ওসি মোয়াজ্জেমের যত কুকীর্তি

ফেনী প্রতিনিধি |

ফেনীর সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) পদ থেকে অপসারিত হওয়া বহুল আলোচিত মোয়াজ্জেম হোসেনের কুকীর্তির শেষ নেই। তিনি ওসি পদে যেখানেই দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানেই ছুটেছেন টাকার পেছনে। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, মানুষকে হয়রানি ও নির্যাতন করে টাকা আদায় করা তার কাছে ছিল নেশার মতো। সোনাগাজীতে এসেও তিনি তার বদঅভ্যাস ছাড়েননি। গ্রেফতার হওয়া সোনাগাজীর মাদরাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্যাতনের শিকার মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকেও ওসি মোয়াজ্জেম নানা প্রশ্নে জর্জরিত করে সেই কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পর বিতর্কিত ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা হলেও তাকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। বরং তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের যে ধারায় মামলা হয়েছে তাতে তাকে কোনোভাবেই সংযুক্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। সময়ক্ষেপণ না করে তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো উচিত। এতে করে মোয়াজ্জেমের প্রতি যে জনক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা কিছুটা হলেও প্রশমিত হতে পারে।

সূত্র জানায়, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় ওসি পদে যোগ দেন মোয়াজ্জেম। সেখানে ব্যাপক ধড়পাকড় ও টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় তাকে কুমিল্লা জেলা পুলিশে সংযুক্ত করা হয়। স্থানীয় মুরাদনগর থানা আওয়ামী লীগের নেতারা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ করলে আওয়ামী লীগের কুমিল্লা (উত্তর) জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে মোয়াজ্জেম হোসেনকে মুরাদনগর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

এর কিছুদিন পর মোয়াজ্জেম হোসেন বিভিন্নভাবে তদবির করে মুরাদনগর উপজেলার নতুন থানা ভাঙ্গুরা বাজার থানায় ওসি পদে যোগদান করেন। সেখানে গিয়ে তিনি তার পুরনো কায়দায় সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানির মাধ্যমে অর্থ আদায় শুরু করেন। ভাঙ্গুরার আকুপুর ইউনিয়নের বলিগড় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ওসি মোয়াজ্জেম ৬৪টি মিথ্যা মামলা করেন। শুধু তাই নয়, ভাঙ্গুরায় দায়িত্ব পালনকালে এক প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের ঘটনায় এক প্রভাবশালীকে আটক করলেও পরে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে রফা করেন। এই ঘটনা জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত হলে চারদিকে হৈ চৈ পড়ে যায়। বিষয়টি উচ্চ আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে আদালতের নির্দেশের পর তাকে ওই থানা থেকে সরিয়ে নিয়ে ফেনী জেলার একটি থানায় ফের ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মোয়াজ্জেম নিজেকে বরাবরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক প্রভাবশালী নেতার ভাগ্নে বলে পরিচয় দিতেন। অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের কারণে ভাঙ্গুরা থানা থেকে প্রত্যাহারের পর তিনি দীর্ঘদিন পুলিশ লাইনে ছিলেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ব্যাপক তদবিরের মাধ্যমে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সর্বশেষ পোস্টিং নেন ফেনীর সোনাগাজী থানায়। 

এখানে এসে অনেক দিন ধরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এই সখ্যের কারণে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা একই মাদরাসার আলিমের ছাত্রী নুসরাতের ওপর কুনজর দেন। একপর্যায়ে তাকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেন। 

এ ঘটনায় নুসরাত থানায় অভিযোগ করলে তার অভিযোগ আমলে না নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজের পক্ষ নিয়ে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন উল্টো নুসরাতকেই হয়রানি করেন। ওসির ওই হয়রানির চিত্র পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এদিকে, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফেনীর পুলিশ সুপার ও ওসির কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের গঠন করা তদন্ত কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুজনের গাফিলতির তথ্য-প্রমাণ পায়। দুজনকে শাস্তির সুপারিশ করে তারা একটি প্রতিবেদন পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে জমা দেন। তবে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057430267333984