ক্যাডেট কলেজের অভিজ্ঞতা থেকে ভতিচ্ছুদের কিছু বলা

মাছুম বিল্লাহ |

১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশে ক্যাডেট কলেজ শিক্ষার যাত্রা শুরু। ক্যাডেট কলেজগুলো অভাবনীয় সাফল্য এবং সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ে উপযুক্ত নাগরিক ও মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে যে অনন্য অবদান রেখেছে তারই ফলশ্রুতিতে আজ অমাদের দেশে ১২ টি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে - ৯টি ছেলেদের এবং ৩টি মেয়েদের। ক্যাডেট কলেজের শিক্ষা একটি সার্বিক শিক্ষা। এটি এক ধরনের বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তোমরা যারা এখানে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ তাদের সাফল্য কামনা করছি এবং তাদের জন্য দু’ একটি কথা বলছি আমার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে। 

ক্যাডেট কলেজের একজন প্রাক্তন শিক্ষক হিসেবে এবং এখনও ক্যাডেট ও ক্যাডেট কলেজের লেখাপড়া  নিয়ে  গবেষণা করছি বিধায় ভর্তিচ্ছু ক্যাডেটদের  উদ্দেশ্যে দু’ একটি কথা বলছি।  ক্যাডেট কলেজগুলো আমাদের জাতীয় শিক্ষাঙ্গনে এক উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। আমার দেখা সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ক্যাডেট কলেজের শিক্ষাদান পদ্ধতি পুরো আলাদা।  আর এই আলাদা ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্যই ক্যাডেট কলেজের প্রতি শিক্ষার্থীদের আবেদন এখনও এতটুকু কমেনি। তোমরা যারা এখানে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ তারা সঠিক কাজটিই করেছ। এ প্রতিষ্ঠান যেহেতু ভিন্ন ধরনের কাজেই এখানকার ভর্তি প্রক্রিয়াও একটু ভিন্ন ধরনের। তোমাকে একদিনেই সবগুলো লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে। তোমরা এতদিনে নিশ্চয়ই প্রস্তুতি নিয়েছে, অনেকে অনেক শিক্ষকের কাছে পড়েছ এবং বিশেষ ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতি নিয়েছ, মডেল টেস্ট দিয়েছ, পেপারের প্রশ্ন ও মডেল টেস্টে অংশগ্রহন করেছ। তাই প্রস্তুতি নিশ্চয়ই ভাল।


তোমরা আগেই জেনেছ যে, ক্যাডেট কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা ও ডাক্তারি পরীক্ষার ভিত্তিতে সম্মিলিত মেধা তালিকা প্রণয়ন করে চূড়ান্ত প্রার্থী  নির্বাচন করা হয় । লিখিত পরীক্ষা মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এবার  ইংরেজিতে তোমাদের ৭৫ নম্বর, গণিতে ৫৫ নম্বর, বাংলায় ৪০ নম্বর এবং  সাধারন জ্ঞানে ৩০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে।  ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি নম্বরে পরীক্ষা দিতে হবে কারণ ক্যাডেট কলেজে সর্বদাই ইংরেজির উপর জোর দেয়া হয় আর বর্তমানে প্রতিটি কলেজে শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি (ইংরেজি ভার্সন)। উল্লেখ্য যে ক্যাডেট কলেজসমূহে শিক্ষা মাধ্যম ইংরেজি, তবে তুমি ইচ্ছে করলে ভর্তি পরীক্ষা বাংলা কিংবা ইংরেজি যেকোনো একটিতে দিতে পারবে । 


লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার আগের রাতে বেশি রাত জাগবে না, কারণ বেশি রাত জাগলে সকালে ঘুম ভাঙ্গতে দেরী হতে পারে। দ্বিতীয়ত, বেশী রাত জাগলে দিনে মাথা ঝিম ঝিম করতে পারে , পরীক্ষার হলে ঘুম ঘুম লাগতে পারে। তাই কোনো ধরনের বিলম্ব না করে দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বে। পরীক্ষার আগের রাতে শুধুমাত্র যেসব বিষয়গুলো এখনও একটু কঠিন মনে হয় সেগুলোর ওপর অল্পক্ষণের জন্য চোখ বোলাতে পারো। রাতে কয়েকটি টিভি চ্যানেলের খবরটা দেখতে পার। খবর থেকে হয়তো এমন কিছু তথ্য পাবে যা আগামীকাল তোমার সাধারন জ্ঞান পরীক্ষায় কাজে লাগবে। সকালে খুব ফ্রেশ অবস্থায় ঘুম থেকে জাগবে। গুরুপাক কোনো খাবার রাতেও খাবে না, সকালেও খাবে না। পেটে সমস্যা হলে তোমার পরীক্ষায় বিঘœ ঘটতে পারে। মনে রাখবে পরীক্ষা যত হাসি-খুশি মন ও শরীর নিয়ে দিতে পারবে ততই ভালো। কোনো ধরনের টেনশন করবে না। টেনশন তোমার জানা বিষয়গুলোকেও গুলিয়ে দেয়। তাই হাসি-খুশি মনে পরীক্ষা দিবে। সকালে উঠে একটু পায়চারী করে কয়েকবার জোরে জোরে হাসি দিবে। এতে তোমার শরীরের ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো সতেজ হবে, তৈরি হবে কোনো কাজ ভালোভাবে করার জন্য। পরীক্ষাস্থলে সকাল ৮টা থেকে ৮-১৫ মিনিটের মধ্যেই পেঁৗঁছাবে। পরীক্ষার হল থেকে তোমার বাসার দূরত্ব বিবেচনা করে সেভাবে আগাবে। বাসা থেকে রওয়ানা দেওয়ার সময় দুই তিনবার চেক করে নিবে তোমার যা যা নেওয়ার কথা সেগুলো নিয়েছ কিনা। যেমন- প্রবেশপত্র, জ্যামিতি বক্স, কলম, পেন্সিল ইত্যাদি। কলম কয়েকটি নিয়ে যাবে। কোনো প্রশ্ন ভুল লিখলে হিজিবিজি করে কাটবে না, একটি দাগ দিয়ে কেটে দিবে। তা না হলে খাতার সৌন্দর্য্য নষ্ট হবে। পরীক্ষার হলে  হাতে কিংবা প্রবেশপত্রে বা অন্য কোনো কাগজে  ভুলেও কিছু লিখবে না। এতে তুমি পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কৃত হতে পারো। 


পরীক্ষার চারটি বিষয়ই তোমার পড়া ষষ্ঠ শ্রেণীর বই থেকে আসবে। সাধারন জ্ঞানে দু’ একটি বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক প্রশ্ন  বা সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে আসতে পারে যা তুমি প্রতিদিনকার সংবাদপত্র বা টিভির সংবাদ থেকেই ইতিমধ্যেই জেনেছ। কাজেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। ইংরেজিও তোমার লেভেলে যতটুকু জানা প্রয়োজন সে ধরনের প্রশ্নই হবে। অযথা টেনশন করবে না। সব প্রশ্নই পরিচিত এবং পারছ বলে খুব উত্তেজিত হবে না। এতেও তোমার পরীক্ষায় বিঘœ ঘটতে পারে। সময়ের প্রতি যথেষ্ট সচেতন থাকবে। কারণ একটি বিষয়ের প্রশ্ন তুমি খুব বেশি ভালো করে দিতে চাচ্ছ এবং প্রচুর সময় নিয়ে তা করছ, এ রকম করতে গেলে পরবর্তী প্রশ্ন এবং বিষয় তুমি শেষ করার সময় নাও পেতে পারো। তাই নম্বর ও বিষয়ের সাথে সময়ের সামঞ্জস্য রেখে পরীক্ষা দিবে।  এ পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডেট কলেজে যারা ঢুকতে পারবে ভালো, আসন সংখ্যা যেহেতু সীমিত তাই স্বভাবতই সবাই ভর্তি হতে পারবে না। তাই বলে পরীক্ষা দিয়ে মন খারাপ করবে না। এ ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে তুমি অনেক কিছু শিখেছ যা তোমার পরবর্তী জীবনে অনেক কাজে লাগবে। 

ক্যাডেট কলেজে একজন ক্যাডেট শুধুমাত্র জাতীয় শিক্ষাক্রমের বই পুস্তকই পড়ে না, নির্দিষ্ট সময় অন্তর বাংলা উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, ইংরেজি উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, বাংলা সেট স্পিচ কম্পিটিশন, ইংরেজি সেট স্পিচ কম্পিটিশন, বাংলা বানান, ইংরেজি বানান, বাংলা কবিতা আবৃত্তি, ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি, বাংলা গল্প বলা, ইংরেজি গল্প বলা প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে হয়। আর এসব প্রতিযোগিতার তারিখ বছরের প্রথমেই বাৎসরিক কলেজ রুটিনে দেওয়া থাকে। প্রতি টার্মে এসব কম্পিটিশনগুলো আন্তঃহাউজ ক্যাডেটদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। সব ক্যাডেটকেই ঘুরে ঘুরে কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়। এগুলো শিক্ষাজীবনে এবং পরবর্তী বাস্তবজীবনের অত্যন্ত জরুরি দক্ষতা। এগুলো তাদেরকে অল-রাউন্ডার হিসেবে তৈরি করে। তাই অধিকাংশ ক্যাডেটই  পরবর্তী জীবনে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহন করে। আমরা অনেকেই নামী-দামী এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে এসেছি।  কিন্তু এসব কম্পিটিশনগুলো বছরে হয়তো একবার হতো মুষ্টিমেয় সংখ্যক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে। 

