করোনা : অভিভাবকরা টিউশন ফি দিলেও বেতনবঞ্চিত নন-এমপিও শিক্ষকরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনার এ দুঃসময়ে যখন জীবিকাযুদ্ধ ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে, তখন বেসরকারি স্কুলগুলো অভিভাবকদের চাপ দিয়ে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায় করলেও সেই টাকায় শিক্ষকদের বেতন দেয়া হচ্ছে না। ফলে মানবেতন জীবনযাপন করছেন অধিকাংশ স্কুল শিক্ষক। অন্যদিকে এ মহামারির মধ্যে চাপ দিয়ে বেতন আদায় করা নিয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন অভিভাবকরা। এরকম পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের পাশাপাশি স্কুল কর্তৃপক্ষকেও মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুক্রবার (৩ জুলাই) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন  অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে টিউশন ফি তুলে নিয়েছে। এই টিউশন ফি দিয়েই স্কুলগুলোর নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন দেয়ার কথা। কিন্তু গত চার মাস ধরে বেশিরভাগ শিক্ষকই বেতন পাচ্ছেন না। এমনকি মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকদের বেতন বকেয়া রয়েছে। এছাড়া এই স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দেয়ার সময় ‘৩শ টাকার স্ট্যাম্পে’ স্বাক্ষর নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের বেতন না নিলে শিক্ষকদের বেতন দিতে পারবে না। অন্যদিকে এই পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবকেরও সন্তানদের টিউশন ফি চালিয়ে যাওয়া কষ্ট হচ্ছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কী করা যায়, আমরা বসে সে বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্যাম্পাসে ক্লাস, পরীক্ষা নেই। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় ইংলিশ মিডিয়ামসহ বিভিন্ন স্কুল থেকে অভিভাবকদের চাপ দেয়া হচ্ছে গত ৪ মাসের বকেয়া বেতন ফি পরিশোধের। কয়েকটি স্কুল এর মধ্যে এপ্রিল, মে ও জুন মাসের ফি অর্ধেক করার ঘোষণা দিলেও অধিকাংশ স্কুলই পুরো বেতন না দিলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় অপারগ অভিভাবকরা ফি কমানোর দাবিতে করোনার মধ্যে নানা কর্মসূচি পালন করছেন।

জানতে চাইলে ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকার প্যারেন্টস ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, ফি কমানোর দাবিতে একাধিকবার দরখাস্ত দেয়ার পরও কর্তৃপক্ষ শোনেনি। প্যারেন্টস ফোরাম তাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছেন কিন্তু তারা রাজি হননি। হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের আহ্বায়ক কল্যাণ ওয়াদ্দার বলেন, করোনার সময় যখন স্কুল বন্ধ তখন টিউশন ফিতে ৫০ শতাংশ ছাড় দেয়ার সঙ্গে অনেক কিছুরই দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।

শুধু ইংলিশ মিডিয়াম নয়, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোও বেতন-ভাতার জন্য অভিভাবকদের চাপ দিচ্ছে। মগবাজারের ইস্পাহানি বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, তিন-চার মাস ধরে শিক্ষকদের বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্যই টিউশন ফি দিতে শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে। একই কথা বলেছেন রাজধানীর পুরান ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশনের অধ্যক্ষও। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নিয়ে শিক্ষকদের বেতন দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি একটি অনুষ্ঠানে বলেন, বড় একটা সমস্যা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি দেয়া নিয়ে। ফি না পেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষকদের কী করে বেতন দেবে? আর শিক্ষকরা তো অধিকাংশই বেতনের ওপর নির্ভরশীল। কেউ কেউ টিউশনি করাতেন, এখন তো সব বন্ধ। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা একরকম নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আগামী কয়েক মাস চলার মতো সামর্থ্য আছে তাদের অনুরোধ করব শিক্ষার্থীদের ফি কিস্তিতে নিন, নয়তো কিছুদিন পরে নিন। সম্ভব হলে কিছুটা ছাড় দেয়ার চেষ্টা করুন।

অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদেরও ছাড় দিতে হবে, কিছু না কিছু বেতন দিতে হবে। আপনার সন্তান পড়াশোনা করছে, এখন প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে বলে সেই বেতন বন্ধ করে দেয়া যায় না। সরকারি চাকরি হলে তো পুরো বেতনই পাচ্ছেন, সরকারি না হলে হয়তো বেতন কম দিচ্ছে; তারপরও সামর্থ্য থাকলে সন্তানের স্কুলের ফি দেয়া উচিত। যতদূর সম্ভব উভয়পক্ষকেই আসলে মানবিক আচরণ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, নিজেদেরও চলতে হবে। এর মধ্যে যতটা সম্ভব উভয়পক্ষকে ছাড় দিয়ে এবং মানবিক আচরণ করে এই দুর্যোগের সময়টা আমাদের পার করতে হবে।

এদিকে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এর মধ্যে নিয়মিতভাবে বেতন আদায়ে ভিন্ন পন্থা বেছে নিয়েছে ঢাকার সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে বেতন পরিশোধ নাও করতে পারেন, তা মাথায় রেখে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ হামিদা আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন না নিয়ে আমাদের কোনো উপায় নেই। কারণ আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষকই এমপিওভুক্ত নন; এমনকি সরকারের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধাও পাই না। টিউশন ফি আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস। এ থেকেই শিক্ষকদের বেতন দেয়া হয়, অন্যান্য খরচ জোগান দেয়া হয়।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষকের অভিযোগ, অধ্যক্ষ হামিদা আলী মিথ্যা কথা বলেছেন। কারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নেয়া হলেও অধিকাংশ শিক্ষক বেতন পাননি। যারা পেয়েছেন তারাও পেয়েছেন অর্ধেক।

অন্যদিকে ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে সই করে শিক্ষকদের বেতন দেয়ার খবরটি ভুয়া বলে দাবি করেছেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম। তিনি বলেন, শিক্ষকদের বলা হয়েছে যারা প্রাইভেট পড়ান তারা যেন স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে বলেন, সরকারি বিধান মতে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে পড়াবেন না। আর এটাকেই অপপ্রচার করা হয়েছে স্ট্যাম্পে সই দিয়ে বেতন নিতে হচ্ছে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুন মাস বাদেই তার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের একমাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এই বকেয়া বেতন শিগগিরই দিয়ে দেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0097081661224365