কেন মানছেন না প্রাথমিক শিক্ষকরা ১১তম ও ১৩তম গ্রেড

মাছুম বিল্লাহ |

যে কোনও দেশের শিক্ষার ভিত্তি হচেছ প্রাথমিক শিক্ষা যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সহজেই অনুমেয়, এই ভিত্তিকে যারা যত বেশি শক্ত ও মজবুত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন, তারাই সফলকাম কিন্তু এই সত্যটি আমরা যেন কেন বুঝিনা। প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক পরিকল্পনাটিই যেন আগোছালো। ওপর থেকে যদিও মনে হয় সব ঠিক আছে কিন্তু নেই। আর নেই বলেই বেতন বৈষম্য নিরসনের এক দফা দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলন  করেছেন  সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় পৌঁনে চার লাখ শিক্ষক। 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহাকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের মোট ১৪টি সংগঠন মিলে  গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ‘প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’। এই পরিষদ প্রধান শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবিতে  ১৪ অক্টোবর সারাদেশের প্রায় ৬৬হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ঘন্টা কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরদিন ১৫ অক্টোবর পালন করা হয় দুই ঘন্টার কর্মবিরতি। তার পরের দিন এসব বিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। ১৭ অক্টোবর তারা পূর্ণ কর্মবিরতিতে ছিলেন। ২৩অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশ করেন কিন্তু পুলিশী বাঁধায় তারা সমাবেশ ঠিকমতো করতে পারেন নি।। ১৪টি সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বাধ্য হয়ে তারা সর্বাত্মক আন্দোলনে নেমেছেন। এ আন্দোলনের কথা শুনে অভিভাবকগন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন । শিক্ষকদের দাবী মানা না হলে   ১৭নভেম্বর শুরু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় তারা অংশ নেবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। 

প্রাথমিক বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে বেতন পান। তাদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সহকারী শিক্ষকরা পান ১৪তম গ্রেডে। তারা ১২তম গ্রেডে উন্নীত হবেন বলে প্রস্তাবে ছিল। প্রাথমিক শিক্ষকরা জানান, আগে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতনের পার্থক্য ছিল  এক গ্রেড। প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার সমান করায় এখন সে পার্থক্য দাঁড়িয়েছে তিন গ্রেডে। এটি নি:সন্দেহে বৈষম্য।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে দেওয়া এ বৈষম্য কমানোর প্রচেষ্টা ছিল। বর্তমানে সারাদেশে ৬৫হাজার ৯০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এবং এগুলোতে তিন লাখ ২৫হাজার সহকারী ও ৪২হাজার প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। প্রধান শিক্ষকগন দীর্ঘদিন যাবত তাদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এই অসন্তষ্টি সহকারী শিক্ষকদের মধ্যেও রয়েছে। বর্তমানে একজন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে ১২৫০০টাকা বেতন পান এবং প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পান জাতীয় বেতন স্কেলের ১৪তম গ্রেডে ১০ হাজার ২০০টাকা। ১৬ বছর চাকরির পর একজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে একজন সহকারী শিক্ষকের  বেতনের ব্যবধান হবে ভাতাসহ প্রায় বিশ হাজার টাকা। শিক্ষক নেতারা বলেন, বর্তমানে একজন প্রধান শিক্ষক যে স্কেলে চাকরি শুরু করেন, একজন সহকারী শিক্ষক সেই স্কেলের এক গ্রেড নিচে চাকরি শেষ করেন। এটি সহকারী শিক্ষকদের জন্য চরম বৈষম্য। তারা দাবি করেন যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা যে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন, একই যোগ্যতায় অন্য বিভাগে যারা সরকারি চাকরি করেন তাদেন বেতন গ্রেডও তাদের তুলনায় তিন থেকে চার ধাপ ওপরে। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষকদের চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অন্য ডিপার্টমেন্টে সহকারী শিক্ষকদের তুলনায় বেশি বেতনে চাকরি করেন। তাই, তারা সম্মানজনক বেতনস্কেল , সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে চান।এটি নি:সন্দেহে শিক্ষার প্রতি জাতীয় চরম অবহেলার প্রমাণ। বিষয়টি অনেক আগেই দূর হওয়ার কথা ছিল কিন্তু  না হওয়াটা দু:খজনক। 
 
একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায় যে, ১৯৭৭ সালে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বেতন পেতেন ১৫তম গ্রেডে ৩২৫টাকা। তখন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক পেতেন ১৬তম গ্রেডে ৩০০ টাকা। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে গ্রেডের ব্যবধান ছিল এক ধাপ। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বেতন পেতেন ১৬তম গ্রেডে ৭৫০ টাকা এবং একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহাকারী শিক্ষক পেতেন ১৭তম গ্রেডে ৬৫০ টাকা, ব্যবধান ছিল ১০০ টাকা। ২০০৬ সাল পর্যন্ত একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ১৬তম গ্রেডে তিন হাজার একশত টাকা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ১৭তম গ্রেডে তিন হাজার টাকা বেতন পেতেন। ব্যবধান ১০০ টাকাই ছিল। কিন্তু ২০০৬ সালের ২৯ আগস্ট বেতন আপগ্রেডের নামে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে তিন হাজার ৫০০ টাকা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের ১৫তম গ্রেডে তিন হাজার ১০০ টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়। এই সময় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে দুই ধাপ বেতন-বৈষম্যের সৃষ্টি হয় এবং বেতনের ব্যবধান হয় ৪০০টাকা। 

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদা বৃদ্ধির ঘোষনা দেন। তখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হয় দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদাসহ ১১তম গ্রেডে যার পরিমাণ ছয় হাজার চারশত টাকা। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হয় তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে ১৪তম গ্রেডে পাঁচ হাজার দুইশত টাকা। এতে বেতন গ্রেডের পার্থক্য হয় তিন ধাপ। তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির পদেই থেকে যান। বেতন আপগ্রেডের সময় মূল বেতনের ব্যবধান হয় এক হাজার দুইশত টাকা এবং ২০১৫সালের অষ্টম জাতীয় পে স্কেলে সে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে দুই হাজার তিনশত টাকা। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকেরা বর্তমানে বেতন পান ১৪তম ও ১৫তম গ্রেডে, যা মুদ্রাক্ষরিকদের সমান। এটি কোনভাবে গ্রহনযোগ্য নয়। 

২০১৭ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যখন আন্দোলন করছিলেন, তখন সরকার নীতিগতভাবে তাঁদের দাবিদাওয়া মেনে নিয়েছিল। বলা হয়েছিল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে একটি বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু গত দুই বছরেও নতুন গ্রেড বাস্তবায়ন না হওয়া দু:খজনক। নতুন কাঠামোয় প্রধান শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকেরা ১২তম গ্রেডে বেতন পাবেন বলে কথা ছিল। এ ছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষকের একটি পদ চালু করারও ঘোষনা দিয়েছে সরকার। এ ঘোষণাটি ভাল তবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।দেশের ৬৫হাজার ৯০২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ২৫হাজার সহকারী শিক্ষক ও ৪২হাজার প্রধান শিক্ষক আছেন। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষককে বঞ্চিত রেখে প্রাথমিক শিক্ষাকে যে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়, তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অজানা নয়। দুই বছর আগে নীতিগতভাবে শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার পর সেটি বাস্তবায়ন না হওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অমার্জনীয় উদাসীনতা বলে মনে হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেছেন, গ্রেড পরিবর্তনে যে বাড়তি খরচ হবে, তা দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ও রাজি আছে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? এ প্রশ্ন সবার।

২৩ অক্টোবর (২০১৯) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ পুলিশ ভন্ডুল করে দিয়েছে। অনুমতি না থাকার অজুহাতে। পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহতও হয়েছেন। যাদের মধ্যে নারী শিক্ষকও ছিলেন। শিক্ষকদের প্রতি এই নির্মম আচরণ কেন? সরকার আগেভাগে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিলে শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে রাজপথে নামতে হতো না। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এর জবাবে যথার্থই বলেছেন, “শিক্ষকদের পুলিশের লাঠিপেটা নয়, তাদের উপযুক্ত মর্যাদা দিন।” আন্দোলনরত শিক্ষকগন দাবী করছেন যে, তারা  আন্দোলন চালিয়ে গেলেও পাঠদান থেকে বিরত থাকেননি। শহীদ মিনারের সমাবেশে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে তারা কালো কাপড় পরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেছেন।  কর্মবিরতির কর্মসূচি পালন করায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আরও  ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। শোকজের চিঠিতে বলা হয়েছে ‘গত ১৪ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কর্মবিরতি পালন না করার জন্য বলা হয়েছিল।কিন্তু আপনাকে বিষয়টি অবহিত করার পরেও আপনি কর্মবিরতি পালন করেছেন, যা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে সরকারি বিধির পরিপন্থী।এ কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করা হবেনা তার সন্তোষজনক জবাব দাখিল করার জন্য বলা হলো।’ এমন চিঠি পাওয়ার পর শিক্ষকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেছেন, দাবি আদায়ে সরকার এভাবে শিক্ষকদের আন্দোলন থামাতে পারবে না। এ যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা। 
আমরা সবাই জানি যে, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার মান তলানীতে গিয়ে পেঁৗছেছে বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা পড়াশুনা করে তাদের অবস্থা একেবারেই করুণ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। এ ঘটনা আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গবেষণায় দেখেছি। কিন্তু আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা সার্বজনীন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক অর্থাৎ এটি পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সেখানে এত এলোমেলো কেন? প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের যদি আমরা আদর্শ শিক্ষাদান করতে পারি, তাহলে রাষ্ট্রীয় অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে যেন কোনভাবে গুরুত্ব দিচিছনা। এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি বড় কারণ হচেছ প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা, শিক্ষক প্রতিনিধি নেই এখানে। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রকে এই নীতি থেকে শীঘ্রই বেরিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অনেক দেশেই প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়, আমাদের দেশে বিষয়টি এখনও সে পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে, আমাদের টার্গেট সেভাবেই থাকতে হবে যে, প্রাথমিক শিক্ষকগন হবেন রাষ্ট্রের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। এটি শুধু ঘোষণা দিলেই হবে না, এটি আবেগ বা রাজনীতির বিষয় নয়। এরজন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকতে হবে, প্রকৃতঅর্থে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পাওয়ার জন্য সেই লেভেলের প্রার্থীদের এখানে নিয়োগ দিতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচছ , প্রতিযোগিতামুলক ও স্মার্ট  এবং  নিয়োগ প্রাপ্তির পর  শিক্ষকদের  উপরে ওঠার সিঁড়ি থাকতে হবে। সত্যিকার একটি জাতিগঠনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বোচচ গুরুত্ব দিতে হবে, এর মান হতে হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। এর সাথে কোন ধরনের আপোস করা যাবেনা। 
শিক্ষকদের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৫ হাজার প্রধান শিক্ষকদের ১১তম ও  তিন লক্ষ্য ৪২ হাজার সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন  কিন্তু ১১তম ও ১৩তম গ্রেডে বেতন প্রত্যাখান করেছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। একই সাথে প্রধান শিক্ষকদের দশম এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলছেন ঐ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করলে শিক্ষকদের বেতন বাড়বে না বরং অধিকাংশ শিক্ষকদের বেতন কমে যাবে। দশ বছর ও ষোল বছর পুর্তির পর প্রধান শিক্ষকদের সাথে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তারা আরও জানান , উন্নীত স্কেলের নিম্নধাপে ফিক্সেশন করলে প্রতিমাসে শিক্ষকদের বেতন এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কমে যাবে যে ক্ষতি শিক্ষকরা চাকরি শেষেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। এ জন্য তারা বর্তমান বেতন কাঠামোকেই দায়ী করেছেন। তারা ১৭ডিসেম্বরের মধ্যে বেতন বৈষম্য নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তারা ব্যাখ্যা দিয়ে বলছেন যে, সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকরী হলে তাদের  মাসিক  বেতন ৮০০ টাকা কমে যাবে। এই টাকা সরকার কেটে নিতে পারবেনা আর তাই নিদেনপক্ষে এই ৮০০টাকা ’ব্যক্তিগত’ বেতন হবে। পরবর্তী ইনক্রিমেন্ট যোগের সময় বঞ্চনা দ্বিগুণ হবে এবং আখেরে পেনশনে লাখ টাকা থেকে বঞ্চিত হবেন একেকজন শিক্ষক। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে বুঝা যাচেছ সমস্যার গভীরে যাওয়া হয়নি বরং সমস্যাকে কিছুটা আড়াল করা হয়েছে। তাই, অবিলম্বে প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য  প্রকৃত শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিশন গঠন করে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক বিষয়ে একটি শান্তিপূর্ন ও স্থায়ী স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানো প্রয়োজন বলে আমরা মনে করছি। 

লেখক: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033881664276123