কোটা আন্দোলনে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেছেন, আমরা কোনো ধরনের বৈষম্য চাই না। আমরা যৌক্তিক সমাধান চাই। এ লক্ষ্যেই আমরা আমাদের দাবি পেশ করেছি। আমরা কোটা বাতিল চাইনি। কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছি। ৫ দফা দাবিতে বলেছিলাম কোটা ব্যবস্থা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করার দাবি করেছিলাম।

সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে সরকারকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন না হবে ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। 

৩১শে আগস্ট পর্যন্ত সরকারকে একটি আলটিমেটাম দেয়া হয়েছিল। যেখানে ৩টি দাবি উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রথমত, সকল বন্দি ছাত্রদের নিঃশর্ত মুক্তি ও তাদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিরাপদ সড়ক ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার করতে হবে। তৃতীয়ত, আমরা ছাত্র সমাজ যে ৫ দফা দিয়েছিলাম অচিরেই সেটার প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। তিনটি শর্তের মধ্যে ছাত্রদের মুক্তি দেয়া ছাড়া আর কোনো দাবিই বাস্তবায়িত হয়নি। এখন আমরা সরকারের মনোভাব ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি। আলটিমেটামের মেয়াদ যেহেতু শেষ হয়ে গেছে তাই যেকোনো সময় আমরা আন্দোলনে যাবো। 

মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০% বহাল রেখে সংস্কার করা হলে আপনাদের অবস্থান কী হবে? এমনপ্রেশ্নের জবাবে নূর বলেন, এ বিষয়ে আমরা ৫ দফা দাবিতে বলেছিলাম কোটা ব্যবস্থা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা চালু রাখা হলে তো আমাদের দাবি মানা হবে না। 

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, নারীদের জন্য, আদিবাসীদের জন্য আলাদা আলাদা কোটা ব্যবস্থা থাকুক। কিন্তু সেখানে অন্যান্য কোটা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ দেয়া হলে নারীরা, আদিবাসীরা বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কি অপরাধ করেছে? এর মানে দাঁড়ায় সরকার আমাদের দাবি-দাওয়া আমলে নেয়নি। তাদের যেভাবে মনে হয়েছে সেভাবে কাজ করছে। স্পষ্ট কথা, আমাদের দাবি মানতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা ব্যবস্থা তুলে দেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটা বাস্তবায়িত হলে আমরা তার সঙ্গে একমত। আর যদি কোটা ব্যবস্থা চালু রাখা হয় সেক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে। নূর বলেন, আমাদের আন্দোলনে সরকার দমন-পীড়ন নীতির সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাত্রদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। 

সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে দিয়ে নিরীহ ছাত্রদের ওপর বিভিন্নস্থানে একাধিকবার হামলা করা হয়েছে। ছাত্ররা অনেকেই মার খেয়ে, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। রিমান্ডে ছিল। জেলখানায় ছিল। সরকারের ক্র্যাকডাউনের পর  আন্দোলনের সমন্বয় করতে আমাদের কিছুটা সময় লাগছে। তার মানে এই নয় যে, আমরা থেমে গেছি। দাবি না মানা হলে ছাত্ররা আবার রাজপথে নামবে। যে দেশের জন্মই হয়েছে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সে দেশের ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে কখনোই দমন করা যাবে না। বন্ধ করা যাবে না।

তিনি বলেন, নিরপদ সড়ক এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন দুটোই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। তাই উভয় আন্দোলনে সর্বস্তরের ছাত্রদের সমর্থন ছিল বা থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। সংবাদপত্রের বরাত দিয়ে জেনেছি উভয় আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নামে কমপক্ষে ৫১টি মামলা হয়েছে। অধিকাংশ মামলাই অজ্ঞাতনামা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রদের নামে পৃথকভাবে মোট ৫টি মামলা হয়েছে।

ভিসির বাসায় ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, পুলিশের মোটরসাইকেল পোড়ানো, ৫৭ ধারায় আইসিটি আইনে মিথ্যা মামলাসহ মোট ৫টি। ১৭ই মার্চ শাহবাগ থানায় ৩০০ অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীর নামে মামলা দেয়া হয়। তবে আন্দোলন চলাকালীন সময় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মোট ১৭ জন নেতার নামে সরাসরি ৫টি মামলা দেয়া হয়েছিল। এর বাইরে আরো অনেক শিক্ষার্থীর নামে মামলা দেয়া হলেও তার সঠিক হিসাব আমাদের কাছে নেই।

