কলের পানির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি গেলে বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও পানির মাধ্যমে নতুন করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ নেই বলেই আশ্বস্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারপরও পানি বিশোধনের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে সতর্ক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নগরগুলোর পানি সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।

তবে বিশেষজ্ঞরা এটাও বলেছেন, পানিতে করোনাভাইরাসের চেয়ে ভয়ঙ্কর জীবাণু থাকতে পারে, তাই সজাগ থেকে বিশুদ্ধ পানিই পান করতে হবে।

বিশ্বে মহামারী বাঁধিয়ে কোটি মানুষকে অসুস্থ এবং পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ সংহারণকারী করোনাভাইরাসটি নতুন বলে এর অনেক কিছুই ছিল মানুষের কাছে অজানা। ধীরে ধীরে এর ধরন-ধারণ সম্পর্কে নানা কিছু জানা যাচ্ছে।

পাইপে সরবরাহ করা পানি নিরাপদ বলে যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) ইতোমধ্যে তার দেশের নাগরিকদের আশ্বস্ত করেছে।

পানিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির অকাট্য কোনো প্রমাণ না থাকলেও আক্রান্ত এলাকায় রোগীর সংস্পর্শে থাকা পানি, মল-মূত্র ও বর্জ্যে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এ ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণী দেহ ব্যতিত বেশি সময় এ ভাইরাস টিকে থাকতে পারে না বলে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কারণ নেই।

ঢাকা ওয়াসা সতর্ক

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, বিশ্বে কোনো গবেষণায় পানির মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রমাণ এখনও না মিললেও তারা সতর্ক রয়েছেন।

তিনি বলেন, “৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরদিন থেকেই আমরাও প্রতিরোধমূলক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। পানিতে ক্লোরিনের উপস্থিত ঠিক মত আছে কি না এবং রেসিডুয়াল ক্লোরিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছি।”

তাকসিম খান জানান, ভাইরাস এলেও তারা যে মাত্রায় ক্লোরিন ব্যবহার করছেন, তাতে টেকার কথা না।

“কোভিড-১৯ এর চেয়ে ভয়ঙ্কর আমাশয়, টাইফয়েড, কলেরা জীবাণু পানিতে থাকে। পানি শোধনের সময়ই নির্ধারিত মাত্রার ক্লোরিন দেওয়া হয় পানিতে। এর মাধ্যমে সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া-জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।”

তিনি জানান, ঢাকা মহানগরীতে এখন প্রতিদিন ২৬০ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিদিন ২১০-২৪০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

মহানগরীর কোটি নাগরিককে আশ্বস্ত কর তাকসিম বলেন, “ঢাকা ওয়াসার পানিতে কোভিডের প্রমাণ নেই। এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা সতর্ক রয়েছি; সবাই নিরাপদ পানি পাচ্ছে।”

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঢাকা ওয়াসা পানি নিয়ে গবেষণার উদ্যোগও নিয়েছে।

তাকসিম খান বলেন, “পানি নিয়ে গবেষণার জন্য ভালো ল্যাবরেটরি দরকার; টেস্ট করার জন্য উন্নতমানের কিটও নেই। তাই আইসিডিডিআর,বি’র একটি বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা ছোট্ট পরিসরে কোলাবোরেট করে গবেষণা করকে। শিগগির তা করব আমরা।”

চট্টগ্রাম ওয়াসাও সতর্ক

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম জানান, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

“প্রতি লিটার পানিতে সর্বোচ্চ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম ক্লোরিন মেশানো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের গাইড লাইনে বলেছে, পানিতে রেসিডুয়াল ক্লোরিনের উপস্থিতি যেন থাকে। আগে আমরা দশমিক ১ মিলিগ্রাম পার লিটার ক্লোরিন দিতাম। এখন দশমিক ২ মিলিগ্রাম/লিটার দিয়ে থাকি।”

“এর ফলে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসের উপস্থিতি থাকবে না। এমনিতে পানিতে কোভিড এর উপস্থিতি এখনও পরীক্ষিতভাবে প্রমাণিত হয়নি। তবুও সতর্ক আমরা,” বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪২ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার। এখন প্রতিদিন ৩৬-৩৭ কোটি লিটার সরবরাহ করা হচ্ছে।

প্রতিমাসে নগরীরর ২৪০টি পয়েন্টে পানির নমুনা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী।

তিনি বলেন, “পানি শোধনের প্রক্রিয়ায় দুইবার ক্লোরিন দেওয়া হয় যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। পরিমিত ক্লোরিন মেশানোর পর ৫ মিনিট রাখলে ব্যাকটেরিয়া; ১৬ মিনিটে ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যায়। এর পরেই মানুষের পানের উপযোগী করা হয়। তাছাড়া আমরাও তা পরীক্ষা করে দেখি-বিশুদ্ধ রয়েছে কি না।”

পানিতে ঝুঁকি অন্য জীবাণু

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ওয়াসার পানিতে করোভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। পানির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয় না। পুকুরের পানিতেও ছড়ায় না।

তবে করোনাভাইরাস আক্রান্তের লালা, পানির গ্লাস বা মল-মূত্র, বর্জ্যর মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সরকারকে সহায়তা দেওয়া কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী এই গবেষক বলেন, “পরিবেশ ও পানিতে করোনাভাইরাস বেশি সময় টেকে না। বেশিক্ষণ এদের অস্তিত্ব থাকেও না।

“যে অঞ্চলে কোভিড-১৯ রোগী বেশি; সে এলাকায় এ নিয়ে গবেষণা করা যায়। সংশ্লিষ্ট এলাকার সুয়ারেজেও কোভিড-১৯ থাকবে না। কারণ, ওই সময়ে এগুলো মারা যায়। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে যেভাবে ছড়ায়; নির্ধারিত সময়ে কেউ সংস্পর্শে এলেও তা হাতে-নাকে-মুখে যেতে হবে। সুতরাং এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই।”

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের যথাযথ চিকিৎসা ও তাদের ব্যবহার করা জিনিস আলাদাভাবে রাখার পরামর্শ দেন ড. মুশতাক।

পানির ক্ষেত্রে সতর্ক করে তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ এর চেয়ে ভয়ঙ্কর জীবাণু আমাদের আশপাশে। আমরা যেন তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকি। তা না হলে কোভিডের এ সময়ে আমাদের জীবন আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। আমরা যেন সব সময় ফুটানো ও বিশুদ্ধ পানি পান করি।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057640075683594