কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর কুটিবাগডাঙা গ্রামের ২ ফুট ৯ ইঞ্চি প্রতিবন্ধী ফারজানা আক্তার মনি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ২ দশমিক ১০ পেয়েছে। সে গাগলা দ্বিমূখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছরের পরীক্ষায় অংশ নেয়। মনি নাগেশ্বরী উপজেলার কুটি বাগডাঙ্গা গ্রামের ফরমান আলী ও রাবেয়া বেগমের মেয়ে।
মনির পারিবারিক সূত্র জানা যায়, জন্মের পর থেকে কিশোরী ফারজানা আক্তার মনি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বর্তমানে ১৫ বছর ৩ মাস বয়সে তার উচ্চতা ২ ফুট ৯ ইঞ্চি। সে ভালো করে হাঁটতেও পারে না। তার মুখে খাবার তুলে দেয়া ছাড়াও সব কাজ করে দেন তার মা রাবেয়া বেগম। তারপরেও মনি কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যায় এবং চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার এ অদম্য ইচ্ছাকে কখনো পরিবার থামিয়ে দেয়নি। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সে তার বাবার কোলে চড়ে এসে অংশ নেয়। গাগলা দ্বিমূখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মনি নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রতিদিন কষ্ট করে এসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সে হার মানেনি। তাই তো এখন সে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছে।
বাবা ফরমান আলী দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্বেও মনি যে ফলাফল করেছে অবশ্যই আমরা তার প্রশংসা করি। আজ থেকে ১৫ বছর আগে দুই ছেলের পর আমাদের এই মেয়ের জন্ম হয়। আমরা আদর করে তার নাম রাখি ফারজানা আক্তার মনি। জন্মের পর তার শারীরিক সমস্যা বোঝা না গেলেও ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হয়। তার শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং প্রকাশ পায় অনেক সমস্যা। তাকে এ বয়সেও ছোট্ট শিশুর মতো লালন পালন করতে হচ্ছে। গোসল করানোর পাশাপাশি তার মুখে খাবারও তুলে দিতে হয়। সহায়তা ছাড়া সে ভালো করে হাঁটতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আমি ও আমার দুই ছেলে তাকে কোলে করে নিয়ে যেতাম বিদ্যালয়ে। পরীক্ষার সময়ও কোলে করে কেন্দ্রে নিয়ে যাই প্রতিদিন। অন্য শিক্ষার্থীদের মতো সে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে জেএসসিতেও পেয়েছে এ গ্রেড। এবারেও সে এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ ২ দশমিক ১০। তার জন্য সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে মনি দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানায়, পড়ালেখা শিখে অন্তত একটি ভালো চাকরি করতে চাই আমি।
গাগলা দ্বিমূখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউনুছ আলী দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, মনি আমার বিদ্যালয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রী হলেও লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো ছিল। তার আগ্রহ ছিল। এসএসসিতে তার এ সাফল্যে আমরা সকলেই খুশি।