করোনা : সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় বাংলাদেশে যেসব প্রস্তুতি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন শীত মৌসুমে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ বা 'সেকেন্ড ওয়েভের' আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা - এটা বিবেচনায় নিয়েই দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু কি ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে সেটি পরিষ্কার করে বলেননি তিনি। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে  এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হলে তার কী কী করণীয় সেই প্রস্তুতি এখনই নেওয়া হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাত করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় এরই মধ্যে সক্ষমতা দেখিয়েছে"। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগেই বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় আর লকডাউন কিংবা সাধারণ ছুটির দিকে যাবেনা সরকার।

তাহলে কী ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ?

কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েকদিন আগেই এ সম্পর্কিত কিছু পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে এবং বুধবারও ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে এসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এখন পর্যন্ত সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় যেসব কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো হলো:

•করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের বাজারে নিয়ে আসা।

•ঠাণ্ডাজনিত রোগ বা ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা, ভ্যাকসিন ও ঔষধের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা।
•করোনা চিকিৎসায় যে ঔষধগুলোর দরকার হয় আগেই সেগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা।

করোনা ভাইরাসের সতর্কতার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে


•পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো এবং সে লক্ষ্যেই এন্টিজেন টেস্টের নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই অনুমোদন করা হয়েছে।

•প্রতিটি জেলায় একাধিক পরীক্ষাগারে আরটি পিসিআর মেশিনে পরীক্ষা নিশ্চিত করা।

•যেসব হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিলো সেগুলোকে প্রয়োজনে আবারো কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

•টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা আরও জোরদার করা এবং এ সংক্রান্ত ঔষধের যেন কোনো সংকট না থাকে সেটা নিশ্চিত করা হবে।

•জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও প্রচার যাতে করে মানুষ পরীক্ষাকে অবহেলা না করে ও পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই হাসপাতালে আসতে উদ্বুদ্ধ হয়।

•স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোরতা প্রদর্শন। এর অংশ হিসেবে মাস্ক ছাড়া বাইরে দেখা গেলে জরিমানা বা শাস্তির ব্যবস্থা করা হতে পারে।

• শীতকালে পিকনিক বা এ ধরণের আয়োজনে নিষেধাজ্ঞার চিন্তা,সতর্কতা আসবে বিয়ের আয়োজনেও।

১৫ দিনে কর্মপরিকল্পনা
একই সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন করোনাভাইরাসে টিকা নিয়ে নয়টি কোম্পানির পরীক্ষা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে যাতের অন্তত পাঁচটির সাথে বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক প্রস্তুতিসহ সব কার্যক্রম চূড়ান্ত করে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মঙ্গলবার আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার পর বলেছেন প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে এজন্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে পনেরদিন সময় দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২২শে সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আব্দুল মান্নান বলেছিলেন, শীতজনিত রোগের চিকিৎসার ঔষধ এবং ভ্যাকসিনের মজুদ ও সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

"শীতের সময় সাধারণত মানুষের যেসব সমস্যা দেখা দেয় সেটা ঠাণ্ডাজনিত। যেমন নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ নানা রোগ যা শিশু এবং বয়স্কসহ সকল বয়সের মানুষের হয়ে থাকে। তার জন্য একটা প্রস্তুতির ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাদের সচেতন করা হয়েছে যাতে ঔষধ বিশেষ করে ভ্যাকসিনের সংকট না হয়। আমরা যেন যথাসময়ে তা মজুদ করতে পারি বা আনতে পারি এবং হাসপাতালে সরবরাহ করতে পারি। আমরা সাথে সাথেই কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশনা প্রদান করেছি।"

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা: মুশতাক হোসেন বলছেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলা নিয়ে বেশ ভালো একটা অভিজ্ঞতা সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার হয়েছে।

"রোগী সামলানো, ভাইরাস পরীক্ষা সহ প্রস্তুতির একটি বড় অভিজ্ঞতা হয়েছে যার ভিত্তিতে কাঠামোও তৈরি হয়েছে। এমনকি ভাইরাসের আঘাতের পর একটা নির্দিষ্ট সময় পরেই বেশিরভাগ রোগী ভালো হন কিংবা পরেও কিছু চিকিৎসার দরকার হয় এসব বিষয়ে অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে"।

তিনি বলেন, ফিল্ড হাসপাতাল হয়েছে অনেকগুলো যেগুলো সব হয়তো সেভাবে কাজে লাগেনি কিন্তু সেগুলো আছে। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ হয়েছে এবং মানুষেরও আস্থা এসেছে।

"এগুলোর ভিত্তিতেই সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় সরকার পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে এরপরেও সংক্রমণ প্রতিরোধে কমিউনিটি ভিত্তিক বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে এখনি দৃষ্টি দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি," বলছিলেন মিস্টার হোসেন।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫০৪৪ জন, আর মোট আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে মোট এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ থেকে মোট সুস্থ মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ৬২ হাজার ৯৫৩ জন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029411315917969