ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাননি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের (বিটিইবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানে বিগত সময়ে মাসের প্রথম দিনে বেতন-ভাতা দেয়া হতো। কারিগরি শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা মুখে মুখে বলা হলেও বাস্তবে ভিন্ন চিত্র। নতুন একজন চেয়ারম্যান খোঁজার মতো সময় হাতে নেই মন্ত্রণালয়ের বড় কর্তাদের! এক মাস ধরে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য।
বোর্ডের কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, ৪ ফেব্রুয়ারি বিটিইবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান অবসরে যান। এরপর থেকে ওই পদে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। দ্বিতীয় কর্তাব্যক্তি হিসেবে বোর্ডে প্রশাসন ক্যাডারের একজন সচিব দায়িত্বরত আছেন। কিন্তু তাকেও চেয়ারম্যানের ভার দেয়া হয়নি। ফলে সচিব বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম তদারকি করলেও আর্থিক বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। এ কারণে শুধু বেতন-ভাতাই নয়, বোর্ডের বিভিন্ন কেনাকাটা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিলেও তিনি স্বাক্ষর করতে পারেন না। এক কথায় বোর্ডের আর্থিক কর্মকাণ্ড মুখ থুবড়ে পড়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার পর্যন্ত কাউকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়নি। কয়েক সপ্তাহ আগে ৫ জনের একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনুমোদনের জন্য ফাইল আকারে উত্থাপন করা হয়েছে। ওই ৫ জনের একজন চূড়ান্ত হওয়ার কথা। এরপর তার নাম অনুমোদনের জন্য সারসংক্ষেপ আকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। কিন্তু সেই ফাইল রোববার পর্যন্ত নিম্নগামী হয়নি বলে জানা গেছে। পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই অযোগ্য বলে জানা গেছে। কর্মচারী থেকে পদোন্নতি পেয়ে কর্মকর্তা হয়েছেন এমন একজনও আছেন চেয়ারম্যান হওয়ার তালিকায়।
জানা যায়, কারিগরি বোর্ডে মোট ১১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। তার মধ্যে ৭৮ জন কর্মকর্তা ও ৪০ জন কর্মচারী। আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে তাদের বেতন বিল পাস হয়ে থাকে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের। এ ব্যাপারে প্রক্রিয়া চলমান আছে। চেয়ারম্যান না থাকায় সচিবকে বোর্ডের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। তবে আর্থিক কর্মকাণ্ডের ভার না দেয়ায় বেতন পাস করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন হচ্ছে : চেয়ারম্যান না থাকলেও বোর্ডের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) নির্বাচনের তারিখ ঠিকই হচ্ছে। ১৪ মার্চ এ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার সরেজমিন দেখা যায়, সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে বোর্ডের চেয়ারম্যান ছাড়াই তড়িঘড়ি করে সিবিএ নির্বাচন আয়োজন করা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ণকালীন সর্বোচ্চ নির্বাহী কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে এ ধরনের নির্বাচনের অনুমোদন নিয়েও নানা সমালোচনা চলছে।
বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, চেয়ারম্যান ছাড়া কোনো কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন করার অনুমোদন দেয়ার এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। সচিবের একক সিদ্ধান্তে এ নির্বাচনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা নির্বাচন নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করে বলেন, এমনটি ঘটলে তখন এসব কে সামাল দেবে।
শ্রমিক নেতারা ট্রেড ইউনিয়ন থেকে অনুমোদন নিয়ে এসেছেন। এ কারণে আমি নির্বাচনের জন্য সম্মতি দিয়েছি।