মানিকগঞ্জ সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কোর্স সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রশিক্ষণার্থীরা মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ দেয়ার পর অধ্যক্ষ প্রশিক্ষণার্থীদের ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করছেন।
এদিকে জেলা প্রশাসকের পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মানিকগঞ্জ কার্যালয়েও ভুক্তভোগী প্রশিক্ষণার্থীরা লিখিত অভিযোগ করেছেন। 'ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯'-এর আওতাভুক্ত হওয়ায় অভিযোগটি আমলে নিয়েছেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল।
এ ব্যাপারে আসাদুজ্জামান রুমেল জানান, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) প্রশিক্ষণার্থী জাহিদুল ইসলাম শাকিল অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সেবা গ্রহীতার অর্থহানিসহ নানা অভিযোগ ঘটানোর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৫৩ ধারা মতে অধ্যক্ষকে শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য বলা হলেও তিনি উপযুক্ত কোনো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ) প্রকল্পের আওতায় জব প্লেসমেন্ট বাড়ানোর লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী বুলবুলি আক্তার, তৃতীয় ব্যাচের জাহিদুল ইসলাম শাকিলসহ প্রশিক্ষণার্থী কণিকা সাঈদ ও ঝুমা আক্তার অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ নুর আহম্মেদ তাদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা আদায় করছেন। ভর্তি হওয়ার জন্য ফরম কেনা থেকে শুরু করে পদে পদে তাদের টাকা দিতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, বিনামূল্যের ফরম কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। বিনামূল্যের বই বাবদ নেয়া হয়েছে ২০০ টাকা করে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে মেডিকেল টেস্টেও ৩০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য তাদের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা আর লাইসেন্স পেতে বিআরটির কথা বলে দুই হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিদেশে যাওয়ার জন্য তাদের বলা হয়েছিল দুই লাখ টাকা লাগবে। এখন দাবি করা হচ্ছে চার লাখের ওপর।
ড্রাইভিং প্রশিক্ষাণার্থী বুলবুলি আক্তার জানান, বিনামূল্যে এখানে প্রশিক্ষণের কথা থাকলেও পদে পদে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের মানও ভালো নয়। জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেয়ার পর তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ প্রত্যাহারের চাপ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে তা ফেরত দেয়া হবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন অধ্যক্ষ।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে কণিকা সাঈদ জানালেন, তারা নিয়মিত ক্লাস করলেও তাদের বিভিন্ন সময় অনুপস্থিত দেখানো হচ্ছে। তাদের প্রাপ্য যাতায়াত খরচ ও ভাতার টাকাও আত্মসাৎ করা হচ্ছে। অধ্যক্ষ নিজে সরাসরি টাকা না নিয়ে খণ্ডকালীন ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ সাফিউস সাদিকের (কমম্পিউটার অপারেশন ট্রেড) মাধ্যমে টাকা বাগিয়ে নেন। তবে খণ্ডকালীন ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ সাফিউস সাদিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মানিকগঞ্জ সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নুর আহম্মেদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিছু বিপথগামী প্রশিক্ষণার্থী অন্যায়ভাবে বিশেষ সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে এসব অভিযোগ করেছেন। তিনি কোনো প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে টাকা নেননি।