শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি' শীর্ষক কর্মসূচির অধীনে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্লাসে বক্তব্য দিতে যাওয়া ব্যক্তিবর্গের অতীত রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা বিবেচনায় নিতে বলেছে এ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তারা এই ব্যক্তিদের উপযুক্ত সম্মানী দিতেও তাগাদা দিয়েছে। সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরকে মৌখিকভাবে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাব্বির নেওয়াজ।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, সংসদীয় কমিটির সুপারিশ তারা বাস্তবায়ন করেন। এ বিষয়টি এরই মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি' শীর্ষক কর্মসূচির অধীনে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এটি নির্ধারিত ছিল। নভেম্বরেই তাদের ক্লাস শেষ করা হয়। ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে তাদের মূল্যায়ন করে এখন ফল দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনা করা হয়। ওইদিনই মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। নভেম্বরে 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি' শীর্ষক কর্মসূচির অধীনে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ক্লাস নেওয়ার কাজটি শেষ হয়ে যায়। বছরজুড়েই এ কাজটি চলছিল। সূত্র জানায়, এ কর্মসূচির অধীনে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দশজন করে একটি গ্রুপ পড়াশোনার অংশ হিসেবে সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করেছে। তারা স্থানীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা, তথ্য, যুদ্ধের বিবরণ, শহীদদের তালিকা, বধ্যভূমির তালিকা ইত্যাদি তৈরি করেছে। নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য। এরপর ডিসেম্বরে এসে তারা তৈরি করেছে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি। সেটি তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে জমা দেয়। শিক্ষকরা এটির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়ন (স্কুল বেইজড অ্যাসেসমেন্ট-এসবিএ) করবেন। সে জন্য তাদের হাতে থাকবে পূর্ণ নম্বর ২০। এটি শিক্ষার্থীদের এ বছরের বার্ষিক ফলে যোগ হবে।
মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, গতানুগতিক শিক্ষা দিয়ে আর সামনে এগোনো যাবে না। বই পড়া, মুখস্থ করা, পরীক্ষার খাতায় লিখে এসে নম্বর পাওয়ার চিরায়ত পদ্ধতি বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে অচল। এর পরিবর্তে শিক্ষার্থী নিজে কিছু করা, সেই কাজ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা লাভ করবে সে, তার মাধ্যমে কিছু শিখতে পারাটাই সবচেয়ে বড় লার্নিং। এসডিজি-৪ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এখন আমরা চাই, টেকসই শিক্ষা। এর অংশ হিসেবে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা স্থানীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য তথ্য সংগ্রহ করেছে। এ জন্য তাদের বাংলা বইয়ের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চ্যাপ্টার থেকে ২০ নম্বর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের কাজের বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়ন করে নম্বর প্রদান করছেন। মহাপরিচালক জানান, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের
সঙ্গে কথা বলে ছাত্রছাত্রীরা স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ করবে। তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজনে তারা শহীদদের বাড়িতে গিয়ে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলবে। বধ্যভূমি, যুদ্ধের স্থান সরেজমিন দেখবে তারা। এরপর সার্বিক তথ্যের সন্নিবেশ ঘটিয়ে তারা পাঁচ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করবে। এ ডকুমেন্টারি দেখে শিক্ষকরা তাদের মূল্যায়ন করে নম্বর দেবেন। এসব ডকুমেন্টারি মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে তথ্য যাচাই-বাছাই করে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নেতৃত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতা শিক্ষক, উপজেলার বিশিষ্টজনকে নিয়ে একটি বাছাই কমিটি করবেন। তারা ডকুমেন্টারিগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠগুলোকে বাছাই করে জেলা পর্যায়ে পাঠাবেন। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একই ধরনের কমিটি সেগুলো বিচার করে বিভাগীয় সদরে পাঠাবে। এরপর জাতীয় পর্যায়ে সেগুলোর বিচার শেষে শ্রেষ্ঠ তিনটি ডকুমেন্টারিকে পুরস্কৃত করা হবে। এসব কাজের অংশ হিসেবেই স্থানীয় বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা সপ্তম শ্রেণির ক্লাসে গিয়ে ক্লাস নেন।
জানা গেছে, এ কর্মসূচির অধীনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দান ডিজিটাল সার্ভে করে দৃষ্টিনন্দন করার মাধ্যমে এটিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার জন্য সংসদীয় কমিটির বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রস্তাব করেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও তা সমর্থন করেন। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতারকে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে দ্রুত প্রস্তাব পেশ করতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে পৃথিবীর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ওপর ভিত্তি করে তিন দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে তার সম্মতি দিয়েছেন।