করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা ও টেলিভিশনে পাঠদান

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। সকলে এ মহামারির কবল থেকে পরিত্রাণ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ধনী, দরিদ্র, রাজা-প্রজা সকলে যেন মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কিত। সমগ্র বিশ্বের জনগণ আজ গৃহবন্দি। জনজীবন থমকে দাঁড়িয়েছে। সীমাহীন অভাবের মাঝে আজকে আমাদের দেশের গরিব শ্রমজীবী জনগণ। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে সরকারসহ বিত্তশালীরা।

বাংলাদেশের জনগণ আরেকটি মহাদুর্যোগ পার করেছিল ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হয়েছে ত্রিশ লাখ বাঙালি। যুদ্ধ শেষে দেশ তখন ধ্বংস স্তুপের দাঁড়িয়ে। গ্রাম-শহর আগুনে পুড়ে ছাই। ব্যাংকগুলো ছিল শূন্য। ভয়াবহ অভাবের দৃশ্য সে সময় স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছিল।

সেদিনের বাংলাদেশ সরকারের ভাবনার সাথে আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাথে সাদৃশ্য বিদ্যমান। সেদিন ভয়াবহ অভাবের মাঝে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেন। তিনি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করলেন, এ দেশের খেটে খাওয়া তৃণমূলের মানুষের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি না হলে সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন সম্ভব নয়। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা মূল্যে বইসহ শিক্ষাক্ষেত্রে অসংখ্য অবদান রেখে দেশ-বিদেশে শিক্ষাবান্ধব সরকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

করোনা ভাইরাসের মহাদুর্যোগের মাঝেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ক্ষতি দূর করার ভাবনা তাঁর মাঝে দেখা যায়। বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁরও এমন শিক্ষা ভাবনা থাকলে নিশ্চিত দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে।

সারা বিশ্বের সরকার প্রধানরা যখন করোনা ভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত, তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের টিভির মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থার উদ্যোগ সমাদৃত হয়েছে। বর্তমানে সরকারের ভাবনা- বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো একদিন করোনা ভাইরাসকেও পরাজিত করবে।

শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আগামী প্রজন্মের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এর ফলে পরবর্তী সময়ে দেশ আরেকটি দীর্ঘ সময়ের দুর্যোগ বাঙালি জাতিকে আক্রান্ত করবে। দূর-দৃষ্টিসম্পন্ন মহান নেতার কন্যা শেখ হাসিনার ভাবনার অভূতপূর্ব  মিল। এ পাঠদানের ফলে বিশেষ করে শুধু শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে না, পাশাপাশি প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক, শিক্ষিত অভিভাবকেরাও ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এত প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে তাদের ভ্রান্ত ধারণা দূর হবে।

বঙ্গবন্ধুর ছায়া আজ শেখ হাসিনার মাঝে খুঁজে পাচ্ছি বলে বাঙালি হিসেবে গর্বিত। এ পাঠদানে সব চেয়ে। এ পাঠদানে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হবে তৃণমূলের শিক্ষার্থীরা। যাদের বাড়িতে টেলিভিশন নেই। তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার দায়িত্ব শিক্ষক সমাজের।

প্রাথমিকের ছাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই অনেকটা পাঠের বিষয়বস্তু আয়ত্ব করতে পারবে। প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া পাঠদান দূরহ। তাই প্রাথমিক শিক্ষকদের দেশ ও জনগণের ওপর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। এ দায়িত্ব পালনে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রাথমিক শিক্ষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষায় বিরাজমান ঝুলে থাকা শিক্ষক সংকট, বেতন বৈষম্য ও অভিন্ন সময়সূচি বাস্তবায়ন করে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি মমত্ববোধের অবস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বাস্তবে সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে উদাসীন। তাদের সন্তানরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে না বলে তাদের কাজ-কর্ম অনেকটা বিমাতা সুলভ। তাই তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ- বৈষম্যহীন শিক্ষায় বিশ্বাসী নয়।

এ প্রজন্মের কর্মকর্তা, শিক্ষক তাদের বেশিরভাগ জন্ম বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে। তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পরিপন্থি ভাবধারার ইতিহাস পড়ে বেড়ে উঠেছে। তাদের ঐ মানসিকতা থেকে বের করে আনার কঠিন কাজটি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ।

প্রাথমিক শিক্ষায় বদলি বাণিজ্য, দুর্নীতি ও অনিয়ম শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। সরকারি আদেশে কিছু পেতে হলে টাকা খরচ করে নিতে হয়। গুরু-শিষ্যের এ ভাবের আদান-প্রদান বন্ধ করতে হবে। সকলের মানসিকতা থেকে এ ভাবনা দূর করা প্রয়োজন।

প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনগুলোর করোনা ভাইরাসে মহান উদ্যোগে সহযোগিতা করার জন্য শিক্ষক সমাজসহ দেশবাসীর পক্ষ থেকে প্রাথমিকের মহাপরিচালক মো. ফসিহউল্যাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের শত শত অভাব অনটনের মাঝে অভাবনীয় সহযোগিতার জন্য প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- দুর্যোগে প্রাথমিক পরিবারের সহযোগিতায় অর্থ প্রদানের সময় শিক্ষক নেতাদেরকে উপস্থিত থাকার সুযোগ নিশ্চিত করুন। এতে দেশের দরিদ্র, খেটে খাওয়া জনগণের প্রতি তাদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি তাদের প্রত্যাশিত ১০ ও ১১ গ্রেডের বেতনের ভাবনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে পারবে। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য কন্যার শিক্ষা ভাবনা এগিয়ে নেয়ার জন্য সকলে একযোগে কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ করোনা ভাইরাস মুক্ত হোক। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। এ দৃঢ় মনোভাব রইল।

মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033299922943115