শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত: পর্ব ৩কল্যাণ ট্রাস্টের প্রাথমিক তহবিলের এক কোটি টাকার হদিস নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের জন্মলগ্ন থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ৫ সদস্যের একটি তদন্ত দল প্রথমবারের মতো কল্যাণ ট্রাস্টের দুর্নীতির তদন্ত করে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৯০ থেকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া লুটপাটে জড়িত অনেক শিক্ষক নেতা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য-সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য-সচিব ছিলেন অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ।

শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষাডটকমের আর্কাইভে সংরক্ষিত মন্ত্রণালয়ের ১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হবে। আজ পড়ুন ৩য় পর্ব:

ট্রাস্টের প্রাথমিক তহবিল গঠন বাবদ ১ কোটি টাকার হিসাব না পাওয়া প্রসঙ্গে:

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায় ট্রাষ্টের প্রাথমিক তহবিল গঠন করার জন্য সরকার থেকে এক কোটি টাকা পাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন দৈনিক প্রথম আলোতে ‘বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট্রে এক কোটি টাকার হদিস নাই’  শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তদন্ত দলও ১ কোটি টাকা প্রাপ্তি ও জমার কোনো রেকর্ড পায়নি। তাছাড়া নথিতে উক্ত টাকা পরবর্তী সময়ে পাওয়া যায় নি। এ ধরনের কোনো রেকর্ড ও সিদ্ধান্ত নেই।

তদন্ত দলের মন্তব্য: এক কোটি টাকার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া গেল।

তবে, দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের পর ১৬ বছর পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সরকারের দেয়া ২৯ কোটি টাকা চলতি হিসাবে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা:

রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায় সরকার ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুন ১৪ কোটি টাকা এবং ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন ১৫ কোটি। এই মোট ২৯ কোটি টাকা সরাসরি এফডিআর না করে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মহাপরিচালক একক ব্যাংক হিসাব নং ৯৮৮ তে জমা করা হয়। দীর্ঘ সময় উক্ত হিসাবে রাখার পর পরবর্তী সময়ে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে এফডিআর করা হয়। চলিত হিসাব রাখার ফলে ব্যাংক লাভবান হয়েছে অথচ কল্যাণ ট্রাস্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরীক্ষার সময় উক্ত টাকা জমার ব্যাংক স্লিপ এবং ব্যাংক বিবরণী চেয়েও পাওয়া যায়নি। শুধু সর্বশেষে এফডিআর ভাঙানো ও ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে চলতি হিসাব ফের স্থানান্তরের ব্যাংকের পত্র তদন্ত দলকে দেখানো হয়।

এ অনিয়মের ফলে ট্রাস্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে নিরীক্ষা দল মন্তব্য করেন।

বেতন থেকে কর্তন করা ২ শতাংশ হারে কল্যাণ তহবিলের টাকা কম জমা প্রসঙ্গে:

নিরীক্ষাকালে রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায় জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ২ শতাংশ হারে শিক্ষক কর্মচারীদের অনুদান হতে ৩ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ৮৬০ টাকা কর্তন করা হয়। এ টাকার মধ্যে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা এফডিআর করা হয়। অবশিষ্ট ৪০ হাজার ৮৬০ টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বেগম রিজিয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করা হলে ওই টাকার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি।

দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে উক্ত টাকা সুদসহ আদায়ের সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

আগামীকাল চতুর্থ পর্ব

 

আরও পড়ুন

কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা লুটকারী সদস্য-সচিবের বাসায় চেক!

কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা: কোন শিক্ষক নেতা কত মেরেছেন


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032351016998291