মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ৯ আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন পরিচালক ও উপ-পরিচালকরা। এই দুই কর্মকর্তার মধ্যে কে কার্যালয়ের প্রধান তা এখনও নির্ধারণ না হওয়ায় এই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এসব কার্যালয়ের পরিচালকদের অভিযোগ, উপ-পরিচালকরা তাদের কথা শোনেন না, তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এছাড়া নানা অনিয়ম করেন। অন্যদিকে উপ-পরিচালকরা বলছেন, আঞ্চলিক কার্যালয়টি তাদের কার্যালয়। এ কারণে আইনগতভাবে উপ-পরিচালকরাই সব কাজ করবেন। কিন্তু পরিচালকরা সব কাজের কর্তৃত্ব নিতে চাইছেন।
সাধারণত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক বা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষরা পরিচালক পদে নিয়োগ পান। আর সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকরা নিয়োগ পান উপ-পরিচালকের পদে। পরিচালকরা বলছেন, পরিচালকরা পদমর্যাদায় অনেক সিনিয়র হলেও তাদের কথা শোনেন না উপ-পরিচালকরা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পরিচালকের নির্দেশনার আলোকে কাজ করতে হয় উপ-পরিচালককে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ৯ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ক্ষেত্রেই এর ব্যত্যয় ঘটছে। জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘সেসিপ’ নামের একটি প্রকল্প থেকে ২০১৬ সালের মার্চ থেকে আঞ্চলিক কার্যালয়ে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু পরিচালকদের কোনো কর্ম বন্টন করে দেওয়া হয়নি। সে সময় মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়- পরিচালক ও উপ-পরিচালকরা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে কাজ করবেন। আঞ্চলিক কার্যালয়ের লজিস্টিক সাপোর্ট ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কার্যালয়ের পরিচালকরা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, এ নির্দেশনা মানছেন না উপ-পরিচালকরা। তারা ইচ্ছেমত সবকিছু ব্যবহার করছেন।
এ বিষয়ে সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক হারুনর রশীদ বলেন, আঞ্চলিক কার্যালয়ের শীর্ষ পদ পরিচালকই হওয়ার কথা। কিন্তু কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি না। ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক আবু ইউসূফও বলছেন, শীর্ষ পদ পরিচালক হবেন।
ডিজির কাছে অভিযোগ: এদিকে এনিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ঘটনাও ঘটেছে। খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নিভা রানী পাঠকের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে গতকাল মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন পরিচালক অধ্যাপক শেখ হারুনুর রশীদ। তিনি উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে এমপিওভুক্তির নামে উপঢৌকন গ্রহণ করার অভিযোগ তুলে বলেছেন, পরিচালকের জন্য নির্ধারিত রুম তালাবদ্ধ করে রাখেন উপ-পরিচালক। নেম প্লেট ও অনার বোর্ড খুলে বারান্দায় রেখে দেন। দুর্গন্ধযুক্ত রুম দেওয়া হয়েছে পরিচালককে। এছাড়া উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কাজে অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
গতকাল এই প্রতিবেদকের কাছে পরিচালক শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, আমি তার বিরুদ্ধে উচ্চপর্যায়ে অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এমন তথ্য জানার পর অফিসের এক কর্মচারীকে দিয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপ-পরিচালক নিভা রানী পাঠক বলেন, আঞ্চলিক কার্যালয়টি ‘উপ-পরিচালকের কার্যালয়’। এ কারণে বিধিসম্মতভাবে উপ-পরিচালক সব কাজ করবেন। পরিচালক পদটি একটি প্রকল্প থেকে এসেছে। সব কাজের জবাবদিহি উপ-পরিচালককেই দিতে হয়। তাই পরিচালকরা হয়তো না বুঝে সব কাজের কর্তৃত্ব চাইছেন। এটা তো ঠিক নয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলো অস্বীকার করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে মাউশির পরিচালক অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, পরিচালকরা সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের সম্মান দিতে হবে। পরিচালকদের কর্মবন্টন ঠিক করা হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক