অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আহ্বান স্থগিতের আবদার করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতি। গত ৮ এপ্রিল ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর কাছে লেখা চিঠিতে সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির এক চিঠিতে এমন আবদার করেন।
চিঠিতে দাবি করা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে ইউজিসির আহ্বান-সংক্রান্ত সংবাদ গত ৬ এপ্রিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। চলমান দুর্যোগের সময় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
শেখ কবির দাবি করেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের বাসায় অবস্থান করে অনলাইনে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার নির্দেশ দেয়। নির্দেশনা অনুসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি অনলাইনে শিক্ষা সহায়তার জন্য আইটি সহায়ক সেল গঠন করে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য উপযোগী।
অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়ার অধিকাংশ কার্যক্রম অনলাইনে করে। তাছাড়া পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের উন্নত প্রযুক্তি স্থাপন করেছে। এভাবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়ম নেই। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে সেমিস্টার সূচি অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে সেশনজট ও শিক্ষা ব্যয় বাড়বে। ভর্তি কার্যক্রম ব্যাহত হলে নতুন বিশ্ববিদ্যালগুলো বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে জনবলের বেতন-ভাতা প্রদান ও চাকরি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
চিঠিতে ইউজিসির অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ রাখা-সংক্রান্ত আহ্বান আপাতত স্থগিত করে সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা ও বলা হয়।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠার প্রায় তিন দশকেও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদবিক্রি, বিদেশে টাকা পাচার, স্বামী-স্ত্রী-সন্তান, বেয়াই বেয়াইন ভিসি-প্রোভিসি-কোষাধ্যক্ষ। আবার ছেলেমেয়ে নাতিনাতনিরাই ট্রাস্টি থাকার অভিযোগ রয়েছে। শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হাতেগোণা কয়েকটি বাদে সবারই পড়াশোনার মান প্রশ্নবিদ্ধ এমনকি সনদ বিক্রিরও অভিযোগ প্রমাণিত।
করোনার ছুটিতে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা ছাড়াই সেমিষ্টারে উন্নীত করা এবং কোনও বাছবিচার ছাড়াই ভর্তি করাচ্ছিল। এমন খবর পেয়ে ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় ইউজিসি। মানহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কয়েকটি বেসরকারি টিভি ও প্রিন্ট পত্রিকায় বছরে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেয়। তাই তারা বিতর্কিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে ইনিয়েবিনিয়ে সাফাই গায়। মন্ত্রণালয়ে দূতিয়ালি করে।
এদিকে গত ৮ এপ্রিল সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সারাদেশে উচ্চশিক্ষার সংকট কতটা তীব্র তা অনেকেই জানেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পায়। এদিকে সরকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোকে অকেজো ও সেশনজটের মহারণ্যে পরিণত করে রেখেছে। ফলে একরকম বাধ্য হয়েই লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রতিবছর একটা বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়। হাতে গোনা কয়েকটির কথা বাদ দিলে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নামেমাত্র শিক্ষা দানের মাধ্যমে সার্টিফিকেট বিতরণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যে কোনো প্রকারে মুনাফালাভই তাদের উদ্দেশ্য। এই সময়ে সামার সেমিস্টারে ভর্তি নেয়ার বর্তমান সিদ্ধান্ত তারই ধারাবাহিকতা। সারাদেশে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সবকিছু যখন বন্ধ আছে, ঠিক এই সময়ে এই দুটি সিদ্ধান্তই অমানবিক, অনৈতিক ও স্বেচ্ছাচারিতামূলক।
তাই, বিবৃতিতে অবিলম্বে পরীক্ষা ছাড়া পরবর্তী সেমিস্টারে উত্তীর্ণ করা ও ভর্তি প্রক্রিয়ার নামে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধের জন্য সরকারি পদক্ষেপের সমর্থন জানিয়েছেন তারা।