করোনা আক্রান্ত হয়ে ভেন্টিলেটরে যাওয়া রোগীদের প্রায় সবাই মারা গিয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন,করোনা চিকিৎসায় ভেন্টিলেটরের কোনও প্রয়োজন নেই। দেশের ৪০০ ভেন্টিলেটরের মধ্যে সাড়ে তিনশো ব্যবহারই হয়নি বলেও তিনি জানান। এদিকে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ায় কোনও দুর্নীতি হয়নি বলেও মন্ত্রী দাবি করেন। আরও বলেন, দেশের কোটি কোটি মানুষকে করোনা পরীক্ষা করানো সম্ভব না,এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে আইন মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক খবর দেয়ার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তা না হলে তরুণ, বয়স্ক, চিকিৎসকসহ তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়বেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার ওষুধ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলেও উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দাবি করেছেন সরকার কাজ করেছে বলেই মৃত্যুর হার কম। চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “পিপিই কীভাবে পরতে হবে এবং খুলতে হবে এই বিষয়টি জানা না থাকার কারণেই তারা আক্রান্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এসব বক্তব্যের আগে সংসদে বিরোধী দলের একাধিক সাংসদ স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা তুলে ধরেন। তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন। কেউ কেউ মন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ারও দাবি তোলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা তুলে ধরে বলেন। তিনি বলেন
‘প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টা খবর রাখছেন। কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তো একবার ঢাকা মেডিকেলে, একবার সোহরাওয়ার্দী, একবার জাতীয় হৃদ্রোগ হাসপাতালে কিংবা পিজিতে ভিজিট করা উচিত ছিল। আমি সেখানে এমনিতেই গেছি। ডাক্তাররা বলছেন, এখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এলে আমরা অনুপ্রাণিত হতাম।’
বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন,‘নমুনা পরীক্ষার ২৩ শতাংশ পজিটিভ আসছে। তাও ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ দিন পর। এতে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।’ তিনি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বাড়ানোর দাবি জানান।
জাতীয় পার্টির সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, বেসরকারি অনেক হাসপাতালে ডাক্তাররা ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। বেতন পান ২০ হাজার টাকা। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর লাগাম টানতে না পারলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা দাঁড় করানো যাবে না।
জাপার আরেক সাংসদ পীর ফজলুর রহমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি তুলে ধরতে গিয়ে বলেন,'ডাক্তারদের ২০ কোটি টাকার খাওয়ার বিল এসেছে। সেখানে একটি কলার দাম ২ হাজার টাকা। একটা ডিমের দাম এক হাজার টাকা। রুটির এক স্লাইসের দাম তিন হাজার টাকা। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নাকি মিনা কার্টুনে পরিণত হয়েছে। টিয়া পাখি দ্বারা চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’
সুনামগঞ্জে নিজ নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের বরাত দিয়ে পীর ফজলুর রহমান বলেন, গ্রামের বাজারের লোকজন তাকে সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার কথা তোলার অনুরোধ করেছেন। গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব মতিয়া চৌধুরীর হাতে দেওয়ার কথা বলেছেন।’