পাস্তুরিত দুধ নিয়ে করা গবেষণা বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক বলেছেন, 'কোনো ব্র্যান্ড কিংবা কোম্পানির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান না। বিদেশি দুধের বাজার তৈরি হোক- এটি চাই না। আমরা চাই, দেশীয় দুগ্ধশিল্প বিকশিত হোক। তাই রাতারাতি আমাদের বিদেশি এজেন্ট বানানো যাবে না।'
গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 'ঢাবি অধ্যাপকের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা :জনস্বার্থে করণীয়' শীর্ষক এ সভার যৌথ আয়োজক পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, জনউদ্যোগ, বিসিএইচআরডি, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, এএসবিডি, গ্রিনফোর্সসহ কয়েকটি সংগঠন।
বাজারে পাওয়া পাস্তুরিত দুধ দুই দফা পরীক্ষা করে সম্প্রতি অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোনের উপস্থিতি পেয়েছেন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা মহলের রোষানলে পড়েন তিনি।
দুধের এই গবেষণা নিয়ে ৯ জুলাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক আলোচনা সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, পিআর রিভিউ জার্নালে প্রকাশ হওয়ার আগেই গবেষক গবেষণার ফলাফল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তার গবেষণায় ত্রুটি ছিল, স্যাম্পল সঠিক ছিল না। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। সাত দিনের
মধ্যে জবাব পাওয়া না গেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগেরও বিরোধিতার মুখে পড়েন এ অধ্যাপক। ফার্মাসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছাড় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ওই গবেষণার সঙ্গে সংশ্নিষ্টতা না থাকায় ফার্মাসি বিভাগ কোনো দায়ভার গ্রহণ করছে না।
এসব বিষয়ে কথা বলেন অধ্যাপক ফারুক। কর্মকর্তার হুমকির জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দোষারোপের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ভোক্তাদের পক্ষে কথা না বলে সরকারি কর্মকর্তারা আমার ওপর মারমুখী হয়ে আছেন। কোম্পানির পক্ষে সরকারি কর্মকর্তার অবস্থান গ্রহণ করার কথা নয়। তিনি কেন কোম্পানির পক্ষে কথা বলবেন? ভোক্তার প্রত্যাশা ও কোম্পানির স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় করে কথা বলেন। হুমকি-ধমকি দিয়ে কিংবা রাগারাগি করে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল সাংবাদিকদের অবহিত করা প্রসঙ্গে আ ব ম ফারুক বলেন, পিআর রিভিউতে মৌলিক গবেষণা দিতে হয়। দুধে পানি ছিল কি-না, তা বের করার জন্য গবেষণাটি করেছিলাম। ওই গবেষণা থেকে দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। পিআর জার্নালে গবেষণা প্রকাশ হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। সেই জার্নালে প্রকাশের পর এই ফলাফল প্রকাশ করা হলে, সাধারণ মানুষ কি আমাকে ক্ষমা করত? পৃথিবীর কোনো দেশে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ইস্যুগুলো পিআর জার্নালের মাধ্যমে আসতে হয় না বলে জানান তিনি।
দুধ প্রক্রিয়াজাত করার সময়ে ত্রুটিজনিত কারণে অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোন আসতে পারে বলে মনে করেন এ অধ্যাপক। তিনি বলেন, দুগ্ধ বাজারজাত করা কোম্পানিগুলোকে উন্নত ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কারখানার মান নিয়ন্ত্রণ এবং পাস্তুরিত দুধ প্যাকেটজাত করার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হলে এ সমস্যা থাকবে না। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।
ফার্মাসি বিভাগের চেয়ারম্যানের বিজ্ঞপ্তির সমালোচনা করে অধ্যাপক ফারুক বলেন- আপনাকে দায় নিতে কে বলেছে? আমি তো একবারও বলিনি- আপনি বা আপনারা এই গবেষণার দায় নেন। বিশ্ববিদ্যালয়েরও এমন কোনো দায় নেওয়ার বিষয় নেই। আপনি হঠাৎ করে মাঠে এসে বললেন- দায় নিতে পারব না।
অনুষ্ঠানে ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদ বলেন, একজন সরকারি আমলা একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বিজ্ঞানীকে যে ভাষায় বিষোদ্গার করেছেন, তা অবর্ণনীয়। এ ধরনের স্পর্ধা তিনি কীভাবে পেলেন- এ প্রশ্ন সবার কাছে রইল। এ ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের মূল কোথা থেকে এসেছে- এগুলো বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। ২০০৫ সাল থেকে নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্যের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো সবাইকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এর ফয়সালা হওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ডা. লেলিন চৌধুরী, গাউস পিয়ারী, তারিক হোসেন, মাহবুবুল হক, শেখ ফরিদ, প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।