করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারা বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করেছে। খুব শিগগিরই এ মহামারি থেকে রক্ষারও উপায় নেই। এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষা খাতেও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেহেতু বড় জনসমাগমের জায়গা, তাই ইতিমধ্যে ৬১ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয়ভাবে বন্ধ করা হয়েছে ৩৯টি দেশে। এতে পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে ৪২ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬২ শিক্ষার্থীর। আর আংশিক বন্ধ করা হয়েছে ২২ দেশে। এসব দেশে ৬৫ কোটি ৩৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৭ জন শিক্ষার্থী শিক্ষাঝুঁকিতে রয়েছে। পুরোপুরি ও আংশিক বন্ধ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০৭ কোটি ৪৭ লাখ ২৮ হাজার ৪০৯ জন শিক্ষার্থীই শিক্ষাঝুঁকিতে রয়েছে। শিক্ষা খাতে কভিড-১৯-এর প্রভাব নিয়ে ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেসকো) গত শুক্রবার সর্বশেষ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
গতকাল শনিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৮। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। দেশে এই ভাইরাসে নতুন করে দুইজ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে গতকাল শনিবার। এর আগে তিনজন পাওয়া যায়। তাঁরা এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অভিভাবকদের দাবি থাকলেও বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ মাঠে সমাবেশ না করে শ্রেণিকক্ষে করা এবং সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াসহ অন্য যেকোনো অনুষ্ঠানের সূচি থাকলে তা পুনর্বিন্যাস করতে বলা হয়েছে। অর্থাত্ জনসমাগমকে নিরুত্সাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) প্রকাশিত নির্দেশনা ও পরামর্শ অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘সরকার করোনাভাইরাসের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই সব কিছু করছে এবং করবে। এটি নিয়ে আইইডিসিআর কাজ করছে। তাদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার প্রয়োজন হলে তারাই আমাদের জানাবে।’ তবে আইইডিসিআর জানিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিশুদের সুরক্ষা ও বিদ্যালয়কে নিরাপদ রাখতে আন্তর্জাতিক তিন সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি), ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) গত ১০ মার্চ এক নির্দেশনা দেয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, শিশুরা কিভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে সে সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করা; সর্বোত্তম পদ্ধতিতে হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন পদ্ধতি প্রচার করা এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা; বিদ্যালয় ভবনগুলো, বিশেষত পানীয় এবং স্যানিটেশন সুবিধাগুলো পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা; বাতাসের প্রবাহ ও অবাধ চলাচল বাড়ানো; শিশুদের শারীরিক সুস্থতার দিকে নজর রাখা এবং অসুস্থ হলে তাদের বিদ্যালয়ে যেতে না দিয়ে বাড়িতে রাখা; শিশুদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে ও তাদের উদ্বেগগুলো প্রকাশ করতে উত্সাহিত করা, টিস্যু পেপার বা নিজের কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে কাশি বা হাঁচি দেওয়া এবং নিজের মুখমণ্ডল, চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ না করা। এ ছাড়া বিদ্যালয় বন্ধের ক্ষেত্রে শিশুদের লেখাপড়া ও সুস্থতার ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে এই নির্দেশিকায়। এর অর্থ হলো অনলাইন শিক্ষার কৌশল ও শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়কে বেতারের মাধ্যমে সম্প্রচারের মতো দূরশিক্ষণ পদ্ধতিসহ শিক্ষার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা এবং সব শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সেবার সুযোগ নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা।