করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভোলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এডিপিও) খলিলুর রহমান এবং ঢাকা মহানগরী প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খয়বর আলী মারা গেছেন। করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেলেন তিন প্রাথমিক শিক্ষক। মঙ্গলবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী। যাদের মধ্যে ৩০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) ওয়েবসাইটে দেয়া ‘করোনা আপডেট’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেইন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একজন প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর খবরটি জানান।
তিনি লিখেছেন, ‘ভোলা জেলার এডিপিও খলিলুর রহমান এবং ঢাকা মহানগরী প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খয়বর আলী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত কয়েকদিন ধরেই সোস্যাল মিডিয়ায় খয়বর আলীর অসুস্থতার কথা প্রচারিত হয়েছে। মহাপরিচালক ও ঢাকার ডিপিইওকে চিকিৎসার বিষয়ে সহায়তা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আজ সকালে ডিপিইওর এসএমএস পেলাম যে প্রিয় খয়বর না- ফেরার দেশে চলে গেছেন।’ দুই সহকর্মীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন সচিব।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. ফসিহউল্লাাহ জানান, এডিপিও খলিলুর রহমান মঙ্গলবার সকালে বরিশালে এবং খয়বর আলী ভোররাত সাড়ে তিনটায় ঢাকায় মারা যান। এডিপিও খলিলুর রহমানের বিষয়ে ডিজি তিনি জানান, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর খলিলুর রহমান বরিশালে তার চিকিৎসক ছেলের তত্ত্বাবধানে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এছাড়া আজ আরও একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক করোনা সংক্রমণে মারা গেছেন বলে জানান মহাপরিচালক।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সারাদেশে তাদের অধীন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে নেয়া ‘করোনা আপডেট’ তুলে ধরে যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩৩ জন সুস্থ হয়েছেন। ৩০ জনের মুমূর্ষু আশঙ্কাজনক। সোমবার একদিনে ২৫ জন করোনা শনাক্ত হলেও এদিন একজনও সুস্থ হয়নি।
মহাপরিচালক জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের তথ্য সংগ্রহ করে ডিপিই’র ওয়েবসাইটে প্রতিদিন তথ্য আপডেট করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৬৬ জন শিক্ষক, ২৪ জন কর্মকর্তা, নয়জন কর্মচারী ও ৯ জন শিক্ষার্থী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক যুগ্ম-সচিব মো. জোবায়দুর রহমান কোভিড-১৯ পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
যেসব শিক্ষক কোভিড-১৯ আক্রান্ত তাদের বেশিরভাগই নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন কয়েকজন। মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তার তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য সার্বিক সহায়তা দিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান মহামারী যতদিন স্বাভাবিক না হবে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হবে। পাশাপাশি দেশের যেখানেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আক্রান্ত হবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে। আক্রান্তদের সুস্থতায় তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
এদিকে ছুটিকালীন প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের করণীয় ঠিক করা হয়েছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের করণীয় হিসেবে তিনটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব ধরনের সরকারি/ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকবে। এ সময় নিজেদের এবং অন্যদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে সময়ে সময়ে জারিকৃত নির্দেশনা ও অনুশাসনসমূহ মেনে চলতে হবে। শিক্ষার্থীদের বাসস্থানে অবস্থানের বিষয়টি অভিভাবকরা নিশ্চিত করবেন এবং স্থানীয় প্রশাসন তা নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ করবেন। এ সময়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষার্থীদের যাতে বাসস্থানে অবস্থান করে নিজ নিজ পাঠ্যবই অধ্যয়ন করে সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।