বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। নির্বাচনী ইশতেহারেও আওয়ামীলীগ সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২য় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা পদের অন্য বিভাগের সবাই সরাসরি ১০ম গ্রেড পেলেও প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ১২তম গ্রেডে। অন্যদিকে প্রাথমিকে পাঠদানের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি যারা করেন সেই সহকারী শিক্ষকরা প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের মত সম-যোগ্যতা সম্পন্ন হয়েও তারা বেতন পাচ্ছেন ১৫তম গ্রেডে। যা মানুষ গড়ার কারিগরদের জন্য সত্যিই লজ্জাজনক।
বঙ্গবন্ধু যেখানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতনের মধ্যে কোন পার্থক্য রাখেননি সেখানে বর্তমানে প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বেতনের বৈষম্য তিনধাপ। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকদের একধাপ নিচে বেতন পেলেও বর্তমানে তিনধাপ বৈষম্য বিরাজমান রয়েছে। এ বৈষম্য নিরসন করে প্রধান শিক্ষকদের একধাপ নিচে অর্থাৎ প্রধানদের ১০ম গ্রেড দিয়ে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করার জন্য সহকারী শিক্ষকরা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন। তৎকালীন গণশিক্ষা মন্ত্রী, সচিব ও ডিজি মহোদয় বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনশন ভাঙ্গালেও এখনও সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন করা হয়নি।
এ অবস্থায় প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের ১৪টি সংগঠন একতাবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্যপরিষদ নামে একটি বৃহৎ জোট গঠন করেছেন। ঐক্যপরিষদ সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের একদফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছেন। অন্যথায় ঐক্যপরিষদের ডাকে প্রাথমিক শিক্ষকরা আগামী ১৪ অক্টোবর ২ঘন্টা, ১৫অক্টোবর ৩ঘন্টা, ১৬অক্টোবর অর্ধদিবস এবং ১৭ অক্টোবর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। তারপরও দাবি মেনে না নিলে ২৩ অক্টোবর ঢাকায় মহা সমাবেশ করে লাগাতার আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, হতে পারে সেটা একটানা কর্মবিরতি অথবা বিদ্যালয়ে তালা মারা অথবা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বর্জণ। এদিকে আগামী
১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। এ অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষকরা কর্মবিরতি শুরু করলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সমাপনী পরীক্ষার্থীরা। এছাড়াও সমাপনী পরীক্ষা হুমকিতে পড়তে পারে বলে ইতিমধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা যা বিভিন্ন মিডিয়ার প্রকাশিত হয়েছে। ন্যায্য দাবী আদায়ে শিক্ষকদের বিদ্যালয় ছেড়ে রাজপথে নামার বিষয়টি কোনভাবেই আমাদের দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। তাই গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও ডিজি মহোদয়ের প্রতি অনুরোধ কোমলমতী শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে সমাপনী পরীক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু হওয়ার আগেই তাদের বেত বৈষম্য নিরসনের ন্যায্য দাবি সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন করুন।
লেখক : মাহফিজুর রহমান মামুন, সহকারী শিক্ষক, পঞ্চগড়।