 
নিয়মিত খেলাধুলা করা এবং প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা ক্যাডেট জীবনের আর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন ইনডোর এবং আউটডোর গেমসে সমস্ত ক্যাডেটকে অংশগ্রহণ করতে হয়। এতে একদিকে যেমন শারীরিক-মানসিক প্রশান্তি আসে, শরীরও সুস্থ ও সবল থাকে। অন্যদিকে তারা জীবনে নিয়মানুবর্তিতার প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে এসব খেলধুলায় বাধ্যতামূলক অংশগ্রণের মাধ্যমে। সাধারন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু একাডেমিক বিষয় নিয়ে সব কর্মকা- আর এখানকার কর্মকা-ের বিশাল এক অংশ জুড়ে রয়েছে কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস এবং প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ। এই দু’য়ের সমন্বয় ক্যাডেট কলেজকে এক আলাদা বৈশিষ্ট্যতা দান করেছে। 

প্রতিদিন সকালবেলা সূর্য উঠার আগে প্রি-ফ্যাক্টের বাঁশির সাথে উঠে যেতে হয়। বাথরুমের কাজ সেরে পিটি সু ও পোশাক পড়ে মাঠে, মাঠে নির্দিষ্ট সময় প্রারেড পি টি করার পর আবার হাউজে, গোসল সেরে খাকি ইউনিফর্ম পড়ে ফাইল বেধে প্রি-ফ্যাক্টদের নেতৃত্বে ডাইনিংয়ে ঢোকা, ডাইনিংয়ে চামচ দিয়ে খাওয়া এগুলো সবই বাস্তবজীবনের শিক্ষা। ডাইনিং থেকে বের হয়ে আবার ফাইল বন্দি হয়ে প্রি-ফ্যাক্টদের নেতৃত্বে একাডেমিক ব্লকে যাওয়া , দুপুর একটা পর্যন্ত একাডেমিক ব্লকে পাঠ শেষে আবার ডিসিপ্লিনড ওয়েতে ফাইল বন্দি হয়ে ডাইনিংয়ে আসা, লাঞ্চ সেরে হাইজে অবস্থান। আবার বিকেলে খেলার মাঠে, খেলার মাঠ থেকে হাইজে গোসল সেরে নামাজের পোশাক পড়ে, ডাইনিংয়ে, ডাইনিং থেকে মসজিদে। নামাজ শেষে হাউজে এসে আবার সাদা ইউনিফর্মটাই পড়ে ফাইল বন্দি হয়ে একাডেমিক ব্লকে পড়াশুনা করতে যাওয়া। রাতের এই ক্লাসের নাম ’প্রেপ’ ক্লাস। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন দুটি  প্রেপ হয়। শুধু বৃহস্পতিবার একটি, বাকি সময়টিতে ক্যাডেটরা হাউজে টিভি। অর্থাৎ রাতের পড়াশুনাটাও নিজ ক্লাসে একাডেমিক ব্লকে। সকাল থেকে রাত এগারটায় ঘুমুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এসব কর্মকা-ই পরিচালিত হয় একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে। তাকে সেদিন বলা হয় ’উিউটি অফিসার’। সাথে থাকে একজন ডিউটি ক্যাডেট। আমার মনে আছে, আমি প্রথম যেদিন ডিউটি অফিসার ছিলাম কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে আমার সাথে উিউটি ক্যাডেট ছিল ওই বছর কুমিল্লা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম হওয়া ক্যাডেট ফেরদৌস। 