এ বিষয়ে আমরা জোরালোভাবে বলেছি, ছাত্ররা কোনো ধরনের সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসায় হামলা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে হেলমেট পরে শিক্ষার্থীদের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্য যাতে তারা আর কোনো আন্দোলন না করে। কারণ ছাত্র আন্দোলন একটি দেশের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে। এটা সরকারের জন্য একধরনের প্রেসার। তাই সরকারকে অনুরোধ করবো এই অবস্থান থেকে তারা অচিরেই সরে আসবেন। 

আহতদের চিকিৎসায় সংগঠনের ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্র সংগঠনের উল্লেখযোগ্যভাবে কোনো ভূমিকা ছিল না। কারণ তারা প্রত্যেকেই চাপের মধ্যে ছিল। তার পরও দেখা গেছে আহতদের দুই থেকে চার জনের বিকাশ একাউন্ট নাম্বার গ্রুপে দেয়া হয়েছিল তাদের সাহায্যার্থে। আমরা প্রত্যেকের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করলেও অতোটা জোরালোভাবে পারিনি। যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরেফিনের চোখে ৮ই এপ্রিল স্প্লিন্টার লেগেছিল। ডাক্তার বলেছে- তাকে দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে।

যেটা আমরা পারিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র রাজিবুলের সারা শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার ঢুকেছে। ডাক্তার তাকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যেতে বলেছিল সেটাও সম্ভব হয় নি। তবে সাংগঠনিকভাবে আমরা প্রত্যেক ছাত্রের নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছি। সাধ্যমতো প্রত্যেকের পাশে দাঁড়িয়েছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুলকে হাতুড়ি পেটা করার পর গ্রুপে পোস্ট দিয়ে অনেকেই সাধ্যমতো এগিয়ে এসেছে। 

বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্ল্যাটফরমে যে আন্দোলন করেছি সেটা ছাত্রদের একটা যৌক্তিক দাবি নিয়ে তৈরি হয়েছিল। আমরা বরাবরই বলে এসেছি এটা একটা অরাজনৈতিক সংগঠন। তাই রাজনীতিবিদরা তাদের মতো করে কর্মসূচি পালন করবে। আমরা আমাদের মতো। কাজেই অনুরোধ করবো যে, ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিকে যেন কোনো রাজনৈতিক সংগঠন অন্যায়ভাবে ট্যাগ না দেয়। 

আমাদের দেশের রাজনৈতিক কালচারে দেখা যায়, যখন কোনো ছাত্র সংগঠনের আন্দোলন খুব জোরালো বা বড় হয় কিংবা খুব বেশি জনসমর্থন পায় তখন কিছু দল উক্ত সংগঠনকে রাজনৈতিক ট্যাগ দেয়ার চেষ্টা করে। বলা হয়, এটা কোনো নিউট্রাল মুভমেন্ট নয়- এটা একটা পলিটিক্যাল মুভমেন্ট। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই ছাত্রদের কোনো দাবি- দাওয়া নিয়ে যেন নোংরা রাজনীতি না করা হয়। আমরা সাধারণ ছাত্র সাধারণভাবেই থাকতে চাই। কোটা আন্দোলন থেকে কোনো নেতার জাতীয় রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটার সম্ভাবনা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের স্লোগান ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। এটার পরিধি ব্যাপক। নিরাপদ সড়ক পেলেই এটার জাস্টিস হলো না।

কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন যে, এটা ছিল ’৯০-এর পর একটি বৃহৎ ছাত্র আন্দোলন। দুটো আন্দোলনেই সাধারণ ছাত্রদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্ররা অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে থেকে ভবিষ্যতে কোনো নেতার জাতীয় রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটবে কিনা- সেটা সময় বলে দেবে। এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই- একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন হোক। রাজনীতিবিদদের কাছে প্রত্যাশা করবো তারা যেন পরস্পরের প্রতি বা ভিন্নমতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বা সহনশীল থাকেন। তারা যেন একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026650428771973