‘কুলাঙ্গার’ শিক্ষক ও বিসিএস শিক্ষা সমিতির সভাপতির কষ্টকথা

অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার |
“দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহে  ফারহানা বিলকিসকে তলব করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ। প্রশ্ন ফাঁস অভিযোগের পর এবার দুর্নীতির ক্রমাগত অভিযোগে আমরা যারপরনাই বিব্রত। কারণ শিক্ষা ব্যবস্হাপনায় আমরাও অংশীদার। আর শিক্ষায় সরকারের ঈর্ষণীয় সাফল্য ম্লান হচ্ছে এসব কারণে।
মন্ত্রণালয়ের কোন এক পর্যায়ে আমি কথা বলেছি, তাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্হা নেবেন বলে জানান। সেজন্য সঠিক প্রমাণ চান।
ফারহানাকে যে ভাষায় চিঠি দেয়া, আর জেরার ভিন্নতার কারণেই ক্যাডারে একটি চাপা ক্ষোভ কাজ করছে। হয়ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নিতে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহে মন্ত্রণালয় মরিয়া।
প্রমাণ না দিতে পারলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না এটি কেমন কথা। আমার যদি ভুল না হয়,টিভির স্ক্রল নিউজে দেখেছি- দুদক বলেছে বিজি প্রেস, বোর্ড  কর্মকর্তা ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। অথচ যখন বলা হয়, কুলাঙ্গার শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁস করছেন। মনটা খুব খারাপ হয়। কারণ শ্রেণি শিক্ষক থাকাকালীন সিনিয়র হয়েও আমরা গেটে নকল রোধে ঠেঙ্গানোর কাজ করেছি। এখন অধ্যক্ষ হয়েও সিনিয়র অধ্যাপকদের নিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পরীক্ষার্থীদের শরীর চেক, ঠেঙ্গানোসহ নানা অপ্রীতিকর কাজ করতে। সারাক্ষণ তটস্হ থাকি। তখন কুলাঙ্গার শিক্ষক হিসেবে অভিহিত হতে খারাপই লাগে। সহকর্মীরা সভাপতি হিসোবৌ আমার নীরবতায় অভিযোগ করেন। আমি বলি, দুদকের অভিযুক্ত বিজি প্রেসের লোকজন হয়ত শিক্ষক নন, কোচিং এর লোকজনকে বাইরে শিক্ষক হিসেবেই সবাই জানে, আর বোর্ডে আমাদের শিক্ষা ক্যাডারসহ অন্য কর্মকর্তা আছেন। তারাতো প্রতিবাদ করেন না। আমি শ্রেণি শিক্ষক আর ক্যাডার শিক্ষক হিসেবে সকল দায় নেবো কেন? প্রশ্ন ফাঁসে এখনো কেউ অভিযুক্ত হয় নি। কর কর্মকর্তা আর সিন্ডিকেটের খবর পাই পত্রিকায়।
দুর্নীতির প্রমাণ কোনদিন হবে বা কয়জনের বিরুদ্ধে হবে বলা কঠিন। প্রমাণ ছাড়া ব্যবস্হা নেয়া যাবে না, এ কেমন কথা। যাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত দুর্নীতির অভিযোগ, তাদের অন্তত সরানো হোক। প্রমাণিত হলে ফাঁসি না হয় পরে হবে। লোক দেখানো কাজ কাম্য নয়।
নতুন জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের কেউ কেউ ফেবুকে টাকা দেয়ার কথা স্বনামে পোস্টে বলেছে। তাদের জিজ্ঞেস করলেই ফারহানার অভিযোগ প্রমাণ হবে।  ডেমো প্রমোশনে ২৬ লক্ষ টাকা দেয়ার অডিও রেকর্ড একজন আমাকে শুনিয়েছে। কীভাবে প্রমাণ করবো? তাইতো বলি না। প্রমাণ দিতে না পারলে ফেঁসে যাবো বা যে বলেছে সে বেচারা।
বিভিন্ন সার্ভিসে ব্যাচ বা একাধিক ব্যাচ স্বার্থ রক্ষায় আইনগত সাহায্য নিতে চাঁদা দেয়া অবৈধ বলে আমার জানা নেই। প্রশাসনের বিশেষ ও রেগুলার ব্যাচ, আমাদের ১৭/১৮ ব্যাচ , টিটি কলেজে এসব হয়েছে। অবৈধ হলে স্পষ্টীকরণ করা দরকার। তবে এসব তহবিলের অর্থ আত্নসাৎ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা এবং যথাযথ হিসাব সংরক্ষণ করা হয় কিনা, এটা বোধহয় কর্তৃপক্ষ নজরদারি করতে পারেন।
আমলাতন্ত্র নিয়ে কী প্রমাণ করতে হবে? দুর্নীতির সাথে এটি কীভাবে মেলানো হচ্ছে? আর এটি কোন বিশেষ ক্যাডারের প্রতি ইংগিতও নয়। এটি দীর্ঘসূত্রিতাপূর্ণ একটি ব্যবস্হাপনা। বংঙ্গবন্ধু, রাজনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবী এবং অবসরপ্রাপ্ত আমলারাও আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলেন।
নতুন জাতীয়করণকৃত কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডার বহির্ভূত রেখে বিধি জারির বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা যা পত্রিকায় শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়ের বরাতে জেনেছি, তার বাস্তবায়ন বিলম্ব উত্তেজনা ছড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করবে,যা কাম্য নয়।
শিক্ষা সচিব মহোদয় অনেকদিন ধরে ফেবু-তে লিখার ক্ষেত্রে ক্যাডার কর্মকর্তাদের সতর্ক করার কথা বলেছেন। নায়েমসহ বিভিন্ন ফোরামে সবসময় ওনার রেফারেন্সে সতর্ক করার চেষ্টা করেছি। এখনও বলছি।
তবে ন্যায়সংগত ও যৌক্তিক দাবি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাই উচ্চকন্ঠ থাকবেন এবং থাকা উচিত।
NO BCS NO CADRE”
শিক্ষা ক্যাডারে কিংবদন্তীতূল্য জনপ্রিয় অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বুধবার তাঁর ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট করেছেন। বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি তিনি। তাঁর লেখাটি হুবহু প্রকাশ করা হলো।
অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার: সভাপতি বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056290626525879