীদের এক মিনিট সময় নষ্ট করার ফুরসত নেই। ভালো কলেজে ভর্তি  প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিভাগভিত্তিক বই ক্রয় করে বিষয়ভিত্তিক  পড়তে এগিয়ে নিতে হবে। যে বিষয়টি নিজের কাছে জটিল বা কঠিন মনে হবে সে বিষয়টিতে শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে বারবার পড়ার চেষ্টা করে আত্মস্থ করতে হবে। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যে, প্রচুর খেটে-খুটে পরীক্ষা দেবার পরও অনেক ছাত্র-ছাত্রীর প্রতীক্ষিত ফলাফল হয়নি। পত্র-পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে, রেজাল্ট খারাপ হবার কারণে বেশকিছু এসএসসি পরীক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। একজনের মারা যাবার খবরও পাওয়া গেছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। একটা বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে, এসএসসি পরীক্ষা জীবনের শেষ কথা নয়।

পরীক্ষার ফলাফল ভালো হলে যেমন আনন্দে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়া যাবে না তেমনি রেজাল্ট খারাপ হলে হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে সঠিক জীবন পরিকল্পনা করে এগিয়ে যেতে হবে। সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় স্মরণীয় সফলতা অর্জন করে এসএসসি পরীক্ষার ঘাটতি পূরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে পরিমিতি অধ্যয়ন,সময়ের সদ্ব্যবহার ও জীবনমুখী বিষয়ে জ্ঞানার্জনের উপর শিক্ষার্থীদের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনেকাংশে নির্ভর করে। দেখা গেছে তুলনামূলক কম সিজিপিএ পেয়েও অনেক ছাত্র-ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিক্যালসহ বিভিন্ন ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও চাকরি করার সুযোগ পেয়েছে। যদি প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও আশানুরূপ রেজাল্ট বা সফলতা না আসে তবে ভেঙে পড়া যাবে না। বিল গেইটস, স্টিভ জবস, মার্ক জাকারবার্গ, টমাস আলভা এডিসন, আর্লবার্ট আইনস্টাইন কেউই ভালো ছাত্র ছিল না। বাংলাদেশের হালের জনপ্রিয় ক্রিকেটার সাকিব-মাশরাফি কেউ ভালো ছাত্র ছিল না। কিন্তু তারা আজ কঠোর অনুশীলন, অধ্যবসায়, নিজ উদ্যোগ ও উদ্ভাবনী গুণাবলির মাধ্যমে ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে রোল মডেল। ভালো রেজাল্ট না হলে, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে হয়তো পেশাগত জীবনে ভালো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ভালো সচিব-আমলা হওয়া যায় না কিন্তু নিজের উদ্যোগ ও কর্মযোগ্যতায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে যোগ্য ও দক্ষ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সচিব-আমলাদের চাকরি দেয়া যায়। যার প্রমাণ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ভুরি ভুরি আছে। অভিজ্ঞতা বলে, পরীক্ষা আরম্ভ হওয়া থেকে শুরু করে কলেজে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত সময়টুকুতে টিভি বিজ্ঞাপনও ভালো লাগে। আড্ডা বা বন্ধুদের সাথে ঘুরে  বেড়ানোর ব্যাপারটা অমৃত লাগে। কিন্তু পরীক্ষা যদি খারাপ হয় বা রেজাল্ট খারাপ আসে তবে এই আকাঙ্ক্ষাগুলো মরে যায়। জীবনের রঙ হারিয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়। তাই বলি- সেই বেশি বুদ্ধিমান ও সুবিবেচক যে কাজ ফেলে না রেখে সময়ের কাজ যথাসময়ে করে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীদের এখন ধ্যান-জ্ঞান হওয়া উচিত আগামী এইচএসসি পরীক্ষা সফল ও সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য পড়ায় মনোনিবেশ করা। পাশাপাশি সবার উচিত নিজেকে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে দেশ ও মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ কবার দীপ্ত শপথ গ্রহণ করা।

লেখক:এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00343918800354