কবে আসবে মশা মারার ওষুধ জানেন না দুই মেয়র

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মশা মারার ওষুধ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। কবে দেশে কার্যকর ওষুধ আসবে, মাঠপর্যায়ে তার ব্যবহার কীভাবে শুরু হবে, তা জানেন না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র। অথচ ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছেই। ডেঙ্গু মোকাবিলায় কার্যকর ওষুধ ছিটাতে দুই মেয়রসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এক সপ্তাহ আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় মশা নিধনের ‘বিদ্যমান ওষুধ কার্যকর নয়’ দুই সিটি করপোরেশন তা স্বীকার করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওষুধ পরিবর্তনের। হাঁকডাক শুরু হয়েছে কার্যকর ওষুধ আনার। তবে নতুন এ ওষুধ কবে আনা হবে তা জানেন না সংস্থা দুটির কেউই। এমনকি ওষুধ আমদানির প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। বলা হচ্ছে, ওষুধ পরিবর্তনে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতামত পেলেই আনা হবে নতুন ওষুধ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ওষুধ আনা হবে। ওষুধ আনার ক্ষেত্রে জনস্বার্থের বিষয়টিও দেখতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, প্রক্রিয়া শেষ করে ওষুধ আনা হবে।

জানা গেছে, ওষুধ আমদানির প্রক্রিয়া অনেক জটিল। প্রথমে ফিল্ড টেস্ট করতে হয়। এরপর ল্যাব টেস্ট শেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নিতে হয়। পরেই আনা যায় ওষুধ। এতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। ওষুধ আনা নিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। ১৫ মাস আগে আইসিডিডিআরবি দুই সিটি করপোরেশনের ব্যবহৃত ওষুধ মারার ওষুধ অকার্যকর বলেছিল। কিন্তু এতদিনেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও কার্যকর ওষুধ না ছিটানোয় কোন গভীর ষড়যন্ত্র আছে কিনা এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দেশবাসীর মনে।

রাজধানীর সীমানা ছাড়িয়ে ডেঙ্গু এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় দেশের ডাক্তার-নার্সরা তাদের সবোর্চ্চটা করে যাচ্ছেন। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে না। ডাক্তার ও নার্সদের নিরলস পরিশ্রমের কারণে বহু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীতে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। এ অবস্থাতেও চিকিৎসক ও নার্সরা হাসিমুখে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে চিকিৎসকরা জানান, অনেক রোগী ভেতরে ভেতরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত; কিন্তু তারা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের কাছে না গিয়ে যাচ্ছেন ওঝা, গ্রাম্য চিকিৎসক ও হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে। তারা যদি প্রথমেই হাসপাতালে আসতেন তাহলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারতেন। কিন্তু যখন তারা আসেন, তখন আসলে করার তেমন কিছু থাকে না।

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ৬৪৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২২ হাজার ৯১৯ জন হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে। বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৮৫৮ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১৬ হাজার ৪৩ জন। ডেঙ্গু আক্রান্তের মোট সংখ্যা বাড়লেও রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে গত দুদিন ধরে রোগী ভর্তির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৯৬৯ জন রাজধানীতে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৯০৫ জন। ঢাকার বাইরে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে দুই হাজার ৩৮১ জন, চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন দুই হাজার ৫২৪ জন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ পর্যন্ত ২৮৭০ জন এ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২০৮০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ১১ জন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ওষুধ পর্যপ্ত আছে। রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মিটফোর্ড হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে ২১৫ জন, তাদের নিয়ে মোট চিকিৎসাধীন আছে ৪২৮ জন। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন ডেঙ্গু রোগী ১২৯ এবং চিকিৎসাধীন ৪৩২ জন, খুলনা বিভাগে নতুন ৬৩ এবং চিকিৎসাধীন ৪০৯ জন, রংপুর বিভাগে নতুন ৫৪ জন এবং ভর্তি ২১৩ জন, রাজশাহী বিভাগে নতুন রোগী ৬৯ জন, চিকিত্সাধীন ৩২৫, বরিশাল বিভাগে নতুন ৬৭ জন এবং চিকিৎসাধীন ১৯৭ জন, সিলেট বিভাগে নতুন শনাক্ত ৩১ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি ১০০ জন এ ছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে নতুন রোগী ৫২ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ২৭৭ জন।

কালকিনিতে ডেঙ্গু জ্বরে গৃহবধূর মৃত্যু: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরের কালকিনিতে নাদিরা বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূ মারা গেছেন। শনিবার ভোরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। তিনি পৌর এলাকার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের আলমগীর মোড়লের স্ত্রী।

ডেঙ্গুর প্রকোপে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত সংকট : হাসপাতালগুলোতে রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে রীতিমতো ঘাম ছুটে যাচ্ছে রোগীর স্বজনদের। রাজধানীর ব্লাড ব্যাংকগুলোতে পর্যন্ত এখন রক্ত সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ‘নেগেটিভ’ ব্লাড গ্রুপের রক্ত রীতিমতো দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ৫০ হাজার পুলিশ : অ্যাডিস মশা প্রতিরোধে ঢাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর জন্য ৫০ হাজার পুলিশ সদস্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। গতকাল সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ডেঙ্গু প্রতিরোধী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কমিশনার এ কথা জানান।

রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি পরিদর্শন করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী : গতকাল সকাল থেকে দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট ও ঢাকা শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে ছিলেন। হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুই সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল : ডেঙ্গু রোগ থেকে নাগরিকদের রক্ষায় স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033309459686279