প্রতিটা কোরবানির ঈদেই কিছু মন-খারাপ করা দৃশ্য দেখতে হয়। কোমলমতি কিছু মাদরাসা ছাত্র, ঈদের সময়টা যাদের মা-বাবার সঙ্গে হাসি-আনন্দে কাটানোর কথা, সুন্দর কাপড় পরে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করার কথা, তারা গরুর রক্তমাখা জামা পরে, ছুরি হাতে রাস্তায় রাস্তায় মানুষের বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের কাছে কোরবানির চামড়া চেয়ে বেড়ায়। অন্যদিকে ওই মাদরাসার ছাত্ররা মায়েদের কথা ভেবেও কষ্ট পায়। ছেলেকে মাদরাসায় রেখে মায়ের ঈদ কেমন কাটছে। এই কল্পনাটা বড্ড মন-খারাপ করে দেয় আমাদের। আমার ব্যক্তিগত অভিমত মাদরাসাগুলো যদি ছাত্রদের বাধ্যতামূলক আটকে না রেখে অন্য কোনো পথ বেছে নেয় তাহলে এতে সুন্দর সমাধান বের হয়ে আসবে। শুক্রবার (৯ আগস্ট) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন আসিফ আসলাম।
একটু ব্যাখ্যা দিচ্ছি। মাদরাসাগুলো শুধু তার পার্শ্ববর্তী এলাকাতেই চামড়া কালেকশনের কাজ করে না। দূরবর্তী এলাকায়ও তাদের কাজ করতে হয়। সুতরাং ওই দূরবর্তী এলাকায় যাতায়াত বাবদ গাড়ি ভাড়ার টাকা, নাস্তার খরচ, কখনও দুপুরের খাবার হোটেলে খেতে হয়, সেটার খরচ। সব মিলিয়ে ছাত্রদের পেছনে মাদরাসাগুলোর বিরাট অঙ্কের টাকা খরচ হয়। অন্য দিকে চামড়ার দাম দিন দিন কমছে। এখন মাদরাসাগুলো যদি ৫০০ টাকা অথবা ১০০০ টাকা ছুটির কাফ্ফারা নিয়ে ছাত্রদের ছুটি দিয়ে দেন, তাহলে মাদরাসাগুলোর অনেক দিকে লাভবান হবে। যেমন-
* এ ক্ষেত্রে মাদ্রাসাগুলো প্রতিটা ছাত্রের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ করে টাকা পাবেন। এভাবে ৩/৪শ ছাত্রের বড় অঙ্কের টাকা মাদরাসা পাবে। অন্যথায় কী গ্যারান্টি আছে, প্রতিজন ছাত্র ১টি করে চামড়া আনতে পারবে। সেটা ৫০০ অথবা ১০০০ টাকায় বিক্রিও হবে এর গ্যারান্টি কী!
* দিনের গাড়ি ভাড়া, নাস্তার খরচ, দুপুরের খাবার বাবদ বিরাট অঙ্কের টাকা ব্যয় হতো সেটাও বেঁচে যাবে।
* ঈদের পর তিন দিন পর্যন্ত মাদরাসা খোলা –রাখলে প্রতিদিন কয়েক হাজার ছাত্রের খাবারের জন্য যে বোর্ডিং খরচ হবে, বিদ্যুৎ বিল যাবে, পানি ও গ্যাস বিল ব্যয় হবে সেটাও বেঁচে যাবে।
তবে ওপরের ক্লাসের কিছু বয়সী ছাত্র স্বেচ্ছায় চাইলে থাকতে পারবে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি আর মহল্লাবাসীর খেদমতের নিয়তে তাদের পশু কোরবানি করবে। আর কিছু ছাত্র থাকবে মাদরাসায়। যদি কেউ স্বেচ্ছায় আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে মাদরাসায় কোরবানির চামড়া দিতে আসে, তারা সেটা গ্রহণ করবে। বিনিময়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাদের কিছু টাকা হাদিয়া দেবে, যেমনটা দারুল উলুম দেওবন্দে হয়ে থাকে। দেওবন্দ মাদরাসায় কোরবানির সময় ছাত্রদের ছুটি দেয়া হয়। কোনো বাধ্যবাধকতা নেই মাদরাসায় চামড়া উঠানোর। কেউ যদি স্বেচ্ছায় কোরবানির চামড়া কালেকশনের কাজ করে তাদের প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ রুপি দেয়া হয়। দেওবন্দের মতো আমাদের দেশের মাদরাসাগুলোয়ও এ নিয়ম চালু করা এখন সময়ের দাবি। এতে মাদরাসার লাভ হবে, ছেলেরাও বাবা-মার সঙ্গে ঈদ করে আনন্দ পাবে।
আলহামদুলিল্লাহ, অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, রাহমানিয়া মাদরাসা, বারিধারা মাদরাসা, মালিবাগ মাদরাসাসহ রাজধানীর বেশ কিছু বড় মাদরাসায় এ নিয়ম চালু হয়েছে। আশা করছি, দেশের প্রতিটি মাদরাসায় এ নিয়ম চালু হবে। মাদরাসা ছাত্ররা তাদের বাবা-মা, ভাইবোন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হাসি-আনন্দে ঈদ করতে পারবে। মাদরাসাগুলোর বিরাট অঙ্কের টাকা গচ্চা দেয়া থেকে বেঁচে যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় এ ধারা চালু হলে দেশের লোকজন মাদরাসার ছাত্রদের সম্মানের দৃষ্টিতে দেখবে তাদের মনটা বড় হবে। এ সমাধান সব কওমি মাদরাসার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। কর্তৃপক্ষের বিবেচনার অপেক্ষায় থাকলাম।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও শিক্ষার্থী, রাহমানিয়া মাদরাসা, ঢাকা।