যত সিরিয়াস শিক্ষার্থীই হোক না কেন নিজ বাসায় কিংবা সাধারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন  নিয়মিত দুবার পড়া সম্ভব নয় বিভিন্ন কারণে। প্রেপে ভালো লাগুক আর না লাগুক একজন ক্যাডেটকে  কিছু না কিছু পড়তেই হবে, সময়ের এই সদ্ব্যবহারের ফলে ক্যাডেটরা বাইরের শিক্ষার্থীদের থেকে এগিয়ে থাকে। বাইরের শিক্ষার্থীরা দেখা যায়, কয়েকদিন দিনরাত সিরিয়াসলি পড়াশুনা করে, পড়ে কয়েকদিন অসুস্থ থাকে অথবা পারিপার্শ্বিক কোনো দুঘর্টনা বা সামাজিক কার্যকলাপের কারণে পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটে। যেমন পাশের বাসার কারুর বিয়ে বা কারুর মারা যাওয়া, অসুস্থ হয়ে পড়া এগুলো তার নিয়মিত পড়াশুনার ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে। এই প্রসঙ্গে আর একটি কথা না বললেই নয়। আমি যখন প্রথম ক্যাডেট কলেজে ঢুকি, হাউজ টিউটর হিসেবে হাউজে গিয়ে ক্যাডেটদের বাড়ী থেকে আসা চিঠিপত্র হাউজ টিউটরকে পড়তে হয় তারপর ক্যাডেটদের দিতে হয়, কিছু কিছু চিঠি তাদের দেয়াই হয় না। তখন ইয়ং টিচার হিসেবে আমি সিনিয়রদের বলতাম এটি তো ’মানবাধিকার লঙ্ঘন’। পরে আমাদের নতুন টিচারদের ফৌজদারহাট ক্যাডেট  কলেজে একমাসের একটি প্রশিক্ষণ হলো। সেখানে জানতে পারলাম ক্যাডেটদের বাড়ী থেকে আসা চিঠিপত্র সরাসরি পড়তে দেওয়া হয় না। কারণ কলেজের সমস্ত প্রোগ্রাম যেহেতু সেট করা এবং কোনো ক্যাডট কোনটিতে অংশ নিবে তাও বেশ আগে থেকেই সেট করা থাকে। বাড়ী থেকে আসা চিঠিপত্রে অনেক পারিবারিক কথা লেখা থাকে যা তার মনে প্রভাব ফেলতে পারে, সে তখন তার প্রতিযোগিতার কথা বাদ দিয়ে বারবার বাড়ীর কথা, চিঠিতে উল্লেখিত ঘটনার কথা বারবার মনে করবে ফলে তার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হবে, তার নিজের পড়াশুনা ও প্রতিদিনের রুটিনকাজেও সমস্যা হবে। তাই সব চিঠি তাদের পড়তে দেওয়া হয় না। সেদিন থেকে  এ বিষয়ে আমার ভুলটি ভেঙ্গেছে।
নিয়মিত হাউস ইনেসপেকশন হয়, প্রিন্সিপালস ইনেসপেকশন, হাউজ মাষ্টার’স ইনেসপেকশন। আমার মনে আছে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে আমি মেঘনা হাউজের হাউজ টিউটর ছিলাম। আমার হাউজ মাষ্টার রুমে ঢুকেই প্রথম অ্যাসেটনশন হওয়া ক্যাডেটকে বলতেন, তোমার রেজাল্ট কিন্তু ভালো না। এ টার্মে কেমন করেছে? ক্যাডেট উত্তর দিচ্ছে, স্যার ফার্স্ট হয়েছি। নম্বর কত পার্সেন্ট? স্যার, ৯৬%। স্যার বলতেন, ৯৬ পার্সেন্ট পেলে চলবে না, ১০০% পেতে হবে। দ্বিতীয় কোনো ক্যাডেটকে জিজ্ঞেস করতেন তোমার কী অবস্থা? স্যার, ফর্মে থার্ড হয়েছি। থার্ড! এটি কোনো রেজাল্ট হলো, আগামী টার্মে অবশ্যই তোমাকে ফার্স্ট হতে হবে। এভাবে প্রচুর কম্পিটিশন লাগিয়ে রাখতেন রুমে-রুমে, ক্লাসে-কা¬সে। ফলে মেঘনা হাইজের একাডেমিক ফলাফল থাকতো শীর্ষে। আমি দীর্ঘ সাত বছর কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে ছিলাম। সাত বছরই মেঘনা হাইজের হাইজ টিউটর ছিলাম। উল্লেখ্য, ঐ সাত বছরই মেঘনা হাউজ একটানা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে গিয়ে আমি হলাম নজরুল হাইজের হাউজ টিউটর। সেখানে থাকাকালীনও দেখলাম ঐ হাউসই ছিলো পর পর কয়েক বছর চ্যাম্পিয়ন। চ্যাম্পিয়ন হাউজকে কলেজে আলাদা সম্মান দেওয়া হয়। অ্যাসেম্বিলিতে, প্যারড গ্রাউন্ডে তাদের আলাদা সম্মানিত স্থান নির্ধারিত থাকে। এসব কিছুই নতুন ক্যাডেটরা ভর্তি হওয়ার পর দেখতে পাবে। 

 

 লেখক: ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিত কর্মরত সাবেক ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজ শিক্ষক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030760765075684