করোনায় শিক্ষার্থী সংকটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে বড় ধরনের ধস নেমেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে। টিউশন ফিতে বড় অংকের ছাড় দিয়েও ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বেশির ভাগ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক শিক্ষার্থী না পাওয়ায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই নতুন সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রোববার (২৮ জুন) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবারের আর্থিক সংকট, ঢাকার বাইরে অবস্থান ও সর্বোপরি করোনায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে শিক্ষার্থীরা এখন ভর্তি হতে চাচ্ছেন না। এদিকে শিক্ষার্থী না পাওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এভাবে চলতে থাকলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারবে না।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ১ জুন থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। যদিও জুন শেষ হতে চললেও আসনের অর্ধেকও পূরণ করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফলে আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও সেটিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অন্যান্য বছর এ সময় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হতো। সেখানে এ বছর এখন পর্যন্ত আবেদন পড়েছে পাঁচশর কিছু বেশি। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে প্রায় ১৫০, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ১৩০ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) ৩০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।

শিক্ষার্থী সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি ও ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, আসলে করোনার প্রভাব তো বিশ্বব্যাপীই পড়ছে। প্রতিটা দেশই করোনা দ্বারা কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত। দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এর প্রভাবমুক্ত নয়। দেশে প্রতিদিনই শত শত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী বা পরিবারের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মতো সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। আর অর্থনৈতিকভাবেও অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো নেই বললেই চলে।

ভর্তিতে ধাক্কা লেগেছে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। রাজধানীর স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য বছর সামার সেমিস্টারে প্রায় ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। এবারের সামারে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন ৯০০। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মোট আসনের প্রায় ৭০ শতাংশ ফরম বিক্রি হয়েছে।

শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার দুটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমএম শহিদুল হাসান। তার মতে, প্রথম কারণটি হচ্ছে, সামারের এ সময় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলমান থাকে। ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীই কম। আরেকটি হচ্ছে চলমান করোনা পরিস্থিতি। তিনি বলেন, করোনার ফলে এখন অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। ফলে অনেকের ল্যাপটপ নেই, স্মার্টফোনও নেই। তারা ভর্তিতে অনীহা দেখাচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী ভাবছেন অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষায় তারা ভালো করতে পারবেন না। এটিও শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া আর্থিক সমস্যার কারণেও অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছেন না।

শিক্ষার্থীর অভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে জানিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না পেলে ভাড়া ক্যাম্পাস নিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। কারণ শিক্ষার্থী না পেলে তারা ক্যাম্পাসের ভাড়া দেবে কীভাবে আর শিক্ষকদের বেতনইবা দেবে কীভাবে? করোনার কারণে সমগ্র বিশ্বই এখন স্থবির। আর্থিক সংকটের কারণেই মূলত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছেন না। কেননা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ছোট ছোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের একটা বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। সেজন্যই তারা তাদের ছেলে-মেয়েকে ভর্তি করাতে পারছেন না।

ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৯ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে দেশে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ৯০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৩৩৩। সেখান থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৯২। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ৪৫৯। যদিও করোনার প্রভাবে এ বছর শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাওয়ার কথা বলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005871057510376