কোটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার সরকারের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কোটাসংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাহী বিভাগের বা সরকারের। কোটা সংস্কারসংক্রান্ত সচিব কমিটি এমন অভিমত পেয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেলসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ অভিমত পাওয়ার পর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেছে কোটা সংস্কারসংক্রান্ত সচিব কমিটি। নির্ধারিত ৯০ কর্মদিবস শেষ হওয়ার আগেই কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই কোটাবিষয়ক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিষয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। এর আগেও কোটাসংক্রান্ত সব সিদ্ধান্তই নিয়েছে মন্ত্রিসভা। কোটা সংস্কার, কোটা সংরক্ষণ, নার্স নিয়োগে কোটা একাকালীন শিথিল, বিভিন্ন বিসিএস পরীক্ষায় প্রার্থী না পাওয়ায় সেসব বিসিএসের ক্ষেত্রেও এককালীন কোটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা।

এদিকে কোটা বাতিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স চাওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিতে পারেন। রাষ্ট্রপতির কাছে যদি মনে হয় বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে, তাহলে তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠাতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোটাসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভাপতি ও মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল রবিবার বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে করণীয় কী হবে, তা জানতে রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স চাওয়ার দরকার আছে কি না, তা আমরা এখনো চূড়ান্ত করিনি। বিষয়টি নিয়ে আমরা দু-এক দিনের মধ্যেই বসব।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত ১২ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করার। আর কোটা যদি পূরণ না হয়, তাহলে মেধা কোটা থেকে তা পূরণ করা যাবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক। এ কারণে সংস্কারের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কোনো পরিবর্তন করতে হলে পুনরায় আদালতের নির্দেশনা লাগবে। জামালউদ্দিন বনাম রাষ্ট্র মামলার রায়ের নির্দেশনা তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হাত দিতে হলে সরকারকে আগে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করে রায় পক্ষে পেতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের এক মাস পর গত ১৩ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোটা নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। আমরা মেরিটকে (মেধা) প্রাধান্য দিয়ে অলমোস্ট (প্রায়) কোটা উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করব। তবে কোর্টের একটা রায় রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। যদি খালি থাকে তবে খালিই রাখতে হবে। এটার ব্যাপারে কোর্টের মতামত চাইব, কোর্ট যদি এটাকেও উঠিয়ে দেন তবে কোটা থাকবে না। আর কোর্ট যদি রায় দেন যে ওই অংশটুকু (মুক্তিযোদ্ধা কোটা) সংরক্ষিত রাখতে হবে, তবে ওই অংশটুকু বাদ দিয়ে বাকি সবটুকু উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এটা হলো প্রাথমিক পজিশন।’

মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ থাকলেও তা বাধ্যতামূলক কিছু নয় বলে সেদিন উল্লেখ করেছিলেন একজন সাংবাদিক। তখন মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘এটা পরিষ্কার নয়। আমরা কোর্টের রায়টা বিশ্লেষণ করেছিলাম। এটা আমরা নিজেরা পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। এ জন্য কোর্টের মতামত চাওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোর্টের ইনস্ট্রাকশন বলেন, অবজারভেশন বলেন, এগুলো আমাদের নির্বাহী বিভাগের জন্য বাইন্ডিং হয়ে যায়। এগুলো আমরা ইগনোর করতে পারব না। যেভাবে লেখা আছে, তা বাইন্ডিংয়ের মতোই।’

এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ৩১ আগস্টের মধ্যে কোটাসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ফের আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২ জুলাই কোটাব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে মন্ত্রিপরিষদসচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। ৮ জুলাই প্রথম সভা করে কমিটি। পরে ১৯ জুলাই কমিটির মেয়াদ আরো ৯০ কার্যদিবস বাড়ানো হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031061172485352