পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা সংলগ্ন গঙ্গামতি ৩৩ কানি সাগর সৈকতে ভেসে এসেছে একটি তিমির মৃতদেহ। শনিবার (১৯ মে) সকালে সৈকতের বালুচরে বিশাল তিমিটিকে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এখবর পেয়ে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, পর্যটকসহ হাজার হাজার মানুষ ছুটে যায় মাছটি দেখতে। পর্যটকরা দাবি করেন, তিমি মাছের কংকালটি সংরক্ষণ করে দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা করা হোক। তিমিটি লম্বায় প্রায় ৩৫-৪০ ফুট, প্রস্থ্য প্রায় ১০ ফুট। শরীর পচে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এক সপ্তাহ আগে এটি মারা যায়। এরপর গভীর সমুদ্র থেকে জোয়ারে উপকূলে এসে আটকা পড়েছে। মাছটির শরীরের পেটে ও মুখের নিচে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীরে পচন ধরায় শরীরের কোথাও কোথাও হাড় বের হয়ে গেছে।
এদিকে এই তিমির কংকাল সংরক্ষণের বিষয়ে শনিবার দুপুরে পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন ও এ্যাকোয়া কালচার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন মণ্ডলের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি দল তিমি মাছটি সংরক্ষণের বিষয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গোটা তিমির শরীর কালচে বর্ণের হলেও পেটের অংশ সাদা-গোলাপি। লেজটি লম্বায় প্রায় আট ফুট। এর আগে কুয়াকাটায় বিশাল
আকৃতির হাঙ্গর, ডলফিন ও জেলিফিস ধরা পড়লেও কখনও তিমি মাছ ধরা পড়েনি। হঠাৎ করে সৈকতে মৃত তিমি আটকা পড়ার খবর পেয়ে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছে।
সামুদ্রিক জীববৈচিত্র সংরক্ষণকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ড লাইফ কনজার্ভেশন সোসাইটির মেরিন এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর ফারহানা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসা তিমি মাছটি ব্রিডিস তিমি বা বেলিন তিমি। এদের দাঁত থাকে না, মুখে ছাঁকনির মত অংশ থাকে। যার মাধ্যমে এরা পানি থেকে ছোট ছোট মাছ ও চিংড়ি জাতীয় প্রাণী খেয়ে বাঁচে। এরা
সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ফুটের মত লম্বা হয়ে থাকে।
কুয়াকাটার জেলে আজিজ হোসেন বলেন, প্রায় ৩৫-৪০ বছর ধরে তিনি সাগরে মাছ শিকার করছেন। কিন্তু কখনও জালে তিমি মাছ ধরা পড়েনি। কুয়াকাটা সৈকত থেকে হিরন পয়েন্ট, দক্ষিনে সুন্দর বন, কয়েকশ কিলোমিটারের মধ্যে কখনও তিমি মাছ দেখেন নি। তবে সাগরের দেড়শ-দুইশ কিলোমিটার দূরে মাঝে মধ্যে তিমি মাছ ভেসে ওঠার সংবাদ পেয়েছেন।
উইকিপিডিয়া অনুসারে, তিমি সিটাসিয়া বর্গভ‚ক্ত জলজ স্তন্যপায়ী (ডেলফিনিডে বা প্লটানিস্টয়িডে)। তিমি আসলে মাছ নয়, মানুষের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী। তিমির বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমি, খুনে তিমি এবং পাইলট তিমি, যার নামের সাথে তিমি আছে বটে কিন্তু জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজনে তাদের ডলফিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
বহু শতাব্দী ধরে জাপানসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ গোশত, তেল ও অন্যান্য কাঁচামালের প্রয়োজনে তিমি শিকার করে চলেছে। বিংশ শতাব্দীর ব্যাপক নিধনযজ্ঞে তিমির বেশ কিছু প্রজাতি বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
সাগর সৈকতে ভেসে আসা এই তিমি দেখতে এসেছে স্কুল ছাত্র মনির, আশরাফ, সাব্বির, তালহা ও সুমাইয়া। তারা সবাই চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়, বইতে বিশাল নীল তিমির কথা পড়েছেন। আজ দেখতে পেলাম। আসলেই এটা কতো বড়। কিন্তু এটা কিভাবে মারা গেছে সেটা জানতে পারলাম না।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. হাসান জানায়, কুয়াকাটয় ভেসে আসা এই তিমি মাছ মরার কারণ অনুসন্ধান করা উচিত। ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটক আরিফুল ইসলাম ও তামান্না ইসলাম জানান, বিশাল এই তিমিটির কংকাল
কুয়াকাটায় সংরক্ষণ করা উচিত। যাতে পর্যটকরা বিশাল তিমি মাছ সম্পর্কে জানতে পারে।