চোখের আলো না থাকলেও এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় পাবনা থেকে কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জন করেছেন ১৫ জন্মান্ধ শিক্ষার্থী। হাজারো সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে, অন্য সব সাধারণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা এই অভূতপূর্ব সফলতা অর্জন করেন। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এই শিক্ষার্থীরা পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয় ও সহায়তায় পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ, শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ ও জাগির হোসেন একাডেমি কেন্দ্র থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।
এ ১৫ শিক্ষার্থী হলেন- নরসিংদী জেলার শিহাবুদ্দিন ভুইয়া (জিপিএ ৪.৮৩), টাঙ্গাইল জেলার আবদুল্লাহ আলআমিন (৪.০৮), পাবনার মনিরুল ইসলাম (৫.০০), গোপালগঞ্জের ইখতেয়ার মৃধা (৪.০৮), জামালপুরের গোলাপ মল্লিক (৪.৬৭), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহাদত হোসেন (৩.৯২), পঞ্চগড় জেলার রোকনুজ্জামান (৩.৫০), দিনাজপুরের আবদুল আজিজ (৪.২৫), কুড়িগ্রামের ইমরান হোসেন (৩.৫০), টাঙ্গাইল জেলার আবুল কালাম আজাদ (৪.১৭), রাজশাহীর মনিরুজ্জামান (৪.১৭), ময়মনসিংহ জেলার মোজাম্মেল হক (৪.৪২), নরসিংদীর আবদুল্লাহ (৪.০৮), জয়পুরহাটের মোহাম্মদ আলী (৪.৮৩) এবং বরিশালের হুমায়ুন কবির (৪.২৫)।
তাদের মধ্যে একজন শাহাবুদ্দিন ভুইয়া বলেন, অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শ্রুতি লেখকের সহায়তায় একই প্রশ্নে আমাদের পরীক্ষা দিতে হয়। অনেক সময় আমরা সঠিক বলে দিলেও শ্রুতি লেখক লিখতে ভুল করে বসেন। এতে নম্বর কমে যায়। তাছাড়া শ্রুতিলেখকরা তাদের থেকে শুনে সেটি লিখে আবার পড়ে শোনান। এজন্য মাত্র ২৫ মিনিট অতিরিক্ত বরাদ্দ, যা মোটেও যথেষ্ট নয়। তিনি আরও জানান, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে দেশের সমস্ত অন্ধকে সাহায্য করাই তার জীবনের মূল লক্ষ্য।
পাবনা মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ
দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। এখন পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকের। কিন্তু দরিদ্র এসব শিক্ষার্থীকে শ্রুতি লেখক সম্মানী তো দূরের কথা, লেখাপড়া করার নূনতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই। তারপরও থেমে থাকেনি এই সংগ্রামী শিক্ষার্থীদের পথচলা। তাদের মতো আরও প্রায় ৫২ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে সহায়তা করছে পাবনা মানব কল্যাণ ট্রাস্ট।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এম আবদুল আলীম বলেন, এই শিক্ষার্থীদের ফল প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তাই তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন সমাজের সামর্থ্যবানদের। সেই সঙ্গে মানবকল্যাণ ট্রাস্টকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে তাদের মতো অনেক শিক্ষার্থী এগিয়ে চলার শক্তি পেত। পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় দৃষ্টিহীন এই শিক্ষার্থীদের ফল আশাব্যঞ্জক। তাদের সহায়তা করতে সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করবে।