করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশ কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। বিকল্প হিসেবে অনেক দেশে অনলাইনে পড়াশোনা চালু হলেও সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি শিশু। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ স্কুল শিক্ষার্থীর অনলাইনে ক্লাস করার মতো অবকাঠামোগত সুযোগ নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড়শ কোটি শিশুর অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছায়নি সেখানকার শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে। ঐ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিশ্বের শিশুদের ৪৯ শতাংশই প্রাইমারি স্কুলগামী।
ভারতের পরিসংখ্যান তুলে ধরে ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারিতে দেশটির ১৫ লাখ স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে ২৮ কোটি ৬০ লাখ শিশুর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া প্রায় ৬০ লাখ স্কুলশিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেছে।
ইউনিসেফের ভারতীয় প্রতিনিধি ড. ইয়াসমিন আলী হক বলেন, স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, শিশুদের বাবা-মায়েরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পুরো পরিবার এক ধরনের টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছে। তাদের মতো অনেক পরিবারের শিশুরা লেখাপড়া থেকে একপ্রকার ছিটকে পড়েছে। তাদের অনেকেরই স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেটের মতো সুযোগ-সুবিধা নেই। এমন পরিস্থিতিতে এসব শিশুদের বাবা-মা, স্থানীয় গোষ্ঠী এবং স্বেচ্ছাসেবীদের যুক্ত করার মাধ্যমে তাদের স্কুল কার্যক্রমের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে।
ভারতে নতুন করে স্কুল কার্যক্রম চালু করার প্রসঙ্গে নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সাইন্সের অধ্যাপক ড. রাজেশ সাগর বলেন, এই মুহূর্তে স্কুলগুলো চালু করে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এসব শিশুদের স্কুলে আনার মতো অবকাঠামোগত সুযোগও স্কুলগুলোর নেই। এছাড়া শিশুদের সব সময় মাস্ক পরিয়ে রাখাটা কঠিন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিধি, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিধির মতো বিষয়গুলো স্কুলে নিশ্চিত করা শুধু কঠিনই নয়; একপ্রকার অসম্ভব বিষয়। এক্ষেত্রে দূরদর্শনের মতো রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলগুলোকে কাজে লাগিয়ে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যেতে পারে।
ভারতে অনেক শিশুর প্রযুক্তির সুবিধা এবং যন্ত্রপাতির সুবিধা নেই। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের জন্য। তাদের বেশির ভাগেরই বাবা-মায়ের ফোনের ওপর নির্ভর করতে হয়। একাধিক ভাই-বোন থাকলেও তা নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পর্যন্ত হয়। ফলে অনেকের পক্ষেই অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব হয় না। আবার অনেকেই সুযোগ থাকার পরও শুধু কারিগরি জ্ঞানের অভাবে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। এ চিত্র শুধু ভারতের নয়, গোটা দুনিয়ার। অনলাইন শিক্ষার সুযোগ থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর অর্ধেক শিশুই বঞ্চিত হচ্ছে।
বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউনিসেফ এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েত্তা ফোরে বলেন, করোনা মহামারির কারণে বিপুলসংখ্যক শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। অনেক শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়বে। আগামী দশকেই অর্থনীতি এবং সমাজে এর প্রভাব পড়বে।
সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস