ছাত্রলীগ নেতারা অস্বীকার এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এড়িয়ে গেলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপর চড়াও হওয়ার জন্য সরকার সমর্থক সংগঠনটিকেই দুষলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক।
‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ' ব্যানারে মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলন থেকে গত রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মসূচিতে হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী কররা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, “মন্ত্রী বলুক আর যেই বলুক বা তাদের জেনারেল সেক্রেটারি (জাকির) বলুক, আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই, এরা ছাত্রলীগের কর্মী, এরা গুণ্ডাবাহিনীতে রূপান্তরিত হয়েছে।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর গত কিছু দিনে কয়েকদফা হামলার জন্য ছাত্রলীগকেই দায়ী করে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবিতে গত রোববার শহীদ মিনারে মানববন্ধনে শিক্ষকদের উপর চড়াও হন ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী; পরে তারা মারধর করে দুজন শিক্ষার্থীকেও।
ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন দাবি করেছেন, আন্দোলনকারীদের অভ্যন্তরীণ বিভেদ থেকে সংঘাত হচ্ছে। তাতে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলেও এতে সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কমিটি এখন না থাকায় সংগঠনটির নামে কেউ কিছু করছে কি না, তা তার জানা নেই।এদিকে ‘ছাত্রলীগের হামলার’ প্রতিবাদে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের শিক্ষক লাউঞ্জে 'নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন একদল শিক্ষক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক রাজ্জাক খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দীন খান, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনাসির কামালসহ আরও কয়েকজন।
ড. রাজ্জাক ছাত্রলীগের সমালোচনা করে আরও বলেন, “ছাত্রলীগ তাদের ইতিহাস জানে না, তাদের ঐতিহ্য জানে না। তোফায়েল সাহেব (বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ) আর রাজ্জাক সাহেবের (প্রয়াত মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক) ছাত্রলীগ আর এই ছাত্রলীগ আপনি মেলাবেন?
“এটা সিম্পলি গুণ্ডাবাহিনী। যাদের শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই, তারা কোথায় পড়েছে, আমি জানি না। এই ধরনের আচরণ আমি আমার ২০ বছরের শিক্ষক জীবন ও সাংবাদিকতা জীবনে দেখি নাই।”
শিক্ষার্থীদের উপর একের পর এক হামলার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই শিক্ষক।
তিনি জানান, অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে, এজন্য তিনি থানায় জিডি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ড. সামিনা লুৎফা প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, “আন্দোলনে যুক্তদের 'বাম ঘরানার শিবির', 'জঙ্গির মতো', 'জামাত-শিবির' ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করা হচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার, যারা নিপীড়ক তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করা হচ্ছে না।
কেবল যারা নিপীড়িত, তাদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দিক থেকে।” শহীদ মিনারের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেই সমাবেশস্থলে প্রক্টরিয়াল বডির কেউ উপস্থিত ছিলেন না, পুলিশ বাহিনীর কেউ ছিলেন না, এভাবে নিপীড়নের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেওয়া হয়েছিল। অনেক পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা আসেন, তাও ঘটনাস্থলের শিক্ষকরা ডাকার পর।
“প্রক্টর পুরো ঘটনার জন্য একরকম শিক্ষকদেরই দায়ী করেন। নিপীড়ক ছাত্রদের সাথে শিক্ষকদের একইভাবে জড়িয়ে প্রেসকে দেওয়া প্রক্টরের বক্তব্য একই সাথে স্পর্ধামূলক এবং তার বক্তব্যে আমরা বিক্ষুব্ধ।"
সংবাদ সম্মেলন থেকে এই শিক্ষকরা চারটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তা হল- ১৯ জুলাই সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশ, ২৩ জুলাই কলাভবনের সামনে বটতলায় নিপীড়নবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষক লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কাছে পত্র প্রেরণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান।