করোনা ভাইরাস সংক্রমনরোধে অফিস-আদালতসহ সারাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি চলছে। করোনার হামলায় অন্যান্য সবার মতো আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন সারাদেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় টিউশন ফি আদায় করতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানগুলো। অপরদিকে প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ। অন্যান্যভাবেও যারা কিছু বাড়তি আয় করতেন তাও বন্ধ রয়েছে। কিন্তু খরচ কমেনি। এ অবস্থায় ঋণগ্রস্থ এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা বেতনের বিপরীতের নেয়া কনজ্যুমার ঋণের কিস্তি আদায় সাময়িক স্থগিত রাখার দাবি করেছেন। তাদের দাবি, করোনার ভয়বাহ পরিস্থিতির কারনে তাদের ঋণের কিস্তি সাময়িক স্থগিত রাখা হোক। সুদ হিসেব করাও বন্ধ রাখা হোক। তাছাড়া সরকারি আদেশ রয়েছে যে কোনও ঋণের ৯ শতাংশ সুদ নেয়ার কিন্তু ব্যাংকগুলো এমপিও শিক্ষকদের বেতনের বিপরীতে নেয়া কনজুমার ঋণের সুদ ১৩ শতাংশ নিচ্ছে।
গত ১৫ দিনে দৈনিক শিক্ষার সম্পাদক বরাবর কয়েক হাজার এসএমএস এসেছে ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধের দাবির পক্ষে। নাম না প্রকাশের শর্তে তারা অনেক কষ্টের কথা বলেছেন। শিক্ষকরা জানান, খুব খুব জরুরী দরকারে বেতনের বিপরীতে লোন নিয়েছেন তারা। ইমেইল ও ইনবক্সেওে তথ্য এসেছে লোনের। মাার্চের এমপিওর টাকা ব্যাংকে জমা হওয়ামাত্রই কিস্তি কেটে রেখেছে ব্যাংকগুলো। শিক্ষকদের দাবি একটাই কিস্তি আদায় কয়েকমাস স্থগিত থাকুক।
ঋণগ্রস্ত শিক্ষকরা দৈনিকশিক্ষাডটকমকে জানান, এতদিন ঋণের বোঝা মাথায় রেখে শিক্ষকতার পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু কাজ করে পরিবার চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বতর্মানে করোনা পরিস্থিতির জন্য ঘর থেকে বের হতে না পারার অতিরিক্ত আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শেষে যে টাকা থাকে তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে চলা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা আগামী মাস থেকে এই আপদকালীন সময়ে বেতনের বিপরীতে পরিশোধ যোগ্য ঋনের কিস্তি সাময়িক স্থগিত করার আবেদন জানাচ্ছি। এছাড়া এই সময়ে যেন সুদও হিসেব না কষে।
শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানান, বেতনের বিপরীতে ৪ থকে ৫ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছেন। বেতন থেকে এই ঋণের কিস্তি কেটে ৬-৭হাজার টাকার মত তুলতে পারেন। সামনের দিনগুলোয় এই টাকায় এক মাস চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তারা আরও জানান, এতদিন শিক্ষকতার পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত আয়ের পথ ছিল। কিন্তু এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে ঘরে বসে থাকায় সব আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই তারা কিস্তি আদায় স্থগিত আদেশ জারির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সারাদেশে প্রায় ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাঁদের বড় অংশই বেতনের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।
শুভংকর নামের একজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাকে জানান, “আমার মার্চ/২০২০ মাসের এমপিওর টাকা ব্যাংকে আসামাত্র লোনের কিস্তির টাকা সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাথে সাথে কেটে রেখেছেন। প্রশ্ন হলো সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী যদি সকল এনজিও ও বে-সরকারী ব্যাংক লোনের কিস্তির টাকা উত্তোলন বন্ধ রাখতে পারে, তবে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কেন, তা পারবেন না ? এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
দৈনিক শিক্ষার নেত্রকোণার পূর্বধলা প্রতিনিধি জানান, অগ্রণী ব্যাংক পূর্বধলা শাখার দেয়া তথ্যমতে উপজেলায় স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা মিলিয়ে ৫৭টি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ হাজার শিক্ষক কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০০ জন নিজ বেতনের বিপরীতে পারিবারিক প্রয়োজনে বিভিন্ন অংকের টাকা ঋণ নিয়েছেন। ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ঋণের কিস্তির টাকা শিক্ষকদের এমপিও নিজ অ্যাকাউন্টে ঢোকার সাথে সাথেই কেটে নেয়া হয়।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি পূর্বধলা উপজেলা শাখার সভাপতি সুধাংশু শেখর তালুকদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বর্তমান আপদকালীন সময়ে সরকার বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই, সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের বেতনের বিপরীতে নেয়া ঋণের কিস্তির টাকা না কেটে নিয়ে আগামী জুন মাস পর্যন্ত স্থগিত রাখার আবেদন করছি। এ ব্যপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে সোনালী, অগ্রনী, রুপালী ও জনতা ব্যাংকের উর্ধবতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে।