এসপির কবজায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজশাহী নগরীতে মমতা নার্সিং ইনস্টিটিউট নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাদেরই একজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীরা পুলিশের মহাপরিদর্শক ও রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ সদর দপ্তর। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষও অভিযোগ তদন্ত করবে বলে জানা গেছে। রোববার (১৭ মার্চ) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

যে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়েছে তাঁর নাম আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী। তিনি ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার পদে কর্মরত। তিনি মমতা নার্সিং ইনস্টিটিউটের সম্মানিক চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। তাঁর বাড়ি নওগাঁর পোরশা এলাকায়।

অভিযোগের ব্যাপারে এসপি রহিম শাহ দাবি করেছেন, নার্সিং কাউন্সিলের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা মনিরুজ্জামান উদ্যোক্তা পরিচালক, শবনম মোস্তারি মমি কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মমতা নার্সিং ইনস্টিটিউট নামের প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহীতে চালু করেন। বিনিয়োগের পুরোটাই তাঁদের। ওই সময় পরিচয় সূত্রে এসপি আব্দুর রহিম শাহকে অবৈতনিক ও সম্মানিক চেয়ারম্যান

হিসেবে প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ওই বছরের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের একাডেমিক অনুমোদন লাভ করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে তিন ব্যাচে মোট ১৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, স্থান সংকুলান না হওয়ায় গত বছর মার্চ মাসে মমতা নার্সিং ইনস্টিটিউট নগরীর বহরমপুর বাইপাস থেকে সরিয়ে বালিয়াপুকুরে এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর মালিকানাধীন জার্মিনেট প্লাজায় ভাড়ার চুক্তিতে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকেই এসপি রহিম শাহ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অর্ধেক শেয়ার চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর করার জন্য ক্রমাগতভাবে চাপ দিতে থাকেন। তবে দুই উদ্যোক্তা তাঁকে দাবি করা শেয়ারের আনুপাতিক হারে বিনিয়োগ করার জন্য বলেন। কিন্তু তাতে তিনি রাজি হননি। বরং ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই বছরে আয়ের সমান ভাগ দাবি করেন তিনি। এই নিয়ে দুই উদ্যোক্তার সঙ্গে এসপির মতবিরোধ তৈরি হয়। এর পর থেকে উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান ছাড়ার জন্য ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন তিনি। গত বছর নভেম্বরে এসপি তাঁর লোকজন দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে তালা মেরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ করে দেন। এরপর ডিসেম্বরে হিমালয় রায় নামের একজনকে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন তিনি।

পরে এসপি রহিম শাহ নিজের মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিলবোর্ড স্থাপন ও লিফলেট বিতরণ করেন। তখন থেকেই তিনি ইনস্টিটিউটে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খাত থেকে পাওয়া সব আয় একাই ভোগ করছেন। অন্যদিকে উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সেখানে ঢুকতে দিচ্ছেন না।

অভিযোগে মমি বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মনিরুজ্জামান ও তাঁকে সমঝোতার কথা বলে ইনস্টিটিউটে ডাকেন রহিম শাহ। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হলে এসপি তাঁকে অশালীন কথাবার্তা বলেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। স্থান ত্যাগ করার সময় এসপি রহিম তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করার হুমকি দেন।

মমি বলেন, এর মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের অভিযোগ শাখা থেকে তাঁদের দুজনকে ফোন করে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিয়েছে।

রাজশাহী পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, রহিম শাহ চৌধুরী পুলিশের পদে থেকে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন না। এর বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে রাজশাহীতে নিজ নামে ডেভেলপার কম্পানি পরিচালনাসহ বিভিন্ন ব্যাবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনারও অভিযোগ রয়েছে। এসব করতে গেলে তাঁকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে করতে হবে।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিয়ে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। কমিটি করে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী বলেন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি চলবে—এমন শর্তে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে সম্পূর্ণ অবৈতনিক চেয়ারম্যান হিসেবে যুক্ত হন এবং নিজের মালিকানাধীন একটি ভবন ভাড়া হিসেবে ব্যবহার করতে দেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মনিরুজ্জামান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শবনম মোস্তারি মমি টাকা আত্মসাৎ করেন এবং তাঁকে বাড়িভাড়ার টাকা না দিয়ে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে নার্সিং কাউন্সিলের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ থেকে মনিরুজ্জামান ও শবনম মোস্তারি মমিকে বাদ দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058178901672363