কোভিড-১৯ মোকাবেলায় অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ আছে। অনেক ল্যাবরেটরি কিন্তু বিজ্ঞানীরা তো চুপচাপ বসে থাকতে পারেন না। অনেক বিজ্ঞানী বই লিখতে শুরু করেছেন। অনেকে তাদের পরীক্ষার যন্ত্রপাতি ঘরে নিয়ে এসেছেন। নিজের বাড়ির কিচেন, লন্ড্রি রুম এমনকি বাথরুমকেও কেউ কেউ ল্যাবরেটরি বানিয়ে ফেলেছেন।
স্টোর রুমে স্পেকট্রোমেট্রি
ফুড-ডেটা কোম্পানি টিকঅরিজিনের গবেষকরা ‘ল্যাব অ্যাট হোম’ নামে রীতিমতো কাণ্ড বাধিয়ে ফেলেছেন। সাধারণ সময়ে কোম্পানিটি বোস্ট ও লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে বিভিন্ন ফল সংগ্রহ করে প্রত্যেকটিতে কী পরিমাণ ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ আছে তা অপটিকাল স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করে নির্ণয় করে। এভাবে তারা প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন দোকান থেকে পাওয়া নমুনা ফলে প্রাপ্ত ভিটামিন ও পুষ্টিগুণের মান অনলাইনে ক্রেতাদের জন্য সরবরাহ করে। খাদ্যের গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখতেই এ ব্যবস্থা।
এই মহামারীর সময়েও টিকঅরিজিন তাদের সেবা বন্ধ করেনি। তাদের স্পেকট্রোমিটারগুলো এমনভাবে তৈরি যেন সেগুলো মাঠে, ফলবাগানে নিয়েও ব্যবহার করা যায়। কোম্পানিটির বিজ্ঞানীরা এখন ঘরে বসেই স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করে ফলের গুণগত মান নির্ণয় করছেন।
থার্মোসাইলার
স্টিভেন হেনকফ এপিজেনেটিকস বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারে। তিনি ও তার দল একটি কাজ প্রায় শেষ করে এনেছিলেন—অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে ক্রোমাটিন উপাদান প্রোফাইল করা। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র কোনো নমুনা বা কোষে জিনের প্রকাশভঙ্গির পরিবর্তন উন্মোচিত হবে। কিন্তু কোভিড-১৯ হেনকফের কাজে শেষ মুহূর্তে বাগড়া দিয়েছে। ল্যাবরেটরিতে ডেটা সংগ্রহ আটকে যায়। হেনকফ তখন ল্যাব থেকে কিছু যন্ত্রপাতি নিজের বাসায় নিয়ে যান। উদ্দেশ্য ছিল ল্যাবরেটরির বাইরে সেগুলো কাজ করে কিনা তা দেখা। হেনকফের বাসার লন্ড্রিরুম হয়ে যায় তার নতুন ল্যাবরেটরি।
হেনকফ বলেন, ‘এটি বিপজ্জনক কিছু না। আমি ভালোভাবে চিন্তা করে দেখেছি। আমি চেষ্টা করে দেখেছি যে বাসায় বসে কিছু ডেটা উদ্ধার করা যায় কিনা। এবং শেষমেশ দেখলাম ব্যাপারটা কাজ করছে।’
হেনকফ ১০ বছর পুরনো একটি পিসিআর মেশিন এবং একটি মাইক্রোসেন্ট্রিফিউজ ল্যাব থেকে বাসায় নিয়ে আসেন। কাপড় আয়রন করার টেবিলেই সেগুলো বসানো হয়। কাজও শুরু হয় এবং হেনকফ সময়মতো তার গবেষণা প্রতিবেদন দাখিল করেন।
‘আমি কাজটা বাসায় শেষ করে দেখাতে চেয়েছি যে সীমিত সম্পদ নিয়েও অনেক কাজ করা সম্ভব। খুব অল্প খরচে আমি কাজ শেষ করেছি।’
পোকামাকড়ের বাড়ি
হান্নাহ বারক নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কীটতত্ত্ববিদ। তার গবেষণাগারে অনেক পোকামাকড় আছে এবং সেগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত যত্ন করতে হয়। কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ায় হান্নাহ বা তার সহযোগীদের পক্ষে নিজেদের ল্যাবে যাওয়াটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
তাই হান্নাহ ও তার ল্যাব ম্যানেজার প্রত্যেকে ল্যাবে থাকা পোকামাকড়ের বসতিগুলোর দুটো করে যার যার বাসায় নিয়ে যান। হান্নাহ সেগুলোকে তার বাসার একটি অতিরিক্ত বাথরুমে রাখেন। ড্রোসেফিলা ও ক্যাটারপিলারদের আবাস হয় বাথরুমে। এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখাই ছিল গবেষক হান্নাহর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষাজীবনে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে তাই হান্নাহ এসব পোকামাকড় বাঁচিয়ে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কারণ এগুলো ছাড়া শিক্ষার্থীদের গবেষণা বন্ধ হয়ে যাবে।
সূত্র: দ্য সায়েন্টিস্ট