মার্কিন গোপন গোয়েন্দা নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কারাগারেই মারা যেতে পারেন। ব্রিটেনের কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত একটি কারাগারে বন্দি অ্যাসাঞ্জের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ৬০ জনেরও বেশি চিকিৎসক। সোমবার তারা ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ১৬ পৃষ্ঠার একটি খোলা চিঠিও লিখেছেন বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দায়েরকৃত একটি মামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার অ্যাসাঞ্জকে ওয়াশিংটনের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। অ্যাসাঞ্জ নিজেই এ মামলায় লড়ছেন। ব্রিটিশ সরকার যদি তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়; তাহলে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে মার্কিন আইনে ১৭৫ বছরের বেশি কারাদণ্ড হবে তার। ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের কাছে লেখা চিঠিতে চিকিৎসকরা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে লন্ডনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেলমারশ কারাগার থেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ২১ অক্টোবর লন্ডনের আদালতে হাজির করা হয়েছিল উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতাকে। আদালত চত্বরের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও জাতিসংঘের বিশেষ দূত নীল মেলজার অ্যাসাঞ্জকে কারাগারে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তাদের এমন পর্যবেক্ষণের পর চিকিৎসকরা সোমবার ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে অ্যাসাঞ্জের প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করলেন।
ওই চিঠিতে চিকিৎসকরা বলেছেন, আমরা মেডিকেল চিকিৎসক হিসেবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ব্যাপারে মারাত্মক উদ্বেগ প্রকাশ করে এ চিঠি লিখছি। এতে বলা হয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ মামলার শুনানি চলবে। এই দীর্ঘ সময়ে তার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমাদের গভীর উদ্বেগ আছে। অ্যাসাঞ্জের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা মূল্যায়নের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।
চিঠিতে তারা লিখেছেন, ‘এ ধরনের জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা এখনও পাননি অ্যাসাঞ্জ। সম্প্রতি তার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে আমরা আসলেই উদ্বেগে রয়েছি। অ্যাসাঞ্জ কারাগারেই মারা যেতে পারেন। এই মুহূর্তের তার জরুরি চিকিৎসা দরকার। হারানোর সময় নেই।’ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, সুইডেন, ইতালি, জার্মানি, শ্রীলংকা এবং পোলান্ডের ৬০ জনের বেশি চিকিৎসক এ খোলা চিঠি ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছেন।
আফগানিস্তান এবং ইরাক যুদ্ধের ব্যাপারে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন গোপন গোয়েন্দা নথি ফাঁস করে আলোচনায় আসেন অ্যাসাঞ্জ। সেসময় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন মার্কিন সরকার।
ওই বছরেই যৌন হয়রানির অভিযোগে সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগ আনেন এক সুইডিশ নারী। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অ্যাসাঞ্জ বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। দীর্ঘদিন তদন্তের পর যথেষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় চলতি সপ্তাহে ধর্ষণ মামলা থেকে অ্যাসাঞ্জকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
সরকারের এক শীর্ষ আইনজীবী এ তথ্য জানিয়েছেন। ডেপুটি চিফ প্রসিকিউটর ইভা মেরি পারসন বলেন, প্রথম দিকে অভিযোগকারীদের তথ্য-প্রমাণ বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছিল। কিন্তু প্রায় এক দশক আগের এ ঘটনায় সাক্ষীরা ঠিকভাবে মনে করতে পারছেন না।