করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে শ্রমিকদের কাজের সন্ধানে জমায়েত

গাজীপুর প্রতিনিধি |

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারা দেশে সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্তে¡ও প্রতিদিন ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় মাওনা উড়াল সেতুর নিচে কাজের সন্ধানে জমায়েত হন কয়েকশ দিনমজুর। বুধবার (১ এপ্রিল) ভোরেও একই চিত্র দেখা গেছে।

কাজের আশায় মাওনা উড়াল সেতুর নিচে দিনমজুরেরা | গাজীপুর প্রতিনিধি

জানা যায়, লকডাউনে থাকায় গত কয়েকদিন ধরে কেউ এখন আর দিনমজুরদের কাজে নিতে সেখানে যান না। কাজ নেই, খাবার নেই, এমন পরিবারের জন্য এ করোনাকাল কত যে কষ্টের তা না দেখে বুঝার উপায় নেই। তাই তো ক্ষুধার কাছে করোনার আঘাতের সকল ভয় তুচ্ছ করে কাজের সন্ধানে তারা এখনও প্রতিদিন জমায়েত হ”্ছনে। তবে আশায় আশায় দিন কাটিয়ে শূন্য হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাদের।

বুধবার সকালে মাওনা ব্রীজের নিজে কাজের সন্ধানে অপেক্ষা করছিলেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের আরজিনা আক্তার (৪৫)। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন বছর আগে দুই সন্তানকে তার ভাইয়ের বাড়িতে রেখে চলে আসেন গাজীপুরের শ্রীপুরে। প্রতিদিন তিনশ টাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছিলেন তিনি। সকালে উড়াল সড়কের নিচে আসলেই কাজ মিলে যেত। করোনার কারণে গত কয়েকদিন ধরে তিনিসহ শতাধিক শ্রমিক সকাল থেকে বসে থাকলেও কাজের জন্য কেউ নিতে আসে না তাদের। প্রতি সপ্তাহেই বাড়িতে সন্তানদের জন্য টাকা পাঠাতে হয়, এখন কাজ না থাকায় তিনি টাকা পাঠাতে পারছেন না। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কেটে যাচ্ছে তার। এমন অবস্থায় গত কয়েক দিনেও খোঁজ নেয়নি কেউ।

পঞ্চাশোর্ধ আজিজুল হক বলেন, শিল্প সমৃদ্ধ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় হাজারো দিনমজুর কাজ করেন। যাদের অধিকাংশই পাশ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা। বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া থেকে তারা শ্রম বিক্রি করে থাকেন। তবে হঠাৎ করে যেন তাদের জীবনের ছন্দ পতন ঘটেছে। ‘কাজ নেই তো ঘরে খাবার নেই’। তাই সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই কাজের সন্ধানে উড়াল সেতুর নিচে জমায়েত হচ্ছেন। তবে কাজ না থাকায় সবচেয়ে দুর্দিন এখন তাদের।

দিনমজুর মুমিনা খাতুন জানান, সব বন্ধ হওয়ার পর সবাই দেশে চলে গেছে। দেশে সব হারাইয়া এখানে আসলাম। এখন কোথায় যা? ঘরে খাবার নেই। গতকাল ত্রাণের খবরে বিভিন্ন জায়গায় ছুটলাম। কিন্তু স্থানীয় নই বলে সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে রোগ ছ্ড়াাই আমরা না খেয়েই যে মারা যাব।

কাজ না পেয়ে অনেকটা হতাশায় আছেন দিন মজুর নাজিমউদ্দিন। তিনি জানান, সবাই সবার খবর রাখলেও আমাদের ছিন্নমূল মানুষদের কেউ দেখে না। তিন বেলার স্থলে এখন এক বেলা খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। কেউ পেটে ভাতে কাজে নিলেও এখন চলে যেতাম। সে সুযোগও মিলছে না।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ সামছুল আরেফিনের জানান, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ দেয়া হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে। তারা তাদের নিজেদের এলাকায় বণ্টন করে থাকেন। ছিন্নমূল মানুষ বরাদ্দ পেতে হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004857063293457