কর্মকর্তা হতে পারবেন না সহকারী শিক্ষকরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে দুটি শর্ত পূরণ করে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে 'উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার' পদে পরীক্ষা দিতে পারেন। শর্ত দুটি হলো শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর এবং বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে। এভাবে অতীতে অনেক শিক্ষকই সুযোগ পেয়েছেন কর্মকর্তা হওয়ার।

তবে শিক্ষকদের এভাবে কর্মকর্তা হওয়ার পথ রুদ্ধ হচ্ছে এবার। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে 'সমন্বিত নিয়োগ বিধিমালা-২০২০' নামের বিধিমালা। এতে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে শুধু প্রধান শিক্ষকদের জন্য এ সুযোগ রাখা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে 'উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার' পদে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।

প্রাথমিক শিক্ষকরা বলছেন, এতদিন 'উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার' পদে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হলেও প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) ইনস্ট্রাক্টর ও সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদে তাদের বিভাগীয় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হতো না। নতুন বিধিমালায় সব ধরনের কর্মকর্তা পদ থেকে সহকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হলো।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম আল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিধিমালাটির খসড়া চূড়ান্ত করে তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে এটি যাবে। সেখানে খুঁটিনাটি বিস্তারিত আলোচনা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষকদের বঞ্চিত করার কোনো প্রশ্ন আসে না। বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে নয়, পদোন্নতি পেয়েই প্রধান শিক্ষকরা ভবিষ্যতে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিও) হবেন। কেউ কোনো ব্লক পোস্টে আটকে থাকুন, সেটি চাই না। এতে কোনো প্রণোদনা থাকে না। শিক্ষকরাও ধাপে ধাপে ওপরের পদে পদোন্নতি পাবেন। এ জন্য পদোন্নতির সোপান তৈরি করা হচ্ছে।

তবে সিনিয়র সচিব এ কথা বললেও সহকারী শিক্ষকরা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, একজন সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে ৫০ থেকে ৫৫ বছর পর্যন্ত বয়স হয়ে যায়। তাহলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার আর কবে হবো?

তবে, আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ওপরের পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। সবাই যোগ্যতা থাকলে সময়মতো পদোন্নতি পাবেন। শিক্ষকদের মধ্য থেকেই ৮০ ভাগ এটিও বানানো হবে। বাকি ২০ ভাগ এটিও আসবেন সরাসরি নিয়োগ পেয়ে। তাই শিক্ষকদের দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।

খসড়া নিয়োগবিধিতে আছে, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দুই হাজার ৫৮৯টি পদে নিয়োগে ৮০ শতাংশ পদ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ২০ শতাংশ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে পূরণযোগ্য। বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বোঝাবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নূ্যনতম তিন বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। সরাসরি নিয়োগে বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ বছর। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

কর্মকর্তাদের অন্য পদ উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টারের 'ইনস্ট্রাক্টর'-এর ৫০৫টি পদে নিয়োগে মোট পদের ৩৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৬৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করার কথা। তবে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করার কথা রয়েছে। পদোন্নতির জন্য উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টারের সহকারী ইনস্ট্রাক্টর/পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নূ্যনতম সাত বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির বিএডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি চাওয়া হয়। সরাসরি নিয়োগে বয়স ৩০ বছর, তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের বয়সের কোনো সীমা উল্লেখ নেই।

শিক্ষকরা জানান, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) পর্যন্ত হতে পারতেন। তবে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগবিধি-১৯৮৯ জারি করা হলে তা শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ করে দেয়। পরে পিএসসির নিয়োগবিধি ১৯৯৪ জারি হলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারতেন। সর্বশেষ নিয়োগ পর্যন্ত এই নিয়মই অনুসরণ করা হয়েছে।

কিন্তু 'সমন্বিত নিয়োগবিধি-২০২০' বাস্তবায়ন হলে সহকারী শিক্ষকরা আর কর্মকর্তা পদে আবেদন করতে পারবেন না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055840015411377