করোনা আক্রান্ত ভেবে দাফন, টেস্ট রিপোর্টে আরেক নাম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির মরদেহ ‘জোর করে’ দাফনের অভিযোগ করেছেন তার এক স্বজন। শনিবার (৪ এপ্রিল) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন ওবায়দুর মাসুম।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তিনি বলছেন, ভাইয়ের মৃত্যুর পর দুই দিন পার হলেও তাকে এখনও মৃত্যু সনদ দেয়া হয়নি। এদিকে তার ভাইয়ের করোনা ভাইরাস পরীক্ষার যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে, সেখানে আরেকজনের নাম রয়েছে। তার বয়সও ভিন্ন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের গবেষণাগারে পরীক্ষার পর তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ ধরা পড়েনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন, সমস্যার সমাধানেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

গত বুধবার রাতে এই হাসপাতালে নভেল করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ভর্তি হয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের বাসিন্দা মো. আনারুল হক।

আনারুলের স্ত্রী জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোরের স্টাফ নার্স ছিলেন। মাস তিনেক আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর হাসপাতালের ডরমিটরিতে থাকতেন তিনি। স্ত্রীর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণসহ প্রাতিষ্ঠানিক কিছু বিষয় নিষ্পত্তির জন্য থেকে গিয়েছিলেন আনারুল।

তার ছোট ভাই মাসুদ বলেন, তার ভাই এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন, সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। বুধবার ডরমিটরির তিনতলার ওয়াশরুমে মাথা ঘুরে পড়ে যান। প্রথমে নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল পরে সেখান থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আনারুলকে। নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে তাকে আইসোলেশন ইউনিটে রাখা হয়েছিল। বুধবার রাত ৮টার দিকে সেখানেই মারা যান আনারুল।

মাসুদ বলেন, বুধবার রাতে তার ভাইয়ের মুখ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেদিন মরদেহ বুঝিয়ে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তিনি আবারও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যান। সে সময় তাকে জানানো হয়, আনারুলের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে না। খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে দাফনের জন্য দিয়ে দেয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে তার স্বাক্ষর চান কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা।

“কিন্তু স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। কাগজগুলো ছুঁইড়া ফেলে দিল। বলল, তুই সই দিলেও লাশ নিয়ে যাব, না দিলেও লাশ নিয়ে যাব। ওইখানে তো আমার কেউ নাই। বাধ্য হয়ে সই দিয়েছি। তারা আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে।”

মাসুদ অভিযোগ করেন, কবরস্থান পর্যন্ত যেতে চাইলেও তাকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি।

“আমি বললাম- লাশ তো দিলেন না, অন্তত গোরস্তানে যেতে দেন। তারা বলল নেয়া যাবে না, আমার পোশাক নাই। গাড়িতে আমাকে দিয়া লাশ তোলাইল। বলল জানাজা করতে নিয়া যাব। কিন্তু নিয়া গেল না। বললাম, ভাইয়ের দাফনের সময় পাশে থাকি। কিন্তু তারা আমাকে সেই গাড়িতে নেয়নি। বলে অন্য গাড়িতে আসতে। কিন্তু অনেকক্ষণ পর একটা গাড়ি পাইয়া ফোন দিছি। বলে দাফন করা হয়ে গেছে। এই দুঃখ সারাজীবন ভুলতে পারব না।”

‘জোর করে স্বাক্ষর নেয়া’ ওই চিকিৎসক বা কর্মকর্তা কারও নাম বলতে পারেননি মাসুদ। তবে তাদের সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন বলে জানান তিনি।

মাসুদ অভিযোগ করেন, মৃত্যুর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনও তার ভাইয়ের মৃত্যুসনদ বুঝে পাননি। নভেল করোনা ভাইরাস সন্দেহে যে পরীক্ষা করা হয়েছে, সেই পরীক্ষার রিপোর্টেও নাম ভুল এসেছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তির কাগজপত্রে আনারুলের বয়স লেখা হয়েছে ৫৫ বছর। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১ এপ্রিল ১৯৬৮। সে হিসেবে তার বয়স হয় ৫২ বছর।

তবে শিশু হাসপাতালের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ হেলথ ফাউন্ডেশন থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে সেখানে তার নাম লেখা হয়েছে আশিক। বয়স লেখা হয়েছে ৭০ বছর।

মাসুদ বলেন, “লাশ দেয়নি, দেয়নি মৃত্যুসনদ, পরীক্ষার প্রতিবেদনেও নাম-বয়স ভুল। আমি এখন বাড়ি যাব কীভাবে? আমাকে কেন ছাড়ছেন আমাকেও হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠান। এলাকার মানুষ বলাবলি করছে যদি করোনা ভাইরাস না-ই হয় তাহলে ঢাকায় দাফন করল কেন?”

তার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, কাগজপত্রে জোর করে স্বাক্ষর নেয়া বা দুর্ব্যবহার করার বিষয়টি তার জানা নেই। প্রতিবেদনে নাম-বয়স ভুল আসার বিষয়টিও খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

“আমি বিষয়টি দেখব। ডেথ সার্টিফকেট যদি না পেয়ে থাকে আমি আমাদের সহকারী পরিচালককে বিষয়টি জানিয়ে রাখব। তার কাছে এলে তার স্বজনদের মৃত্যুসনদ বুঝিয়ে দেয়া হবে। তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, জোর করে স্বাক্ষর নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”

আর প্রতিবেদনে নাম-বয়স ভুল আসার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “নাম নিয়ে বিভ্রান্তি হয়েছে সেটাও তারা অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরকে বলবে। আমি এখনই তাকে বলে রাখছি। ওই রিপোর্টটাও সঙ্গে নিয়ে আসবে। কেন এটা এমন হল তা দেখার বিষয় আছে। এইটা যদি তার রিপোর্ট না হয়ে থাকে তাহলে তো আরেক ঝামেলা হবে।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026628971099854