কারিগরি শিক্ষায় ঝোঁক বাড়ছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ঝোঁক বাড়ছে। গত পাঁচ বছর তুলনা করে দেখা গেছে, এই ধারার শিক্ষায় প্রতিবছরই ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের বছরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখন মোট সোয়া ১২ লাখ শিক্ষার্থী কারিগরিতে পড়াশোনা করছে। পাঁচ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল সোয়া ৯ লাখ।

সরকারও এখন দক্ষতাভিত্তিক এই কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে। কারিগরির পাশাপাশি সাধারণ ধারার বিদ্যালয় ও মাদরাসায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটি কারিগরি বিষয় (বৃত্তিমূলক) বাধ্যতামূলকভাবে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। রোববার (০২ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।

আরও পড়ুন: সাধারণ স্কুল ও মাদরাসায় কর্মমুখী শিক্ষা বাধ্যতামূলক হচ্ছে

কারিগরি খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চাকরির বাজারে এখন দক্ষতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাত বড় হওয়ায় দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। বিদেশেও দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেশি। মূলত চাকরির বাজারের চাহিদা এবং চাকরি না পেলে নিজেই যাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে, সেই চিন্তায় কারিগরি শিক্ষায় অভিভাবক ও তাঁদের সন্তানদের আগ্রহ বাড়ছে। তবে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো নানা ধরনের সমস্যা বিরাজ করছে। বিশেষ করে বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমস্যা বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সূত্রমতে, বর্তমানে সারা দেশে ৮ হাজার ৬৭৫টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলোতে বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার হার ২০ শতাংশ (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে) এবং ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। এখন কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর হার প্রায় ১৬ শতাংশ হয়ে গেছে, যা ১০ বছর আগেও ছিল ২ শতাংশের মতো।

কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন, মানুষ এখন বুঝতে পারছে কর্মমুখী শিক্ষা হলে চাকরি মেলে। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী বৃদ্ধির এটাই বড় কারণ।

এখন ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ভর্তি চলছে। তাতেও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সকাল-বিকেল দুই পালায় মোট ৪৮ হাজার আসন (প্রতি পালায় ২৪ হাজার) আছে। গত বছর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল ১ লাখ ৬০ হাজার। এবার এখন পর্যন্তই ১ লাখ ৩২ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়েছে। ৮ জুন পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হবে। ফলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। পলিটেকনিকে চার বছর মেয়াদি (আট সেমিস্টার) ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। এ ছাড়া এইচএসসি বিএম, এইচএসসি ভোকেশনালসহ অন্যান্য ধারার কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি চলছে।

স্কুল-মাদরাসায় বাধ্যতামূলক হচ্ছে কারিগরি বিষয়

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সূত্রমতে, কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বিদ্যালয় ও মাদরাসায় বাধ্যতামূলকভাবে বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু করেছে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ষষ্ঠ শ্রেণিতে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে সপ্তম শ্রেণিতে এবং ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে অষ্টম শ্রেণিতে প্রাক্‌-বৃত্তিমূলক শিক্ষা হিসেবে একটি কারিগরি বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে চালু করা হবে। অন্যদিকে নবম-দশম শ্রেণিতে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে বাধ্যতামূলকভাবে একটি কারিগরি বিষয় চালু হবে।

বর্তমানে সারাদেশে স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মাদরাসা মিলিয়ে ২৮ হাজার ১০৯টি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নতুন কারিগরি বিষয় চালু করার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষক ও একজন করে ল্যাব সহকারী লাগবে। প্রয়োজন হবে ল্যাবরেটরি, সিলেবাস, বইসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়। ফলে বিরাট অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হবে। সামর্থ্যের মধ্যে থেকে কীভাবে এই বাজেট পাওয়া যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর।

কারিগরিতে শিক্ষার্থী বৃদ্ধিসহ সার্বিক বিষয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী বৃদ্ধির এই তথ্য খুবই ইতিবাচক। তবে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির পাশাপাশি এই শিক্ষার মানেও গুরুত্ব দিতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024600028991699