এসিটি শিক্ষকদের দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এমপিওভুক্তি অথবা পরবর্তী প্রকল্পে স্থানান্তরের দাবিতে সেকায়েপ প্রকল্পের অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকরা মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন । সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা । অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে তাঁরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন।

বাংলাদেশ এসিটি এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৌশিক চন্দ্র বর্মণ দুপুর ১২টায় দৈনিকশিক্ষাকে জানান, আজকের মতো অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেছি আমরা। আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টায় আবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেব।

তিনি বলেন, ৫ হাজার ২০০  অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২ হাজার ১০০ প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষতা, নিষ্ঠা ও সফলতার সাথে পাঠদান করছেন। গত ৩১ ডিসেম্বর সেকায়েপ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে এসিটিদের নতুন প্রকল্পে স্থায়ী করার জন্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে সরকার। মন্ত্রণালয় থেকে এমপিওভুক্তির উদ্যোগে নেয়া হয়েছে বলে শোনা গেলেও আমরা সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। নিতান্ত বাধ্য হয়েই আমরা রাজপথে  নেমেছি।

এসিটি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো: মামুন হোসেন জানান, সেকায়েপ প্রকল্পের মেয়াদ শেষে এসিটিদের এমপিওভুক্ত করা হবে তা এসিটি ম্যানুয়ালের ৩৬ নং ধারা অনুযায়ী ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রোগ্রাম প্ল্যান ২৬ পৃষ্ঠায় সরকারি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে নতুন প্রকল্পে স্থানান্তরের কথা স্পষ্ট উল্লেখ ছিল। সেকায়েপ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে ও সেকায়েপ এর সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. মো: মাহমুদ-উল হক প্রকল্পভুক্ত এসিটি শিক্ষকদের পরবর্তী সমন্বিত প্রকল্পতে রাখার জন্য মন্ত্রনালয়ে সুপারিশ করেন। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সরকারি আদেশ না আসা পর্যন্ত পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার মৌখিক পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি । কিন্তু গত ১০ মাসেও আমাদের বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে এসব শিক্ষক বেতন না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এদিকে সেকায়েপ এবং সেসিপের আওতায় নিয়োগকৃত অতিরিক্ত শ্রেণি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১১ জুলাই মন্ত্রণালয়ে  অনুষ্ঠিত এক সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সেকায়েপ ও সেসিপ প্রকল্পের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিকরণের সম্ভাব্য শর্তাবলি ও আর্থিক সংশ্লেষসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ২৮ আগস্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে একটি চিঠি দেয়া হয়।

চিঠিতে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রকল্প দুটিতে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সম্ভাব্য শর্তাবলি ও আর্থিক সংশ্লেষসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর গত ৩০ আগস্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। চিঠিতে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক নিয়োগকৃত সেকায়েপের অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক এবং সেসিপ প্রকল্পের রিসোর্স টিচারদের তালিকার হার্ড কপি এবং সফট কপি তিন কার্যদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরে পাঠানোর জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বলা হয়।

দৈনিকশিক্ষার এক প্রশ্নের জবাবে স্কুল,  কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল এমপিও কর্মকর্তা বলেন, ‘এমপিওভুক্তির প্রচলিত নীতিমালায় যেভাবে নিয়োগদানের বিষয় বর্ণনা করা রয়েছে, এসিটিদের বিষয়ে সেটা কার্যকর হবে না।কারণ তাদের নিয়োগ হয়েছে অন্যভাবে তাই  তাদেরকে এমপিওভুক্ত করতে হলে মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা আদেশ দিতে হবে।’

জানা যায়, মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করতে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত সেকায়েপ প্রকল্পের অধীনে দুর্গম ৬৪টি উপজেলার দুই হাজার ১০০টি স্কুলে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ছয় হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘সেকায়েপ’ প্রকল্পে এসিটি কম্পোনেন্টটি যুক্ত হয়, যা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ফিরিয়ে আনা, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে অভিভাবকদের সমন্বয় সভা, অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য, বাল্য বিবাহ ও শিশু নির্যাতন বন্ধসহ নানা ধরণের ইতিবাচক কার্যক্রম সফলতার সাথে সম্পন্ন করতে এডিশনাল ক্লাসরুম টিচার (এসিটি) প্রচেষ্টা যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। 

অপরদিকে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) প্রকল্পে রিসোর্স টিচার (আরটি) পদে ১ হাজার ৪৪৩ জন শিক্ষক রয়েছে। গত বছর অস্থায়ী ভিত্তিতে এসব শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। সেকায়েপ প্রকল্পটির মেয়াদ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। এমপিওভুক্তির দাবিতে এবছরের শুরু থেকে কয়েক দফায় এ প্রকল্পের শিক্ষকরা দাবি আদায়ে সংবাদ সম্মেলনসহ সারাদেশে মানববন্ধন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027000904083252