কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খুলে দেয়া উচিত

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

করোনাভাইরাস মহামারিতে সারাবিশ্বে শিক্ষাখাতে সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের দেশে অনলাইন শিক্ষার কার্যক্রম চলছে। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে এর বিকল্প কিছু ভাবনায় আসেনি। তৃণমূলের খেটে খাওয়া মানুষের সন্তানদের মাঝে এর ছোঁয়া তেমন পড়েনি। প্রায় পুরো বছরই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদানের বাহিরে। বাড়িতে বসে পাঠদান চালিয়ে নিতে স্কুল ছাড়া তারা অনেকটাই অসহায়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বা মূল্যায়ন ছাড়া অটোপ্রমোশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের লার্নিং গ্যাপ তৈরি হয়েছে। তাদের বর্তমান শ্রেণির পাঠ্যক্রম শেষ না করে পরের ক্লাসে প্রমোশন দিলে তারা ওই ক্লাসের পাঠে দুর্বল থাকবে। মূল্যায়ন বা পরীক্ষা ছাড়া অটোপ্রমোশন শিক্ষার সংকট দূরীকরণের সঠিক সমাধান নয়।

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় দুর্বল থেকে বেড়ে উঠবে এটা মোটেই কারো কাম্য নয়। আমার মতে বিদ্যমান করোনাভাইসের কারণে কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জ্ঞান অর্জন যাচাইয়ের জন্য মূল্যায়ন করে অনেকটা জ্ঞান অর্জনমূখী করিয়ে উপরের শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ দেয়া যেত। 

অধিকতর দুর্বল শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকের সহযোগীতায় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পাঠ্যক্রমে মনোযোগী হয়ে অটোপাসের সুযোগের পরিবর্তে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে পরের শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ অর্জন করতো। এক্ষেত্রে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় খোলা রাখার বিকল্প নেই। করোনা মহামারির শুরুর প্রাক্কালে যেভাবে সব কিছু বন্ধ বা ২/১টা বাড়ি আক্রান্ত হলে পুরো এলাকা লকডাউন করা হতো, বর্তমানে তা মোটেই সমীচিন নয়। স্বাস্থ্যবিধি সবাইকে কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জনপ্রতিনিধিসহ সকলকে তৎপর হতে হবে। 

বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্টস, গণপরিবহন, সিনেমা হল, কওমি মাদরাসাসহ প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। শুধু বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবন করতে হচ্ছে কিন্ডারগার্টেনের শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা। তাদের বেতন, টিউশনি বিহীন জীবনযাত্রায় এসেছে করুণ পরিনতি। 

আগামী প্রজন্মকে জ্ঞান নির্ভর জাতি হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি আরোপ করে খোলা প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজন যথাযথ দেখভাল। প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষার্থী সংখ্যাকে স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক ভাগ করে শিক্ষকদের স্বক্রীয় তত্ত্বাবধানে শ্রেণির কাজ চালানো যেতে পারে। কোন অবস্থায় এক সাথে আগের মতো সকল শ্রেণির পাঠদান করা সঠিক হবে না। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষার্থী সংখ্যার ওপর স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে শ্রেণির কার্যক্রম চালু করা হোক। শিশু জীবনুনাশক  যন্ত্র ও তাপমাত্রা পরীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যালয় প্রবেশ করবে। বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা সতর্কতা সাথে এ দায়িত্ব পালন করবে। 
সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে  হবে।  প্রতিটি শিক্ষার্থী হাত ধুয়ে মাস্ক পড়ে শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক নির্দিষ্ট স্থানে বসবে। প্রতিদিন ক্লাসরুম জীবানুনাশক ঔষধ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের দায়িত্ব থাকবে সার্বক্ষণিক।

প্রতিদিন সকল শ্রেণির পাঠদান প্রয়োজন নেই। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষক, শিক্ষার্থী প্রতি লক্ষ্য করে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করলে আগামী প্রজন্মের শিক্ষায় মেরুদণ্ড দুর্বল থাকবেনা। অপরদিকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠবে প্রশিক্ষিত। অনলাইনের ক্লাস সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা অধিকতর ধারণা পাবে। শিক্ষার্থীদের বদ্ধ ঘরে আর আটকিয়ে না রেখে খানিকটা হলেও বিদ্যালয়ে পাঠদানের সুযোগ নিশ্চিত করা হলে আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠবে সুশিক্ষিত নাগরিক হিসাবে। অটোপাশের গ্লানি থেকে জাতির ভবিষ্যত কর্ণধাররা মুক্তি পাবে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া হোক জ্ঞান অর্জনের প্রতিষ্ঠানগুলো। জ্ঞান অর্জন নিয়ে বিকশিত হোক এদেশের শিক্ষার্থীরা। জয় বাংলা। জয় হোক এদেশের শিক্ষার উন্নয়ন। এ প্রত্যাশায়। 

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0096650123596191