করোনা : ২৫০০ মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণে বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস। তারা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণের শেষ ধাপে পৌঁছেছেন গত (২০১৯) নভেম্বরে, অংশ নিয়ে ছিলেন এমবিবিএস চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায়। ওই পরীক্ষায় তাদের মধ্যে কেউ এক কেউবা দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে ছিটকে পড়েছেন মূলস্রোত থেকে। কিন্তু  অকৃতকার্য বিষয়গুলোর সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা আগামী নভেম্বরের আগে হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী।

দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমবিবিএস শেষ পেশাগত পরীক্ষায় মেডিসিন, সার্জারি  ও গাইনি এ তিন বিষয়ের ওপর লিখিত, মৌখিক, ক্লিনিক্যাল ও ওএসপিই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে  আলাদা আলাদাভাবে পাস করতে হয়। এ পরীক্ষাগুলোতে ৬০ শতাংশের নিচে নম্বর পেলে তাদের অকৃতকার্য বলে গণ্য করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ নম্বর পেয়েও পাস করতে পারেনি অনেকেই।

জানা যায়, সরকারি ৩৬ টি ও বেসরকারি ৬৯টি মেডিক্যালে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে। আর ফল প্রকাশ হয় চলতি বছরের মার্চে। পরীক্ষায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ২১১ শিক্ষার্থী অংশ নিলেও তাদের মধ্যে ৬৮ জন অকৃতকার্য হয়েছেন। খুলনা মেডিক্যাল কলেজের ১৪২ জনের মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছেন ৪২ জন। দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজের ১৫০ জনের মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছেন ৪৮ জন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ২০৪ জনের অকৃতকার্য হয়েছেন ৩৯ জন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়,  শতকরা ২৫ থেকে ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। সেই হিসাবে প্রায় ২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন।

দেশে ১০৫ টি সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। এ মেডিক্যাল কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজও সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ রাখা হয়েছে।

রাজশাহী মেডিক্যার কলেজের শিক্ষার্থী শাকিব সালমান সাইফুল্লাহ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেডিক্যাল কলেজসহ আরও বেশ কয়েকটি কলেজের মোট ২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী এমবিবিএস চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রায় ৬৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। সঠিক সময়ে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা হয়ে গেলে দুর্যোগপূর্ণ সময়ে রাজশাহী বিভাগে ৬৫০ জনসহ ২ হাজারের অধিক চিকিৎসক দেশের কাজে নিয়োজিত করতে পারতো সরকার।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান বলেন, হাসপাতাল খোলা আছে। কিন্তু মেডিক্যার কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ আছে। শিক্ষকরা নিয়মিত রোগী দেখছেন। আমাদের বন্ধুরা ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু দেশের ক্লান্তিলগ্নে আমাদের গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে।

খুলনা মেডিক্যার কলেজের শিক্ষার্থী অনিক দত্ত বলেন, আমরা শেষ পেশাগত পরীক্ষা দিয়েছি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে। ফল প্রকাশ হয়েছে চলতি বছরের মার্চে। যারা অকৃতকার্য হয়েছেন তাদের পরীক্ষা মে মাসে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হচ্ছে না।

তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থীর এমবিবিএস পাস করতেই ৬ বছর লেগে যায়। এর মধ্যে কেউ ফেল করলে আরও ছয় মাস লাগে। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের পরীক্ষা কবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফাইনাল প্রফ সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষাটি নিছক একটা সুযোগই নয়। এর ওপর নির্ভর করে বিসিএস, পোস্ট গ্রাজুয়েশন সহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা।

অনেকেই মনে করছেন, বিগত বছরগুলোর ফাইনাল প্রফেসর সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার যোগদানের তারিখ অনুসারে তাদের ট্রেনিং সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সামনেই ইন্টার্ন সঙ্কট দেখা দেবে প্রকট। এরই মধ্যে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

রাজশাহী মেডিক্যার কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী বলেন, এমবিবিএস ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায় যারা অকৃতকার্য হয়েছেন নিয়ম অনুসারে মে মাসে তাদের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকারি নির্দেশনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ পরীক্ষা যথাসময়ে হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু হওয়ার পর নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে কবে পরীক্ষা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার এক মাসের মধ্যে পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী আসমাউল হুসনা পৃথী বলেন, মে মাসে পরীক্ষা হয় প্রতি বছর। কিন্তু করোনার কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই পরীক্ষা কবে হবে আমরা কিছু জানিনা। এভাবে আমাদের জীবন থেকে সময় চলে গেলে অনেক পিছিয়ে যাবো। এমনিতেই ছয় মাস পিছিয়ে গেছি। বন্ধের কারণে নভেম্বর বা তার পরে পরীক্ষা হলে আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো। তাই আমরা চাই ঈদের পরেই পরীক্ষায় বসতে। দেশের এ পরিস্থিতিতে যেখানে চিকিৎসক সঙ্কট, সেখানে আমরা পাস করে বের হয়ে এলেই চিকিৎসক  হিসেবে দেশের সেবা করতে পারবো।

ঢাকা মেডিক্যার কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ সঙ্কটময় মুহূর্তে হাসপাতালে সব কার্যক্রম চলছে। মেডিক্যার কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ আছে। ঈদের পরে সময় সুযোগ করে ক্লাসও চালু করা হবে।

তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষা হয়েছিল গত নভেম্বরে। অকৃতকার্যদের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা মে মাসে হওয়ার কথা থাকলেও সঠিক সময়ে হচ্ছে না। এ পরীক্ষা ঈদের পরে ক্লাস শুরু হলে জুলাই মাসে পরিকল্পনা আছে। এ বিষয়টা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমরা আশাবাদী জুলাই মাসের মধ্যেই পরীক্ষা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059380531311035