পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বেতমোর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানাগারে নেয়া হচ্ছে কোচিং ক্লাস। দিনের বেলায় বিজ্ঞানাগারটিতে শিক্ষার্থীদের কোন প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস হয় না। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সন্ধ্যার পরে সেখানে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোচিং করান।
বিজ্ঞানাগারের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি বছরের পর বছর ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের শো-কেসে। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কম্পিউটার। আর বিজ্ঞান শিক্ষকের বসার কক্ষের ড্রয়ারে তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে অনুবীক্ষণযন্ত্রসহ প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের আরো কিছু যন্ত্রপাতি। আর বিজ্ঞানাগারে বিছানো রয়েছে শিক্ষক ও ছাত্রদের রাতে ঘুমানোর জন্য কয়েকটি খাট। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) সরেজমিনে এ চিত্র দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে, বিদ্যালয়ে গত বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় তাদের কাছ থেকে বোর্ডের ফি ছাড়াও অংক ও ইংরেজি কোচিং ক্লাসের জন্য প্রত্যেক ছাত্রের কাছ থেকে পাঁচশ টাকা করে আদায় করা হয়। সেই টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে প্রধান শিক্ষককের সাথে সহকারী শিক্ষকদের প্রকাশ্যে দ্বন্ধ চলছে দীর্ঘদিন। সেই দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে।
জানাগেছে, বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ৯জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের এখনও পর্যন্ত কোন প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস হয়নি। নবম শ্রেণিতে দু’একদিন তাদের ক্লাস নেয়া হয়েছে বলে জানালেন শিক্ষার্থী বাসিরুল, মাইনুলসহ অন্যরা।
বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, তার কক্ষে কিছু মালামাল আছে। আর সাইন্স ল্যাবে এখন কোচিং ক্লাস হয়। ল্যাবের বেশিরভাগ মালামাল আছে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের শো-কেসে। তবে একটি অনুবীক্ষণ যন্ত্র আর কিছু টিউব ছাড়া তিনি অন্য কিছুই শিক্ষার্থীদের দেখাতে পারেননি।
শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেছে, বিদ্যালয়ের কম্পিউটারটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে আছে। এ কারনে কম্পিউটার ও আইসিটি ক্লাস হচ্ছে শুধু কাগজে কলমে। শিক্ষকরা তাদের শুধু পড়া দেয়। হাতে কলমে কিছুই শেখানো হয় না। এবিষয়ে কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক মোশারেফ হোসেন জানান, কম্পিউটার নষ্ট, বিদ্যালয়ের একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালানো হচ্ছে না। তবে মাঝে মধ্যে তিনি ল্যাপটপে ক্লাস নেন। তবে কোন প্রজেক্টর নেই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোতালেব সিকদার দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান, প্রায় ২২ বছর আগে সাইন্স ল্যাবের জন্য কিছু মালামাল পেয়েছিলেন। এরপর পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করানোর জন্য কিছু মালামাল তাদের কিনতে হয়েছে। এছাড়া শিক্ষক সংকট রয়েছে। এসব কারনে নিয়মিত প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস হয় না।
তিনি আরো জানান, বিজ্ঞানাগারের মালামাল তার রুমে আছে। কিন্তু কি কি আছে তার কোন তালিকা দেখাতে পারেননি তিনি। বিজ্ঞানাগারে কোচিং ও খাটের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫জন শিক্ষার্থী রাতে পড়ে, স্কুলেই ঘুমায়। ওরা সবাই পরীক্ষার্থী। টাকা বণ্টন নিয়ে শিক্ষকদের দ্বন্দের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। জানান, বিষয়টি আমরা নিজেরা বসে ফয়সালা করে নেবো।