বইমেলার একটা পরিসংখ্যান খুব আমলে নেই না। সেটা হচ্ছে, কত সংখ্যক বই বের হলো, কত সংখ্যক বই বিক্রি হলো। প্রতিবছর বই প্রকাশের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে আর বাড়ছে। আমি গুরুত্ব দেই এখানে এসে কত মানুষ বইয়ের ভালোবাসায় স্পন্দিত হচ্ছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। বইমেলায় এসে তার মনে যে ক্রিয়া করে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই মানুষটি হয়তো এ বছর বই কিনবে না; আগামী বছর কিনবে, কিংবা হয়তো নিজেও কিনবে না, সে তার সন্তানদের কিনতে উত্সাহিত করবে। এটাই হচ্ছে বইয়ের সংস্কৃতি। বইমেলা সংস্কৃতিকে সচল রাখছে। প্রতিবছর বইয়ের সংস্কৃতি নতুন সংস্করণ সৃষ্টি করছে। এবার বইমেলায় যেমন ‘বায়ান্নো থেকে মুক্তিযুদ্ধ’ ইতিহাসের একটি বড় অংশ জড়িয়ে নেয়া হয়েছে। ইতিহাসের একটি বড় অংশ যার সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় ঘটছে শুধু বইমেলার সৌকর্যের মধ্য দিয়ে। বই না পড়েই একটি শিশু-কিশোর ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।
এই যে বইমেলায় বৃষ্টি হয়ে গেল। এতে অনেককেই চিন্তিত হতে দেখেছি। দুজন মানুষ আমাকে বলেছেন, আমি মেলায় গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা বই নির্দিষ্ট দাম দিয়ে কিনে আনবো। এই যে, মানুষের বইমেলার প্রতি আগ্রহ, ভালোবাসা এবং সচেতনতা এবং সংহতি প্রকাশ করতে চাইছে- এটা কিন্তু খুব বড় পাওয়া। এই মানুষগুলো বইয়ের বড় জিম্মাদারে পরিণত হয়েছে।
নানা বিষয়ে বই পড়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে মানুষের। একটা সময়ে মানুষ হুমায়ূন আহমেদের বই কিনেই টাকা শেষ করে ফেলতো। এখনো মানুষ হুমায়ূন আহমেদের বই কেনে। কিন্তু তার বাইরেও অন্য লেখকদের বই পড়ছে। গল্প-উপন্যাসের বাইরে গিয়ে নানান বিষয়ভিত্তিক বই পড়ছে পাঠক। রুচির পরিবর্তন হচ্ছে বলব না, বরং বলব বই নিয়ে যে গন্তব্য আমাদের প্রত্যাশা ছিল সেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকেই যাচ্ছে পাঠকের পাঠাভ্যাস। মুক্তিযুদ্ধ দিয়েই সেই বইপড়া শুরু। অনেকের বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের বই রয়েছে। এখন মানুষের আগ্রহ বাড়ছে বাঙালির ঐতিহ্য, ইতিহাস, রাজনীতির বইয়ের প্রতি। জানাশোনার পরিধিটা বাড়ছে। ধীরে ধীরে এটা বাড়ছে। আমি সেটাই চাই ধীরে ধীরে বাড়ুক। তাতে ভিত্তি শক্ত হয়। এই যে পাঠাভ্যাস বাড়ছে আমাদের বই লিখবার, বইমেলার করার প্রত্যাশাও সেটাই।
লেখক- কথাসাহিত্যিক, অধ্যাপক