করোনা : এখনো আমরা যা জানি না

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মনে হচ্ছে যেন এমন পরিস্থিতি চলছে অনন্তকাল ধরে। অথচ নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড–১৯) সম্পর্কে মানুষ জানতেই পারল এই তো গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ভাইরাসটি এখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।[]inside-ad

নতুন ধরনের এই ভাইরাসটি সম্পর্কে জানতে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা সর্বোচ্চ শ্রম দিচ্ছেন। এরপরও ভাইরাসটি সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। এখন এই ধরণীর আমরা সবাই পরীক্ষা–নিরীক্ষার অংশে পরিণত হয়েছি। উত্তর খোঁজা হচ্ছে নানা প্রশ্নের। প্রশ্নগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর জবাব জানা যাচ্ছে না। বিবিসি অনলাইনে তুলে ধরা হয়েছে জবাব না–জানা এমন নয়টি প্রশ্ন।

১. কত মানুষ আক্রান্ত
করোনা ভাইরাস নিয়ে যে কয়টি প্রশ্ন সবচেয়ে উচ্চারিত হয়েছে, তার মধ্য এটি একটি। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও বটে। ভাইরাস আক্রান্ত হয়েও উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে না, এমন ব্যক্তিদের কারণে মোট আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি বহন করেও অনেকের উপসর্গ সেভাবে প্রকাশ পাচ্ছে না, অনেকে উপসর্গগুলো সেভাবে অনুভব করতে পারছেন না।

২. সত্যি এটি কতটা ভয়াবহ
যতক্ষণ আমরা জানতে না পারব কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যুর হার নির্ণয় করা অসম্ভব। অনুমান করা হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১ শতাংশ মারা যাচ্ছে। তবে উপসর্গ প্রকাশ পায়নি, এমন আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে মৃত্যুর হার কম দেখাবে।

৩. উপসর্গের পূর্ণ পরিসর
করোনা ভাইরাস আক্রান্তের মূল উপসর্গ হচ্ছে জ্বর ও শুকনা কাশি। আক্রান্ত কি না, তা বোঝার জন্য আপনাকে এ উপসর্গগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের কারও কারও মধ্যে গলাব্যথা, মাথাব্যথা দেখা দিয়েছে এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতেও দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি বিষয়ে ধারণা বেশ পোক্ত হতে যাচ্ছে, কারও কারও ঘ্রাণশক্তি লোপ পাচ্ছে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, আক্রান্ত কারও কারও ঠান্ডার মৃদু উপসর্গ যেমন নাক দিয়ে পানি পড়া বা হাঁচি আছে কি না। গবেষণা বলছে, এ ধরনের উপসর্গ থাকা ব্যক্তিরা সম্ভাব্য আক্রান্ত, যারা জানেন না যে তারা ভাইরাসটি বহন করছেন।

৪. ভাইরাসটি বিস্তারে শিশুদের কী ভূমিকা
ভাইরাসটিতে শিশুরা অবশ্যই আক্রান্ত হতে পারে। তাদের বেশির ভাগের মধ্যে মৃদু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে অন্য বয়সীদের তুলনায় শিশুদের মুত্যুর হার অনেক কম। শিশুরা সাধারণত যে কোনো রোগ দ্রুত ছড়াতে ভূমিকা রাখে। এ কারণে শিশুদের সুপার–স্প্রেডারও বলা হয়ে থাকে। কারণ, তারা বেশি সংখ্যক লোকজনের সঙ্গে মেশে, মাঠে খেলতে যায়। তবে করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে নিশ্চিত নয় যে তারা ঠিক কোন পর্যায় পর্যন্ত এটা ছড়াতে সহায়ক হচ্ছে।

৫. ভাইরাসটি আসলে কোথা থেকে এসেছে
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে চীনের উহান শহরের প্রাণীর বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। করোনা ভাইরাসকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সার্স–কভ–২ বলা হয়, যেটি বাদুরদের সংক্রমিত করে। ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি বাদুরের মাধ্যমে অজ্ঞাত কোনো প্রজাতির প্রাণীতে ছড়ায় এবং পরে তা মানুষের মধ্যে ছড়ায়। ওই ‘নিখোঁজ লিংক’ (অজ্ঞাত প্রাণী) সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি, যেটি আরও বেশি সংক্রমণের উৎস হতে পারে।

৬. গ্রীষ্মে কি আক্রান্তের সংখ্যা কমবে
ঠান্ডা, কাশি, জ্বর সাধারণত গ্রীষ্মের চেয়ে শীত মৌসুমেই বেশি দেখা দেয়। তবে এটা জানা যায়নি যে গ্রীষ্মে ভাইরাসটি ছড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না। যুক্তরাজ্য সরকারের বিজ্ঞানবিষয়ক পরামর্শকেরা সতর্ক করেছেন এই বলে যে করোনা ভাইরাসের কোনো মৌসুমি প্রভাব রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয়। যদি একটি প্রভাব থাকে, তবে সেটি ঠান্ডা ও জ্বরের চেয়ে ছোট কিছু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। আর গ্রীষ্মজুড়ে ভাইরাসটি যদি সুপ্ত থাকে, তবে শীতে তা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সময় হাসপাতালগুলোকে শীতজনিত অসুস্থতায় ভোগা রোগীদের সামলাতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয়।

৭. কেন কিছু লোকের উপসর্গ এত গুরুতর হয়
বেশির ভাগ মানুষের জন্য কোভিড–১৯–এর সংক্রমণ মৃদু। ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে অসুস্থতা গুরুতর আকার ধারণ করে। কিন্তু কেন? এই ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এর সঙ্গে জড়িত। জিনগত বিষয়ও রয়েছে।

৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতক্ষণ স্থায়ী হতে পারে এবং এটি কি দ্বিতীয়বার হওয়া সম্ভব
ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে, সে ব্যাপারে প্রমাণের চেয়ে অনুমাননির্ভর তথ্যই বেশি। রোগী যদি ভাইরাসটির সঙ্গে লড়াইয়ে সফল হন, তাহলে তার দেহে অবশ্যই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। তবে রোগটি যদি মাত্র কয়েক মাস থাকে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি ডেটার অভাব রয়ে যায়। গুজব রয়েছে, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত ব্যক্তির পরীক্ষার পর ভুল তথ্য জানিয়ে বলা হচ্ছে যে তিনি ভাইরাসমুক্ত রয়েছেন। দীর্ঘ মেয়াদে কী ঘটবে, তা বোঝার জন্য রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কিত প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।

৯. ভাইরাসটিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না
ভাইরাসে সব সময় পরিবর্তন ঘটতে থাকে। তবে পরিবর্তনের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলোর জিনগত আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে না। সাধারণ নিয়ম অনুসারে, আপনি আশা করেন, দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে ভাইরাসের ভয়াবহতা একসময় কমে আসবে। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যদি ভাইরাসটিতে পরিবর্তন ঘটে, তখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেটিকে আর শনাক্ত করতে পারবে না এবং নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনও আর কোনো কাজে আসবে না। যেভাবে জ্বরের বেলায় কাজ করে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059299468994141