সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তুষার হোসেন জনি নামে এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১১টায় নিহত ছাত্রের বাবা উপজেলার যুগীখালী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের বজলুর রহমান শেখ বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
এসময় ৪/৫ জন অজ্ঞাতসহ মোট ১৫ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কলারোয়া থানা পুলিশ।
মামলার বিবরণ ও থানা পুলিশ জানায়, উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কামরুল ইসলামের মেয়ে সায়মা জামান ময়নার (১৬) সাথে একই গ্রামের বজলু রহমান শেখের ছেলে তুষার হোসেন জনির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ময়না পার্শ্ববর্তী খোরদো ছালেহা হক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও তুষার ঢাকা পলিটেকনিক কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র। গত বুধবার গভীর রাতে ময়না তুষারের সাথে মোবাইল ফোনে প্রেমালাপ করছিল। বিষয়টি জানতে পেরে বাবা কামরুল ইসলাম মেয়েকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে মেয়ে ময়নাকে দিয়ে মোবাইল ফোনে তুষারকে ঘরের পিছনের রাস্তায় দেখা করার জন্য আসতে বলে।
পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তুষার সেখানে যাওয়া মাত্রই ময়নার বাবা কামরুল, চাচা বাসারুল, পিন্টু, রিন্টুসহ মামলার আসামিরা তুষারকে লাঠি ও রড দিয়ে মারপিট করে। এসময় তুষার জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তুষারের বাবাকে ডেকে আনা হয়। রাতে রাস্তা থেকে অচেতন ছেলেকে নিয়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তুষারের মুত্যৃ হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তুষারের বন্ধু পাইকপাড়া গ্রামের খলিল মোড়লের ছেলে জিসান (২৪) জানায়, ময়নার হঠাৎ ফোনে তুষার জানায়, রাতে ঘরের পিছনের রাস্তায় দেখা না করলে (ময়না) সে আত্মহত্যা করবে। এসময় তুষার তাকে সাথে নিয়ে ময়নার সাথে দেখা করতে যায়। ময়নাদের ঘরের পিছনে যাওয়া মাত্রই ময়নার বাবা ও চাচারা মারপিট শুরু করে। এসময় সে (জিসান) যুগীখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তুষারের সাথে ময়নার তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল।
যুগীখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বাশার জানায়, কলেজছাত্র তুষারের মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার ভোরে তুষারের পরিবারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ময়নার বাবা ও চাচাদের ঘরবাড়িতে লুটপাট করে তাতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা এসে গ্রামবাসীদের নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) তৌফিক আহম্মেদ জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে। তুষারের মৃত্যুর ঘটনায় পাইকপাড়া গ্রামের বজলুর রহমানের স্ত্রী সেলিনা খাতুন, বজলুর রহমানের বাবা রিয়াজউদ্দিন ও একই গ্রামের রহিম বক্স দফাদারের ছেলে ইউপি সদস্য আব্দুল জলিলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যুগীখালী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিহত তুষারের জানাজা নামাজ শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তুষার হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতারে তিনি পুলিশকে সহায়তা করে যাচ্ছেন।