এসিআরের পরিবর্তে আসছে এপিআর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমলাদের কাজের সঠিক মূল্যায়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের একটি পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিশ্বের যেসব দেশের সিভিল সার্ভিস সবচেয়ে ভালো কাজ করছে, তাদের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে চলতি মাসেই কর্মশালা আয়োজন করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এরপর বাংলাদেশের মূল্যায়ন পদ্ধতির সঙ্গে অন্যান্য দেশের মূল্যায়ন পদ্ধতির তুলনা করা হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো দিকগুলো নিয়ে আমলাদের কর্মমূল্যায়ন করবে সরকার। এ লক্ষ্যে মান্ধাতা আমলের অ্যানুয়াল কনফিডেনশিয়াল রিপোর্টের (এসিআর) পরিবর্তে অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স রিপোর্ট (এপিআর) ফরমের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বুধবার (১০ জুলাই) দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন দেলওয়ার হোসেন।

জানা গেছে, চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সিঙ্গাপুর, নরওয়ে ও ভারতের সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে কর্মশালা করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ইউনিলিভার, স্কয়ারসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়েও পর্যালোচনা করা হবে। এরপর আমলাদের কর্মকৃতি (পারফরম্যান্স) সঠিকভাবে মূল্যায়নের জন্য এপিআর ফরম চূড়ান্ত করবে সরকার।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন  বলেন, বিদ্যমান বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে কর্মকর্তাদের কর্মকৃতি মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই। তাই বার্ষিক কর্মমূল্যায়ন পদ্ধতিকে আরও বস্তুনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে বিদ্যমান এসিআরের পরিবর্তে এপিআর চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে। চলতি মাসে কয়েকটি দেশের সিভিল সার্ভিসের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে কর্মশালা আয়োজন করা হবে। দেশের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মূল্যায়ন পদ্ধতিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এসিআরের পরিবর্তে এপিআর চালু হলে তা কর্মকর্তাদের দুর্নীতি রোধেও ভূমিকা রাখবে। কর্মক্ষেত্রে আসবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। বার্ষিক কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পদোন্নতি ও পদায়নও করা হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এসিআরের পরিবর্তে এপিআর চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন নতুন মন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটি ইতিবাচক। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে এটি আধুনিকায়ন করা হলে অবশ্যই ভালো হবে। তবে এই উদ্যোগ যেন দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, এখন সবকিছু অনলাইনেই পাওয়া যায়। তাই অন্যান্য দেশের মূল্যায়ন পদ্ধতি অল্প সময়ে সহজেই জানা সম্ভব এবং ইচ্ছা থাকলে এটি অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে।

জানা গেছে, বর্তমান পদ্ধতির মাধ্যমে একজন কর্মকর্তার শুধু ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যাবলি ও পেশাগত দক্ষতা সম্পর্কে জানা যায়। নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে একজন কর্মকর্তা সারাবছরে কী কাজ করেছেন, সেটা বোঝা যাবে এবং বছর শেষে তা পর্যালোচনা করা হবে। সারাবছরে তিনি কী কাজ করবেন, সে সম্পর্কে বছর শুরু হওয়ার আগেই সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।

কর্মকর্তাদের দক্ষতা অনুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠান কতটুকু সফলতা অর্জন করেছে, তাও মূল্যায়ন করা হবে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করলে জবাবদিহি করতে হবে। একজন কর্মকর্তা যে কাজে বেশি আগ্রহী, তাকে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। আগের বছরের চেয়ে পরের বছর যেন কাজের গতি আরও বৃদ্ধি পায়, সে জন্য মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পদোন্নতি ও পদায়ন করা হবে। এ ছাড়া বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) ও অর্থবছরের মতোই কর্মকর্তাদের কর্মমূল্যায়নও জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত গণনা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এপিআরের চূড়ান্ত খসড়া কয়েকটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে প্রত্যেক কর্মকর্তাকে তার সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বছর শুরুর আগের চুক্তির বিষয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার অধস্তন কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ করবেন। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এপিআর ফরম পূরণের মাধ্যমে জানাবেন তার অধস্তন কর্মকর্তাদের জন্য কী কী প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, তিনি কোন কাজে বেশি আগ্রহী।

এরপর ওই ফরম জনপ্রশাসনের প্রশিক্ষণ ও পদায়ন (সিপিটি ও এপিডি) অনুবিভাগে পাঠানো হবে। তারা পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী পদায়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। তৃতীয়ত, একজন কর্মকর্তা যোগ্যতা অনুযায়ী কী পরিমাণ কাজ করে প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জন করেছে এবং সে জন্য প্রতিষ্ঠানের সফলতা ও ব্যর্থতাও বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের মূল্যায়নের জন্য এপিআরের মোট ১০০ নম্বরকে তিনটি আলাদা অংশে ভাগ করা হবে। এর মধ্যে প্রত্যেকের কর্ম সম্পাদন/লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ৫০, পেশাগত দক্ষতার জন্য ২৫ ও ব্যক্তিগত গুণাবলির জন্য ২৫ নম্বর রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এর আওতায় আনা হবে। তবে বিভিন্ন দেশের মূল্যায়ন পদ্ধতি পর্যালোচনা শেষে খসড়া প্রতিবেদনে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। 

বর্তমান মূল্যায়ন পদ্ধতিতে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিগত পাঁচ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনের গড়ের ভিত্তিতে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ ৩০ নম্বর দেওয়া হয়। তবে এই ৩০ নম্বরের সঠিক মূল্যায়ন নিয়েও অভিযোগ রয়েছে।

বার্ষিক কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদন (এপিআর) তৈরি কমিটির সভাপতি ও সাবেক সচিব জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে এটি চূড়ান্ত করা হয়। এর পরও কেন সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে জানি না। তবে দুর্নীতির পথ খোলা রাখার জন্যও এই বিলম্ব হতে পারে। কারণ, নতুন পদ্ধতি চালু হলে দুর্নীতি রোধে সহায়ক হবে। 

তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের (জিআইইউ) সমন্বয়ে অনেক হিসাব-নিকাশ করে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এর পরও সেই মান্ধাতা আমলের এসিআর পদ্ধতি চলছে। এটি পরিবর্তন করা খুবই জরুরি। চূড়ান্ত খসড়ার সেই এপিআর ফরম দ্রুত অনুমোদনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এটা কোনো আইন বা বিধি নয় যে, বছরের পর বছর বৈঠক করতে হবে। নতুন পদ্ধতি চালু করার পরও প্রয়োজনে যে কোনো সময় পরিবর্তন করা যাবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের মহাপরিচালক আশরাফ উদ্দিন বলেন, নতুন এপিআর ফরম তৈরি করে অনেক আগে জনপ্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। এটা কার্যকর হলে প্রত্যেক কর্মকর্তার বার্ষিক কার্যক্রম স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। এতে এসডিজি অর্জনও সহজ হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030369758605957